২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০১:১১:৫২ পূর্বাহ্ন
বাইসাইকেল রেখে নৌকায় উঠতে চায় জেপি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১১-২০২৩
বাইসাইকেল রেখে নৌকায় উঠতে চায় জেপি

দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল রেখে এবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চায় জাতীয় পার্টি (জেপি)। শনিবার এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে চিঠি দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি।


আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হিসাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন। এদিকে, সাইকেল রেখে নৌকা চাওয়ার বিষয়টিকে সহজভাবে নিচ্ছে না মঞ্জুর নির্বাচনি এলাকা পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-স্বরূপকাঠী) আসনের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।


এ আসনে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার দাবি তাদের। চিঠি অথবা নৌকা প্রতীক নিয়ে জেপির (মঞ্জু) নির্বাচন করতে চাওয়ার বিষয়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।


প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে দেওয়া চিঠিতে জেপি (মঞ্জু) যাতে নৌকা প্রতীকে ভোট করতে পারেন সে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। জেপি/২০২৩/৪৯নং স্মারকে দেওয়া চিঠিতে দলের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু লিখেছেন, ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক হিসাবে অংশগ্রহণ করবে জাতীয় পার্টি (জেপি)।


বিষয়টি ১৮ নভেম্বর লিখিত চিঠির মাধ্যমে (স্মারক নং-জেপি/২০২৩/৪৮) নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার। সে অনুযায়ী জেপির প্রার্থীরা এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।’ বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য মঞ্জুর ফোনে বেশ কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।


জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহিবুল হোসেন মাহিম বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়টি আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানিয়েছি। এখন তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়া আমরাও বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলব।’


মহাজোটের কাছে এবার জেপি কতগুলো আসন চাইবে জানতে চাইলে এমপি মঞ্জুর নিজ উপজেলা ভাণ্ডারিয়া জেপির কার্যকরী সভাপতি মাহিম বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে ১০টি আসন চাইছি আমরা। এর মধ্যে পিরোজপুর-২ আসনে দলীয় চেয়ারম্যান মঞ্জু এবং ঝালকাঠী-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে আমি মনোনয়ন চাইছি। এছাড়া আটটি আসনে আমাদের শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে। জাতীয় সংসদে শুধু পিরোজপুর-২ আসনে জেপির প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।


নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে নৌকা প্রতীক চাওয়ার বিষয়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, বর্তমান সংসদে এরকম অনেকে আছেন যারা ভিন্ন ভিন্ন দলের নেতৃত্ব দিলেও নির্বাচন করেন নৌকা প্রতীকে। তিনিও (মঞ্জু) নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে পারেন। কিন্তু সেজন্য নির্বাচন কমিশনে কেন চিঠি দিলেন সেটা বুঝতে পারছি না। এ ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই। কেউ নৌকায় নির্বাচন করতে চাইলে দলীয় সভাপতিকে জানাতে হবে। জেপির পক্ষ থেকে এরকম কোনো অনুরোধ করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এছাড়া এ ব্যাপারে আমার সঙ্গেও জেপি নেতা কোনো আলোচনা করেননি।


অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এতদিন তো তারা দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল নিয়ে নির্বাচন করেছেন। এখন নৌকা নিয়ে ভোট করতে চাইলে সেটা তাদের ব্যাপার। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।


এদিকে হঠাৎ করে বাইসাইকেল রেখে নৌকা প্রতীকে জেপির নির্বাচন করতে চাওয়ায় মঞ্জুর নির্বাচনি এলাকায় (তিন উপজেলা) মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে তাকে নৌকা না দেওয়ার দাবি তুলেছেন সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতারা। ভাণ্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র ফাইয়াজুর রশিদ খসরু বলেন, পৌর নির্বাচনে গো-হারা হেরেছেন জেপির প্রার্থী। ভোটে নামলে এমপি মঞ্জুও যে হারবেন সেটা বুঝেই বাইসাইকেল রেখে নৌকায় ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।


উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম বলেন, মহাজোটের এমপি হয়ে যুগের পর যুগ আওয়ামী লীগ নিধন করেছেন মঞ্জু। এখানে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করেছেন তিনি। এখন যখন দেখছেন যে ভোটযুদ্ধে জেতার সম্ভাবনা নেই, তখন চাইছেন নৌকায় উঠে জয়ী হতে। এটা ভাণ্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কখনোই মানবে না। যোগ্যতা থাকলে তিনি তার বাইসাইকেল নিয়ে এমপি হবেন।


স্বরূপকাঠী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম মুইদুল ইসলাম বলেন, আমরা তো নৌকার প্রার্থী চাই। অন্য দলের নেতা আমাদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে দলের কি লাভ? বিএনপি এবার নির্বাচনে নেই। যাদের ভোটযুদ্ধে নামার সক্ষমতা আছে তারা দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করুক। এরপরও দলীয় সভাপতি কাউকে নৌকা দিলে আমরা তা মেনে নেব।’ কাউখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম আবদুস শহিদ বলেন, প্রথম দাবি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ভোট আর জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় বলেই নৌকায় উঠতে চাইছে জেপি। দল যে সিদ্ধান্ত দেবে তা মাথা পেতে নেব।


পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের ওপর সব সময় নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে জেপি। ভাণ্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসায় হামলা, নেতাকর্মীদের মারধর থেকে শুরু করে এমন কিছু নেই যা তারা করেনি। যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতির কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চাই।


শেয়ার করুন