সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জিনাতুন নেসা তালুকদার মারা গেছেন। রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৬টা ৭ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
জিনাতুন নেসা তালুকদারের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি বিভিন্ন অসুখে ভুগছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। গত মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার বড় ছেলে মাহমুদ হাসান ফয়সল। তিনি জানান, বেশ কয়েকদিন থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। রোববার সকালে চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন। এখান থেকে মরদেহ নিয়ে রাজশাহীতে ফিরে আসবো।
তিনি আরও জানান, মা দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন অসুখে ভুগছিলেন। দীর্ঘদিন থেকে মায়ের চিকিৎসাও চলছিল। বার্ধক্যজনিত কারণে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি এই হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
রাজশাহী নগরীর ১৯৪৭ সালের ৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন জিনাতুন নেসা তালুকদার। তারা বাবা মৌলভী পারভেজ আলী মিয়া ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী। ১৯৬৩ সালে রাজশাহীর পিএন সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন জিনাতুন নেসা। এরপর কলেজে ভর্তি হন। কলেজ জীবন থেকেই সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন জিনাতুন নেসা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের একজন নেত্রী হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন তিনি।
এরপর ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে তার ভূমিকার জন্য তৎকালীন সরকারের খাতায় রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যান জিনাতুন নেসা। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশমাতৃকার ডাকে সাড়া দিয়ে সরাসরি মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। ভারতে গিয়ে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মহেন্দ্র রায় লেনের বিখ্যাত গোবরা ক্যাম্পে অস্ত্র পরিচালনা ও চিকিৎসা সেবাদানের প্রশিক্ষণ নেন জিনাতুন নেসা । প্রশিক্ষণ শেষে তাকে ৭নং সেক্টরের সাব সেক্টর ৪- এর অধীনে দায়িত্ব দেয়া হয়। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দেয়া ছাড়াও প্রয়োজনে সরাসরি যুদ্ধ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।
স্বাধীনতা অর্জনের পরও দেশ ও সমাজসেবায় নিয়োজিত ছিলেন জিনাতুন নেসা। ১৯৭৭ সালে তিনি নওহাটা ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। একইসঙ্গে চালিয়ে যান রাজনীতি ও সমাজ গড়ার কাজ। ১৯৯৬ সালের ৫ জুলাই সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন তিনি। ১৯৯৭ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের উপমন্ত্রী হিসেবে।