২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০১:৪৫:০৩ পূর্বাহ্ন
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০১-২০২৪
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা

মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে মন্ত্রীদের সতর্ক করে তিনি বলেছেন, দুর্নীতি করলে ক্ষমা করা হবে না। একইসঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ঢিলেমি যাতে না হয় সে বিষয়েও মন্ত্রীদের সজাগ থাকতে হবে। রোজার মাসে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতেও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নতুন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে সব মন্ত্রীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন সরকারপ্রধান। মন্ত্রীদের কাছ থেকে ‘রেজাল্ট’ চান বলেও জানান তিনি। বৈঠক শেষে একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা যায়। এরপর বিকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনও বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। নতুন সরকারে সবমিলিয়ে পঞ্চমবার ও টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

পরে সচিবালয়ের সাংবাদিকদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বাজারে পণ্যের দাম নিয়ে যারা কারসাজি করে তাদের নজরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এখন যেটা সবচেয়ে বেশি আলোচিত- সেটা হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি। পণ্যের দাম বেশি; অথচ খাদ্যপণ্যের অভাব নেই। এ সময় দাম নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারসাজি যারা করে তাদের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তিনি বলেন, সামনে রমজান মাস। আমাদের খাদ্যপণ্য আনে সীমিত কয়েকটি গ্রুপ। তারাও এখানে সব সময় একটা খেলা খেলতে চায়। সেক্ষেত্রে এখন থেকে আমাদের একটু প্রস্তুতি নিতে হবে। রমজান মাসে যে পণ্যগুলো আমাদের বেশি লাগে; সেগুলোর দাম যেন ঠিক থাকে এবং সেগুলো যেন বাজারে পাওয়া যায়, সরবরাহ যেন ঠিক থাকে- এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

পণ্যের দাম কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার- খাদ্যপণ্যের যখন দাম বাড়ে তখন কৃষক খুশি হয়। কিন্তু যারা ভোক্তা তারা দুঃখ পায়। তাদের ওপরে চাপ এসে পড়ে। এটাকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে হবে, এটাকে কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যায় এ বিষয়ে আমাদের খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের প্রবৃদ্ধি যেটা হবে মূল্যস্ফীতি তার চাইতে কম থাকতে হবে। তাহলেই তার সুফলটা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ পাবে। তিনি আরো বলেন, মুদ্রাস্ফীতি আমরা কমিয়েছি, খাদ্যদ্রব্যের মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১২ শতাংশ উঠে গিয়েছিল, সেটাকে কমিয়ে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্য সব মিলিয়ে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু এটাকে আমাদের আরো কমাতে হবে। নির্বাচনী ইশতেহারের কথা উল্লেখ করে পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে ওয়াদা দিয়েছি সেগুলো আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে।

দুর্নীতিতে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন প্রকল্প নেয়ার আগে তা জনগণের জন্য কতটা প্রয়োজনীয় খতিয়ে দেখতে হবে। কৃষি উৎপাদনে মনোযোগ দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাট, চামড়া- কৃষি এই তিনটি পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাকে কর্মমুখী করার এবং নারী উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার কথাও বলেন। মাহবুব হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়গুলোকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে নির্বাচনী ইশতেহার দেয়া হয়েছে- সেটা অনুযায়ী সব মন্ত্রণালয় যেন কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়। কৃষি উৎপাদন যেন কোনো অবস্থায় ব্যাহত না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার তৈরি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও


স্মার্ট গভর্নমেন্ট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন। যে মন্ত্রণালয়ের যে অংশ এসব স্তম্ভের সঙ্গে জড়িত, তাদের সে অনুযায়ী গুরুত্ব দিয়ে কর্মপরিকল্পনা নিতে বলেছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এছাড়া বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প যেগুলো শেষ পর্যায়ে সেগুলো দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। নতুন প্রকল্প নেয়ার আগে সেটা কীভাবে জনগণের কল্যাণে লাগবে সেটা ভালোভাবে পরীক্ষা করতে বলেছেন। সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবহিদিতার কথা বলেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলো যেন প্রকৃত মানুষরা পায় সে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। নারী উন্নয়ন, রপ্তানি বহুমুখীকরণে ও নতুন বাজার অনুসন্ধানের নির্দেশনা দিয়েছেন। রপ্তানি বাড়ানোর জন্য চামড়া ও চামড়াজাত, পাট ও পাটজাত এবং কৃষিজাত পণ্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। এগুলোকে প্রয়োজনে পোশাক খাতের মতো সহায়তা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আইসিটি শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন যাতে করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। যুবসমাজ খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টির দিকে নজর দেয়ার কথা বলেছেন। অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতাকে সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।


শেয়ার করুন