২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০২:২০:৩০ পূর্বাহ্ন
বঙ্গবন্ধু যা বলছেন মানুষ তাই করছে
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৩-২০২৪
বঙ্গবন্ধু যা বলছেন মানুষ তাই করছে

অগ্নিঝরা মার্চের পঞ্চম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বিক্ষোভে উত্তাল সারা বাংলা। বাঙালির চোখে তখন শুধুই স্বাধীনতার স্বপ্ন। দেশজুড়ে মিছিল, মিটিং, বিক্ষোভ। চারদিকে স্বাধিকার আন্দোলন জোরদার করার কাজ চলছে। অসহযোগের মাধ্যমে আন্দোলন এগিয়ে যায় স্বাধীনতার অবশ্যম্ভাবী ও যৌক্তিক পরিণতির দিকে।


মার্চের এ সময়ে পূর্ব পাকিস্তান সরকার কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যা বলছেন মানুষ তাই করছে। তার নির্দেশমতো পরিচালিত হচ্ছে অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, ব্যাংক-বিমা সবকিছু।


১৯৭১ সালের ৫ মার্চ পঞ্চম দিনের মতো হরতাল পালনকালে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে টঙ্গী শিল্প এলাকায় ৪ শ্রমিক শহিদ হন এবং ২৫ শ্রমিক আহত হন। চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৮। এ সংবাদে ঢাকাসহ সারা দেশে জনগণের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দেশে প্রতিবাদ সভা ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। বিকালে কবি, সাহিত্যিক ও শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। ছাত্রলীগ ও ডাকসুর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল বের হয়।


এদিন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে মিলিটারির বুলেটে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ, শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে। নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষকে এভাবে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়।


জনরোষের মুখে সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণাকে মার্চের এদিনে বেলুচিস্তান ন্যাপ অবাঞ্ছিত ও অগণতান্ত্রিক ঘোষণা করে। অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আসগর খান এদিন বিকালে করাচি থেকে ঢাকায় পৌঁছেন। রাতে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ধানমন্ডির বাসভবনে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে আসগর খান মন্তব্য করেন- সংখ্যাগুরু দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশের সংহতি রক্ষা করা অপরিহার্য।


এদিকে, এগারো দফা আন্দোলনের অন্যতম নেতা তোফায়েল আহমদ ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান জানান। রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদেশি এক বেতারে প্রচারিত ‘শেখ মুজিব জনাব ভুট্টোর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগবাটোয়ারা করতে রাজি আছেন’ সংক্রান্ত সংবাদকে ‘অসৎ, উদ্দেশ্যমূলক’ ও ‘কল্পনার ফানুস’ হিসাবে আখ্যায়িত করেন।


পাকিস্তানে ইসলামি পণ্ডিত ও রাজনীতিবিদ মওলানা গোলাম গাউস হাজারভি বলেন-পশ্চিম পাকিস্তানের সব নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যের পক্ষ থেকে ভুট্টোর কথা বলার অধিকার নেই। অবিলম্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এসব নেতার কারও উপদেশকেই গুরুত্ব দেয়নি।


পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে পার্টির মুখপাত্র আবদুল হাফিজ পীরজাদা মন্তব্য করেন-জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া যেভাবেই বিচার করা হোক না কেন, তা অত্যন্ত অবাঞ্ছিত এবং আদৌ যুক্তিযুক্ত নয়।


শেয়ার করুন