২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০১:০৩:৪৪ অপরাহ্ন
পূর্বাচলে দৃষ্টিনন্দন খালসহ ১৫ প্রকল্পের উদ্বোধন আজ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-১১-২০২৩
পূর্বাচলে দৃষ্টিনন্দন খালসহ ১৫ প্রকল্পের উদ্বোধন আজ

পূর্বাচল লিংক রোডস্থ খাল খনন সমাপ্ত প্রকল্পের আজ ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দৃষ্টিনন্দন ও নয়নাভিরাম এ প্রকল্পের উদ্বোধন হবে সকাল ১০টায়। প্রধানমন্ত্রী গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং চট্টগ্রাম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়িত ১৫টি প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। গণভবন থেকে সরাসরি ভাচুয়ালি এসব প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করার সময় প্রধান অতিথি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা করবেন। অংশ নেবেন পৃথক মোনাজাত অনুষ্ঠানে। এদিকে আয়োজিত পাঁচটি ভ্যানুতে এসব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। 


ভ্যানুগুলোর মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনা সরণি (পূর্বাচল), ঢাকার মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত বহুতল আবাসিক ভবন, আজিমপুর কলোনিতে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিত বহুতল আবাসিক ভবন, চট্টগ্রামে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিবিএ এক্সপ্রেসওয়ে (শাহ আমানত বিমানবন্দর প্রান্ত) এবং চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি। পৃথকভাবে আয়োজিত এসব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয় ও দপ্তর-সংস্থার সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে যোগ দেবেন। গৃহায়ন ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে। গৃহায়ন ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন থাকবেন পূর্বাচলে শেখ হাসিনা সরণির অনুষ্ঠানে। 


এছাড়া রাজউক চেয়ারম্যান ও সচিব আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) উজ্জল মল্লিক এবং প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলামসহ গৃহায়ন ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্মসচিব উপস্থিত থাকবেন।


অপরদিক আজিমপুরে থাকবেন স্থানীয় সংসদ-সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিম এমপি, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আক্তার, প্রধান স্থপতি মীর মঞ্জুরুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী ইলিয়াস আহমেদ, প্রকল্প পরিচালক কামরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও অন্য কর্মকর্তারা।


কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প : ‘কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে (কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত) ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ১০৩২৯.৬৬ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। অবশ্য এক মাস আগে শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় সর্বমোট ১৮৪.৭৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত ৬.২০ কিমি. দীর্ঘ ৮ লেনবিশিষ্ট এক্সপ্রেসওয়ে ও ৪ লেনবিশিষ্ট সার্ভিস রোড এবং বালু নদী থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত ৬.১৬ কিমি. দীর্ঘ ৬ লেনবিশিষ্ট এক্সপ্রেসওয়ে ও ৪ লেনবিশিষ্ট সার্ভিস রোডের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরণির উভয় পাশে, নিকুঞ্জ, জোয়ার সাহারা, বরুয়া ও ডুমনী এলাকায় ১০০ ফিট চওড়া ২৬ কিমি. দীর্ঘ খাল পুনরুদ্ধার, খনন ও উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। এছাড়া শেখ হাসিনা সরণির ওপর ৫টি অ্যাটগ্রেড ইন্টারসেকশন, ১২টি ব্রিজ, ৬টি আন্ডারপাস, ৬টি ফুটওভার ব্রিজ ও ১১৭০টি সড়কবাতি স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 


খালের ওপর ১৩টি ব্রিজ, ৩৬.৮ কিমি. ওয়াকওয়ে, ১২.৫ কিমি. সীমানা প্রাচীর, ২টি স্লুইসগেট ও ১১টি সাবস্টেশন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। শেখ হাসিনা সরণির উভয় পাশে ৯টি লেনে প্রায় ৬০,০০০ বৃক্ষরোপণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় উল্লিখিত ডুমনী, বোয়ালিয়া ও এডি-৮ খাল পুনরুদ্ধার, উন্নয়ন ও ধারণক্ষমতা বৃদ্ধিসহ কুড়িল, নিকুঞ্জ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বারিধারা ডিওএইচএস, ঢাকা সেনানিবাস, বসুন্ধরা, যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকাসহ কাওলা, জোয়ার সাহারা, বরুয়া ইত্যাদি এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও খালসংলগ্ন এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়ন করা হয়েছে। শেখ হাসিনা সরণি বাস্তবায়নে ঢাকার পূর্ব-পশ্চিমে আরেকটি যোগাযোগ দ্বার উন্মোচন হয়েছে। সড়কটি নির্মাণে ঢাকার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ সহজতর হয়েছে।


প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাজ : ভূমি অধিগ্রহণ, বিদ্যমান অবকাঠামো অধিগ্রহণ ও অপসারণ, খাল/লেক খনন ও উন্নয়ন, রাস্তা নির্মাণ, ব্রিজ নির্মাণ, এটগ্রেড ইন্টারসেকশন নির্মাণ, স্লোপ প্রটেকশন ওয়ার্কসহ স্লুইসগেট নির্মাণ, ওয়াকওয়ে, ফুটওভার ব্রিজ, স্লুইসগেট, পাম্প হাউজ, আন্ডারপাস ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ড্রেইনেজ পাইপলাইন স্থাপন, সড়ক বাতি স্থাপন, সবুজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন ইত্যাদি।


প্রকল্পের বিশেষ দিকসমূহ : ১. ভূমি অধিগ্রহণ (১০০ ফুট খালের জন্য-৯০.১৫ একর, এডি-৮, বোয়ালিয়া এবং ডুমনী খালের জন্য ৯৪.৬৪ একর) সর্বমোট ১৮৪.৭৯ একর। ২. কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত ৬.২০ কিমি. দীর্ঘ ৮ লেনবিশিষ্ট এক্সপ্রেসওয়ে ও ৪ লেনবিশিষ্ট সার্ভিস রোড এবং বালু নদী থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত ৬.১৬ কিমি. দীর্ঘ ৬ লেনবিশিষ্ট এক্সপ্রেসওয়ে ও ৪ লেনবিশিষ্ট সার্ভিস রোড স্থাপন। ৩. খাল/লেক খনন ও উন্নয়ন (কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরণির উভয় পাশে ১২.৩ কিমি., এডি-৮-৪.১০ কিমি., বোয়ালিয়া খাল-৫.০২ কিমি., ডুমনী খাল-৪.৪০ কিমি., সর্বমোট ২৬ কিমি.)। ৪. নিকুঞ্জ খাল খনন ও উন্নয়ন (৭৫০ মিটার দীর্ঘ)। ৫. খালের ওপর ১৩টি আর্চ ব্রিজ নির্মাণ, রাস্তার ওপর বিভিন্ন স্থানে ১২টি ব্রিজ নির্মাণ। ৬. এটগ্রেড ইন্টারসেকশন-০৫টি (কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত ২টি ও বালু নদী থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ৩টি)। ৭. স্লুইসগেট ও পাম্প হাউজ (বোয়ালিয়া খাল ও বালু নদীর সংযোগস্থলে ২টি)। ৮. ৬টি আন্ডারপাস নির্মাণ, ৩৬.৮ কিমি. ওয়াকওয়ে, ১২.৫ কিমি. সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ৬টি স্থানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, ১১৭০টি সড়ক বাতি স্থাপন, ১১টি সাবস্টেশন স্থাপন এবং ৯. ৬০,০০০ বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি।


অর্জিত লক্ষ্যসমূহ : ১. বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় উল্লিখিত ডুমনী, বোয়ালিয়া ও এডি-৮ খাল পুনরুদ্ধার, উন্নয়ন ও ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি। ২. কুড়িল, নিকুঞ্জ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বারিধারা ডিওএইচএস, ঢাকা সেনানিবাস, বসুন্ধরা, যমুনা পিউচার পার্ক, কাওলা, জোয়ার সাহারা, বরুয়া ইত্যাদি এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন। ৩. খালসংলগ্ন এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন। ৪. শেখ হাসিনা সরণি বাস্তবায়নে ঢাকার পূর্ব-পশ্চিমে আরেকটি যোগাযোগ দ্বার উন্মোচন। সড়কটি নির্মাণের ফলে ঢাকার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী জেলা নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জসহ সিলেট ও চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ আরও সহজতর হয়েছে।


আজিমপুর সরকারি বাসভবন নির্মাণ প্রকল্প : ১৯৫০-১৯৬০-এর দশকে নির্মিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসস্থানগুলো অত্যন্ত পুরোনো ও জরাজীর্ণ ছিল। এখানে তারা আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত ও অনুন্নত জীবনযাপন করে। তাদের উন্নত এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন নিশ্চিত করার জন্য পুরোনো জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে আধুনিক নতুন ভবন নির্মাণের একটি অনুশাসন দেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে আজিমপুরে ২৬টি জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে ২০ তলাবিশিষ্ট ২৪টি ভবনে ১৮৩৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করে হস্তান্তর করা হয়েছে। যেখানে এখন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আধুনিক ও মানসম্মত উন্নত জীবনযাপন করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজিমপুর জোন-এ-তে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিত হয়েছে ১৫টি ২০ তলা ভবন, যার মধ্যে ১১টি ভবনে ৮৩৬টি ফ্ল্যাট উদ্বোধনের জন্য এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।


সুবিধাসমূহ : এই প্রকল্পের আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমূহের মধ্যে রয়েছে : প্রতিটি ভবনে ৩টি করে লিফট, স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর, সাবস্টেশন, ইন্টারনেট, ইন্টারকম, ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম ইত্যাদি। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় ৮১ শতাংশ খালি জমিতে রয়েছে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, বৃষ্টির পানির সংরক্ষণাগার, ৩টি বৃহদাকার জলাশয়, একাধিক খেলার মাঠ, পর্যাপ্ত সবুজ এলাকা, হাঁটাচলার জন্য প্রশস্ত ওয়াকওয়ে, ক্লাব হাউজ, কমিউনিটি সেন্টার, ডে-কেয়ার সেন্টারসহ সব অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা।


শেয়ার করুন