২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ১২:০৫:২৬ পূর্বাহ্ন
গাজার টানেল নেটওয়ার্ক পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া শুরু করেছে ইসরায়েল
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৪
গাজার টানেল নেটওয়ার্ক পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া শুরু করেছে ইসরায়েল

অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণে থাকা কয়েক শ মাইল দীর্ঘ টানেল নেটওয়ার্ককে সমুদ্রের পানি দিয়ে ডুবিয়ে দিতে কাজ শুরু করেছে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষাবাহিনী (আইডিএফ) এরই মধ্যে টানেলগুলোতে পাম্প থেকে পানি ফেলা শুরু করেছে। আইডিএফের বরাত দিয়ে এই সংবাদ জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল। 


গতকাল মঙ্গলবার আইডিএফ জানিয়েছে, তারা পাম্পের সাহায্যে সমুদ্র থেকে পানি এনে টানেলে ফেলা শুরু করেছে। এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি আইডিএফ ইউনিট ও কর্মকর্তারা যৌথভাবে গাজা উপত্যকার হামাসের টানেলে বিপুল পরিমাণে পানি প্রবেশ করানোর জন্য বেশ কয়েকটি স্থানে মেশিন বসিয়েছে। 


আইডিএফ স্পষ্ট করে জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় পুরো টানেল নেটওয়ার্ক প্লাবিত হবে না। তবে টানেলের বিশাল এলাকাকে ক্ষতিগ্রস্ত পারবে। ইসরায়েল জানিয়েছে, টানেলে সমুদ্রের পানি ফেলার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বিনষ্ট হবে কি না এবং মাটির ক্ষতি হবে কি না, তা জানার জন্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে ব্যাপক পরীক্ষা চালানো হয়েছে। 


হামাসের টানেল ডুবিয়ে দিতে পানির পাম্প বসিয়েছে ইসরায়েলহামাসের টানেল ডুবিয়ে দিতে পানির পাম্প বসিয়েছে ইসরায়েল

টানেল নেটওয়ার্কে পানি ফেলার ফলে হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের কোনো ক্ষতি হবে কি না—এমন আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জিম্মিদের অবস্থানের ওপর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করছে এবং তাদের ক্ষতি করতে পারে এমন কোনো ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ আইডিএফ নেবে না। 


চলতি মাসের শুরুতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, তাদের অনুমান—হামাসের টানেল নেটওয়ার্ক প্রায় ৩৫০-৪০০ মাইল দীর্ঘ। আগে এই টানেলের দৈর্ঘ্য যা ছিল বলে অনুমান করেছিল ইসরায়েল তার অনেক বেশি। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের অনুমান, অন্তত ৫ হাজার ৭০০টি শ্যাফট বা সুড়ঙ্গপথ ধরে এসব টানেলে চলাচল করা যায়। 


আইডিএফের আরও অনুমান, হামাস এই টানেল নির্মাণে ৬ হাজার কংক্রিট ও ১ হাজার ৮০০ টন ইস্পাত ব্যবহার করেছে। ইসরায়েলের অনুমান, সম্ভবত এই প্রকল্পে কয়েক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে হামাস। 

 

এর আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছিল, গত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই ইসরায়েল এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছিল। গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুর দিকেই তারা সমুদ্র থেকে পানি টেনে আনার জন্য গাজা আল-শাতি শরণার্থীশিবিরের পাশে অন্তত পাঁচটি পানির পাম্প স্থাপন করে ফেলে। 


এই পাম্পগুলো প্রতি ঘণ্টায় কয়েক হাজার ঘনমিটার পানি বয়ে আনতে পারে। সেই হিসাবে একবার পানি টানা শুরু করলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই গাজার টানেলগুলো পানিতে ভরে যাওয়ার কথা বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। 


বিষয়টি নিয়ে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছিলেন, টানেলগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী করে তোলাটা ইসরায়েলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি করতে গিয়ে দেশটি নতুন কোনো পদ্ধতির আশ্রয় নিতেই পারে। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী হামাসের সক্ষমতাকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে বিভিন্ন কৌশলে কাজ করছে। তারা বিভিন্ন সামরিক কৌশল ও যন্ত্রপাতিও ব্যবহার করছে।’ 

 

ওই মার্কিন কর্মকর্তা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল সরকার গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রকে এই পরিকল্পনার বিষয়ে জানায়। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কত দূর এগিয়েছে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন তিনি। তবে ওই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েল এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে দেশটি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়নি।


শেয়ার করুন