২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:৫২:২৪ অপরাহ্ন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ও চাকরি দেয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা, বাড়ি ঘেরাও
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০২-২০২৪
চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ও চাকরি দেয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা, বাড়ি ঘেরাও

“জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনে ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেয়া হবে। দেয়া হবে প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, সমাজসেবায় বিভিন্ন সরকারি প্রশিক্ষণ। এছাড়াও সমাজসেবা অধিদপ্তরে কম্পিউটার অপারেটরসহ নানা পদে সার্কুলার ছাড়া হবে চাকরি। অফিসের সাথে সম্পর্ক ভালো তাই পদ ভেদে এক থেকে পাঁচ লক্ষ পর্যন্ত অগ্রিম টাকা লাগবে।


আর চাকরির নিয়োগপত্র পাবার আগেই নেয়া টাকার বিনিময়ে দেয়া হবে একটি ফাঁকা চেক।” চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়নের বাগানপাড়া গ্রামের বাবুর স্ত্রী ফুলেরা বেগমের এমন আশ্বাসে ১ থেকে ৫ লক্ষ পর্যন্ত টাকা দিয়ে চাকুরি না পেয়ে ফেঁসেছেন জেলার কয়েক শত নারী। এছাড়াও ১ হাজার থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত টাকা দিয়ে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড না পেয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন অন্তত ৪০ জন। তবে বিষয়গুলো পুরোপুরি স্বীকার না করলেও টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ফুলেরা বেগম। আর জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর এমন প্রতারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন।


জানা যায়, সমাজসেবা অধিদপ্তরে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি ছাড়াও সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পের ভাতা পাইয়ে দেয়ার করে দেয়ার নাম করে স্থানীয়তো বটেই জেলার অনেকের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক ফুলেরা বেগম। তবে কয়েকজন নারী-পুরুষকে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ভাতার কার্ড করে দিলেও না পারার সংখ্যাটা বেশি। এমনকি ১৫-২০ জনকে কার্ড করে দিতে না পেরে টাকাও ফেরত দিয়েছেন। তবে এখনও অনেকেই প্রলোভনের চাকরি ও ভাতা বাবদ তার কাছে পাবে টাকা।


এ নিয়ে শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে ফুলেরা বেগমের বাড়ি ঘেরাও করেন কয়েকজন নারী ভুক্তভোগী। এ সময় বাড়ির দরজা লাগিয়ে দিলে ভুক্তভোগীরা উত্তেজিত হন। উল্টো ভুক্তভোগীদেরকে নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দেন ফুলেরা বেগম। এমনকি এ বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মো. জাহিদ হাসানের উপর হামলা করে ফুলেরা বেগমের ছেলে-মেয়ে। এ সময় গুরুতর আহত হন জাহিদ হাসান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় দুটি দেশীয় অস্ত্র হাতুড়ি ও সাবল উদ্ধার করা হয়।


সমাজ সেবা অধিদপ্তরে চাকরি করে দেয়ার নামে ফুলেরা বেগমকে ৫ লক্ষ টাকা দেয়ার দাবি করেছেন একই গ্রামের মাসুদ আলীর স্ত্রী মোসা. সায়েমা বেগম, ২ লক্ষ টাকা দিয়েছেন আব্দুল করিমের স্ত্রী খাতিজা খাতুন, ৩ লক্ষ টাকা দিয়েছেন বারোঘরিয়ার নুরুন্নাহার, ১ লক্ষ টাকা দিয়েছেন শফিকুল ইসলামের স্ত্রী শিরিন খাতুন। গ্রামের বিভিন্ন নারীদেরকে সমাজ সেবা অধিদপ্তরে চাকরি দেয়ার কথা বলে অগ্রিম টাকা নেয়ার পর দীর্ঘ দুই বছর পেরিয়ে গেলে টাকা ফেরত নেয়ার দাবি জানায় চাকরি প্রার্থীরা। তাদের এখন একটাই দাবী চাকরি লাগবেনা, টাকা ফেরত চাই।


এ বিষয়ে কথা হয় চাকরি প্রত্যাশী সায়েমা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, সমাজ সেবা অধিদপ্তরে পিয়ন পদে চাকরির পরিচয় দিয়ে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে দুই বারে ১ লক্ষ করে ২ লক্ষ ও একবার ৩ লক্ষ মোট ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে ফুলেরা বেগম। বিনিময়ে অগ্রণী ব্যাংকের একটি ফাঁকা চেক দেয়। এর আগেও কয়েকজনের চাকরি করে দিয়েছে, আমারটাও করে দিবে বলে জানায় টাকা নেয়ার সময়। তবে টাকা নেয়ার পর থেকেই দিব-দিচ্ছি করে করে দুই বছর পেরিয়ে গেলে টাকা ফেরত নেয়ার জন্য বারবার বলি। কিন্তু কাকে টাকা দিয়েছে, আর কখনইবা টাকা ফেরত দিবে কিছুই বলছে না। আমি ঋণ করে টাকা দিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদ ও থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা না পেয়ে আদালতে চেকের মামলা দায়ের করেছি।


দুই লক্ষ টাকা দেয়া আব্দুল করিমের স্ত্রী খাতিজা খাতুন জানান, পাড়ার মানুষ বলে বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছি। টাকা নেয়ার পর রাজশাহী ও গোদাগাড়ীতে প্রশিক্ষণ করাবে বলে দীর্ঘদিন ঘুরিয়েছে। শুধু আমাকেই না, অনেককেই এভাবে মিথ্যা কথা বলেছে। কিন্তু চাকরি প্রত্যাশীরা সবাই মিলে চাপ দিলে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে ও ফেরত দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। সবার কাছে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য সময় নিয়েছে, কিন্তু সময় চলে গেলেও টাকা দিচ্ছে না।


একই এলাকার শিরিন খাতুন বলেন, টাকা লেনদেনের বিষয়ে ফুলেরার স্বামী-শ^শুরকে অভিযোগ দিতে গেলে তারা বলে টাকা দেয়ার সময় আমাদেরকে বলে দেননি। অতএব এসব বিষয়ে আমাদেরকে জড়িয়ে লাভ নাই। তার স্বামী জানায়, তাকে (ফুলেরা) মেরে টাকা নেন। আমি জানি না এসব। শিরিন আরও বলেন, আমার নিজের চাকরির টাকা ছাড়াও বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে এলাকার আরও কয়েকজনের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা ফুলেরাকে দিয়েছি। কার্ড না হওয়ায় ওইসব টাকাও আমাকে শোধ করতে হয়েছে।


শেয়ার করুন