শুরু হচ্ছে সুন্দরবনের দুবলার চরের শুঁটকি মৌসুম। উপকূলের জেলে-মহাজনদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। সাগরে যেতে যে যার মতো প্রস্তুত করছেন জাল, দড়ি, নৌকা-ট্রলার। অনেকেই আবার সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ইতিমধ্যে চলে এসেছেন মোংলার মোংলা নদী ও পশুর নদে। বন বিভাগের কাছ থেকে পাশ-পারমিট নিয়েই এদের অনেকেই বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর রওনা দিয়েছেন দুবলার চরের উদ্দেশ্যে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি মাথায় নিয়েই তাদের এই যাত্রা। দুপুরে খবর দিয়ে জানা যায়, মধ্যরাতে রওয়ানা দেওয়া অনেক জেলে ট্রলার সকালে দুবলার চরে পৌছে গেছে।
বন বিভাগ জানায়, ৩ নভেম্বর থেকে বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হচ্ছে শুঁটকি মৌসুম। এ শুঁটকি মৌসুম চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। টানা পাঁচ মাস সেখানে থাকতে হবে জেলেদের। সাগর পাড়ে গড়তে হবে অস্থায়ী থাকার ঘর, মাছ শুকানোর চাতাল ও মাচা। সেসব তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে না সুন্দরবনের কোনো গাছপালা। তাই বন বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী দুবলার চরের উদ্দেশ্যে যাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া সব জেলেকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী। আর এসব প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মোংলা ও রামপালসহ উপকূলের কয়েক জেলার জেলে-মহাজনেরা। সব প্রস্তুতি শেষে বন বিভাগের কাছ থেকে পাশ-পারমিট (অনুমতিপত্র) নিয়ে শুক্রবার থেকেই জেলেরা দলে দলে রওনা হন দুবলার চরে।
দুবলারচরগামী জেলে কাকন শেখ, ইলিয়াছ মোল্লা, ওমর আলী বলেন, দুবলার চরে শুঁটকি তৈরিতে যেতে তারা তাদের জাল, নৌকা প্রস্তুত করেছেন। আর চরে ঘর ও মাচা বাঁধতে গাছ, কাঠ সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন রান্না করার জন্য গ্যাসও। কারণ বনের গাছপালা কাটাতে বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
দুবলার চরের দোকান ব্যবসায়ী মো, ফারুক বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জেলেরা মোংলা নদী ও পশুর নদে অবস্থান করছেন। তারা তাদের ট্রলারে প্রয়োজনীয় বাজারসহ মালামাল বোঝাই করছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর অর্থাত্ শুক্রবার থেকে এ জেলেরা দুবলায় যাত্রা শুরু করবেন। তিনি আরো বলেন, ‘চরে আমার নিজের মুদি, তেলসহ বিভিন্ন সামগ্রীর ব্যবসা রয়েছে। মৌসুম শেষে জেলে ও ব্যবসায়ীরা ফিরে আসবেন নিজ এলাকায়।’
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (সদর) রানা দেব বলেন, শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০ হাজার জেলে সমবেত হবেন দুবলার চরে। দুবলার চরের ঐ সব জেলে প্রায় দেড় হাজার ট্রলার নিয়ে মাছ ধরবেন গভীর সাগরে। সাগর থেকে আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাছাই করে শুঁটকি করবেন তারা। তিনি আরো বলেন, এ বছর চরে জেলেদের থাকা ও শুঁটকি সংরক্ষণের জন্য ১ হাজার ১০৮টি জেলে ঘর ও ৭৮টি ডিপো স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। গত শুঁটকির মৌসুমে দুবলার চর থেকে বন বিভাগের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৬ কোটি টাকা। আর এবার টার্গেট ধরা হয়েছে ৭ কোটি টাকা। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা মাথায় নিয়েই পরিবার-পরিজন রেখে পাঁচ মাস ধরে দুবলার চরে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত থাকবেন হাজার হাজার জেলে। আর মৌসুম শেষেই লাভ-লোকসানের হিসাব করে ফের বাড়িতে ফিরবেন এ জেলে-মহাজনেরা।