জনগণকে দেখাতে হবে ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে পেরেছেন। তাহলে নির্বাচনে একটা বড় সফলতা অর্জিত হবে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
আজ শনিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চার বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক, সিনিয়র ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। গ্রহণযোগ্য হওয়ার অর্থ নির্বাচনটা অবাধ এবং ফেয়ার হয়েছে। এই চেষ্টাটা করতে হবে, এটা হলো অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে যে জনগণের কাছে নির্বাচনটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কারণ এর ফেয়ারনেস প্রদর্শিত হয়েছে। জনগণকেও দেখাতে হবে যে নির্বাচনে ফেয়ারনেস ছিল। জনগণকে দেখাতে হবে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পেরেছেন। প্রবেশ করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। এটুকুই দেখাতে পারলে কে নির্বাচনে এল, কে এল না। জনগণ যদি আসেন, ভোটাররা যদি আসেন, তারা যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন, তাহলে নির্বাচনে একটা বড় সফলতা। আমি যদি আপেক্ষিক অর্থে বলি, অর্জিত হয়ে যাবে।’
নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনের সময় খুব ঘনিয়ে এসেছে। এতে কোনো সংশয় নেই। নির্বাচন আয়োজনটা কিন্তু একটি কঠিন কর্মযজ্ঞ। খুব সহজ নয়। চাহিলাম হইয়া গেল ও রকম নয়। যারা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার এবং আপনাদের সহকর্মীরা সবাইকে রাত-দিন পরিশ্রম করতে হবে, আমাদেরও। যেহেতু এই দায়িত্ব আপনাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, আমাদের ওপরও অর্পিত হয়েছে।’
সিইসি বলেন, ‘আগামীটা জানি না, বিগত সময়ে ১ হাজার ২০০ নির্বাচন আমরা করেছি। আমরা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সহযোগিতা পেয়েছি, এটা প্রশংসার চেয়ে যদি প্রশংসনীয় কিছু থাকে, আমি সেটা বলতাম, আমি ভাষাটা খুঁজে পাচ্ছি না।’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের দৃঢ় প্রত্যাশা থাকবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আপনারা (পুলিশ ও প্রশাসন) রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে, সরকারের কর্মচারী হিসেবে দলীয় চিন্তাভাবনার ঊর্ধ্বে থেকে, পক্ষপাতহীন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে জনগণের আস্থা অর্জন করতে সমর্থ হবেন। আপনাদের সহায়তায়, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষিত হবে, কোনো অঘটন ঘটবে না। সহিংসতা হবে না। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হবে—এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।’
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে আপনারাই হচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ের বিশ্বস্ত সহায়তাকারী এবং আপনারাই আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অতীতের আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে আমি ভাবি না। কারণ অতীত পরিবর্তন করতে পারব না। তবে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আমরা এমন উদাহরণ সৃষ্টি করব যে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।’
নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘সুন্দর, সুষ্ঠুভাবে যাতে কাজ করতে পারেন, এ জন্যই প্রশিক্ষণ জরুরি মনে করেছি। আমরা সবাই যতই আইন জানি না কেন, যেহেতু পাঁচ বছর পরপর ভোট হয়, তাই প্রশিক্ষণের বিকল্প নাই।’
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘আইনে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কনফিউশন থাকলে জেনে নেবেন। রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার আমরা কাদের করব, এটা এখনো ঠিক হয়নি। এটা তফসিল যখন ঘোষণা করা হবে, তখনই জানা যাবে। কিন্তু দায়িত্ব পালন সবাইকে করতে হবে।’
মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘এবারই প্রথম প্রশিক্ষণ হচ্ছে। আগে শুধু বিভাগীয় পর্যায়ে ব্রিফিং দেওয়া হতো। অনেকেই হয়তো রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাননি, তাই এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষ। একটা সুষ্ঠু, নির্বাচন যাতে হয় এ জন্য আপনারা সহযোগিতা করবেন। প্রত্যেকেরই শপথ নিয়ে নামতে হবে যে আমি আমার দায়িত্বটা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালন করব।’