২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:২২:৩৭ অপরাহ্ন
ভোটের পর ১৪ দলীয় জোটে দূরত্ব
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০১-২০২৪
ভোটের পর ১৪ দলীয় জোটে দূরত্ব

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট গঠনের পর ২০ বছর হয়ে গেল। এই জোটের অধীনে দলগুলো চারটি জাতীয় নির্বাচনও করে ফেলল। প্রথম তিনটি নির্বাচন ও সরকারের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে সাময়িক সমস্যা তৈরি হলেও তাতে বড় প্রভাব পড়েনি জোটে। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতা নিয়ে জোটের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে।


এই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ৬টি আসনে আওয়ামী লীগের ছাড় পেলেও দলটির স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা না থাকায় ৪টিতেই পরাজিত হয়েছে জোটসঙ্গীরা। এ নিয়ে জোটের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হলেও ক্ষমতাসীনেরা মনে করছেন বিষয়টি 

সাময়িক, ঐক্য নিয়ে জোটে দুশ্চিন্তা নেই।


এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদে ১৪ দলীয় জোটের শরিক চারটি দলকে ১৩ আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ৮টি আসনে জিতেছিল দলগুলো; জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির ৩টি করে এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরিকত ফেডারেশন ১টি করে আসনে বিজয়ী হয়।


কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমে জোটের তিনটি দলকে ৭টি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিকে ৩টি করে এবং জেপিকে ১টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়। তবে শেষ দিকে ওয়ার্কার্স পার্টির ১টি আসন কমানো হয়। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন ও জাসদের রেজাউল করিম তানসেন বিজয়ী হন।


জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু (কুষ্টিয়া-২), জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (পিরোজপুর-৩) ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা (রাজশাহী-২) এবং জাসদের মো. শাহজাহান (লক্ষ্মীপুর-৪) আওয়ামী লীগের দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে ধরাশায়ী হন।


জোটের নেতারা প্রথম থেকেই ছাড় দেওয়া আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচনী মাঠ বসাতে ক্ষমতাসীনদের অনুরোধ করে আসছিলেন দফায় দফায়। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তাতে সায় দেয়নি। নেতাদের অভিযোগ ছিল, ছাড় দেওয়া আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে দলটির নেতা-কর্মীরা কাজ করবেন। তাঁদের প্রচারে তেমন কর্মী পাওয়া যাবে না।


নির্বাচনী মাঠে বাস্তবেও তা-ই ঘটেছে বলে এখন মনে করছেন জোটের শরিক দলের নেতারা। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে হাসানুল হক ইনুর অভিযোগ ছিল, কারচুপির মাধ্যমে তাঁকে হারানো হয়েছে। অন্যদিকে বাদশার দাবি ছিল, আওয়ামী লীগ তাঁকে দেওয়া কথা রাখেনি। দলটির কেন্দ্রও ব্যবস্থা নেয়নি।


এসব নিয়ে ভোটের পর জোটে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের অনৈক্যটা হচ্ছে সমস্ত নষ্টের মূল।


আমাদের ঐক্য কোনো কালে ছিল না। বড়রা যাঁরা আছেন, তাঁরা নিজেদের চিন্তা করছেন। সবাইকে নিয়ে বসলে আলাপ-আলোচনার ভিত্তি তৈরি হয়। সেখানে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’


তবে জোটের কার্যকারিতা নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি বলে মনে করছেন হাসানুল হক ইনু। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দল বসবে, জোট বসবে। তারপরে এটা নিয়ে আলোচনা করে একটা মত দিতে পারব।’


আর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন তো মাত্র হলো। আগে দেখি কী অবস্থা দাঁড়ায়, কী পরিস্থিতি হয় না-হয়। আরও এক-দেড় সপ্তাহ পরে বসব।’


নির্বাচনের ফলাফলের পরে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের পরাজিত প্রার্থীরা ভোটে কারচুপির অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু শপথ গ্রহণের পরে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের পক্ষ থেকে সমালোচনা বন্ধ করে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।


এ নিয়ে জোটের এক নেতা বলেন, ‘সামনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি চূড়ান্ত করা হবে। সেখানে তাঁরা পছন্দের নেত্রীদের এমপি বানাতে আওয়ামী লীগের কাছে তদবির করছেন। সংরক্ষিত আসনে এমপি না পেলে তাঁরা আবারও সরকারের সমালোচনায় মুখর হবেন।’


তবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র এবং সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রথম দিকে এ রকম একটু মনোমালিন্য থাকেই। ওইটা মোটামুটি ঠিক হয়ে যায়। এটাতে (নির্বাচনের ফলাফল) কারও দোষ নেই, অবস্থা ও পরিস্থিতির কারণে ঘটনা ঘটেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ কারও বিরুদ্ধে কিছু করেনি। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে বলে মনে করি না।’


শেয়ার করুন