দেশের বাজারে ভালো মানের এক ভরি সোনা এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ এক লাখ এক হাজার ২৪৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এক ভরি সোনার গহনা সর্বোচ্চ এক লাখ ৯ হাজার ৮০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সহসায় এ দাম ছাড়িয়ে দেশের বাজারে সোনা ও সোনার গহনার দামে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে।
দেশের বাজারে সোনার দাম নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি জানিয়েছে, বিশ্ববাজার ও স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহেই দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেশের বাজারে সোনার দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
বর্তমানে দেশের বাজারে সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনা ১ লাখ ৫৪৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনা ৯৫ হাজার ৯৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনা ৮২ হাজার ২৩১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা ৬৮ হাজার ৫৮৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
আমরা সোনার দাম নির্ধারণ করি স্থানীয় বাজারের ওপর ভিত্তি করে। তবে, বিশ্ববাজারের দামের চিত্রও সে ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে আমাদের স্থানীয় বাজারেও তেজাবী সোনার দাম বাড়ে’
আর ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার গহনা কিনতে ক্রেতাদের ১ লাখ ৯ হাজার ৭০ টাকা। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে সোনার গহনা বিক্রি করা হয়। সেইসঙ্গে ভরিপ্রতি মজুরি ধরা হয় নূন্যতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা।
তবে, এটিই দেশের বাজারে সোনা বা সোনার গহনার সর্বোচ্চ দাম নয়। দেশের বাজারে সোনা দাম সর্বোচ্চ ছিল ২৫ আগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২৪৪ টাকা। আর এ মানের এক ভরি সোনার গহনা বিক্রি হয় ১ লাখ ৯ হাজার ৮০৫ টাকা।
চলতি সপ্তাহেই সোনার এ সর্বোচ্চ দাম ছাড়িয়ে যেতে পারে। আগামী সোমবার (২৩ অক্টোবর) অথবা মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে বাজুস থেকে। ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ২ হাজার টাকা স্পর্শ করতে পারে। আর সোনার গহনার দাম ১ লাখ ১০ হাজার টাকার ওপরে যেতে পারে।
‘চলতি সপ্তাহেই সোনার এ সর্বোচ্চ দাম ছাড়িয়ে যেতে পারে। আগামী সোমবার (২৩ অক্টোবর) অথবা মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে বাজুস থেকে। ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ২ হাজার টাকা স্পর্শ করতে পারে। আর সোনার গহনার দাম ১ লাখ ১০ হাজার টাকার ওপরে যেতে পারে’।
এবিষয়ে বাজুসের দায়িত্বশীল এক সদস্য জানান, দেশের বাজারে সোনার নতুন দাম নির্ধারণের পর এরই মধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্সের দাম ৫০ প্রায় ডলার বেড়ে গেছে। স্থানীয় বাজারেও তেজাবী সোনার দাম বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হতে পারে।
চলতি সপ্তাহেই দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়তে পারে এমন আভাস দিয়েছেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সোনার দাম নির্ধারণ করি স্থানীয় বাজারের ওপর ভিত্তি করে। তবে, বিশ্ববাজারের দামের চিত্রও সে ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে আমাদের স্থানীয় বাজারেও তেজাবী সোনার দাম বাড়ে।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববাজারের চিত্র খেয়াল করেছি। এরই মধ্যে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৫০ ডলারের মতো বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে স্থানীয় বাজারেও তেজাবী সোনার দাম বেড়েছে। আগামীকাল দুর্গাপূজা উপলক্ষে সারাদেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। আমরা সোমবার বৈঠকে বসার চেষ্টা করবো। বৈঠক করেই সোনার দামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্ববাজারের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসেই সোনার দাম বেড়েছে। এতে এক সপ্তাহেই প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৯৩ ডলার বা ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সপ্তাহের শুরুতে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৯৩২ দশমিক ৫০ ডলার। সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে ১ হাজার ৯৮১ দশমিক ৪৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
দেশের বাজারে সর্বশেষ যখন সোনার দাম নির্ধারণ করা হয়, সে সময় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৯৩২ দশমিক ৫০ ডলার। অর্থাৎ দেশের বাজারে সোনার নতুন দাম নির্ধারণের পর এরই মধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৯৩ ডলার।
এদিকে সোনার অস্বাভাবিক দাম হওয়ার কারণে বর্তমানে জুয়েলারি ব্যবসায় মন্দা চলছে বলে দাবি করেছেন কোনো কোনো ব্যবসায়ী। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের একটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, দেশে সোনার গহনা সব থেকে বেশি বিক্রি হয় যে কয়টি উৎসবকে কেন্দ্র করে, তার মধ্যে দুর্গাপূজা অন্যতম। কিন্তু সোনার দাম অনেক বেশি হওয়ায় এবার বিক্রি খুব কম হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন শুধু সোনার দামই বেশি না। সবধরনের পণ্যের দাম বেশি। এ কারণে সাধারণ মানুষ সোনা কম কিনছে। এ কারণে আমাদের ব্যবসায় মন্দা চলছে। অনেক ক্রেতা দোকানে এসে ঘুরে চলে যাচ্ছেন। দামের সঙ্গে তুলনা করে গহনা পছন্দ না হওয়ায় ফিরে যাচ্ছেন তারা।
বাজুসের সাবেক সভাপতি সাবেক ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, সচরাচর দুর্গাপূজার সময় সোনার গহনা বিক্রি হয়, এবার তার থেকে অনেক কম হয়েছে। এখন জুয়েলারি ব্যবসায় মন্দা চলছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন সোনার গহনা কিনছেন না।
এর কারণ কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর মূল কারণ সোনার দাম বেশি এবং ডলারের তুলনা টাকার মান কম। এছাড়া দেশ থেকে প্রচুর টাকা পাচার হয়ে গেছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও মানুষের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। সবকিছু মিলেই জুয়েলারি ব্যবসায় মন্দা চলছে।