রংপুর বিভাগের, বিশেষ করে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা জেলার চরাঞ্চলে বছরে প্রায় ২০ প্রকার ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এই ফসল বিদেশে রপ্তানি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে চরে বসবাসকারী কৃষক পরিবারগুলো। এই ফসল এখন রপ্তানি হচ্ছে শ্রীলংকা, জাপান, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে। ফলে গতিশীল হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষি নির্ভর অর্থনীতির চাকা।
স্থানীয়দের দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই সব জমিতে ফসলের বহুমুখীকরণের মধ্য দিয়ে কৃষক পরিবারগুলো আরও উপকৃত হবে। শুধু তাই নয়, ফসলের আন্তর্জাতিক গুণগতমান রক্ষা করা যাবে। এতে করে এসব অঞ্চলের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি শক্তিশালী হবে, আর কৃষকরা সচ্ছলভাবে তাদের জীবনযাপন করতে পারবেন।
চরাঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই অঞ্চলের নদীশাসন পরিকল্পিতভাবে করা গেলে নদীর জেগে ওঠা চরাঞ্চলের জমিতে আরও বিপুল ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। এখনো চরাঞ্চলের প্রায় ৪০ ভাগ জমি পতিত রয়েছে। এছাড়া জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এসব সমাধান করা গেলে এবং কৃষি বিভাগ যদি চরাঞ্চলের জমিতে ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে চরাঞ্চলের ফসলি জমি উত্তরের জনপদে কৃষি অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনবে।
বিশেষ করে রংপুর, লালমনিরহাটের চরে উৎপাদিত মিষ্টিকুমড়া রফতানি হচ্ছে মালয়েশিয়ায়। আর গাইবান্ধার চরাঞ্চলের মিষ্টি আলু যাচ্ছে জাপানে।
তারা জানান, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা জেলার চরের জমিতে ফসল হয় ভালো। এখানকার শাকসবজিতে কীটনাশক দিতে হয় না। সেজন্য দেশে চরের জমির ফসলের ব্যাপক চাহিদা।
এক কৃষি গবেষণার তথ্যে জানা গেছে, দেশে ৩২ জেলার ১শ’ উপজেলার চরে ১ কোটি মানুষ বসবাস করেন। এর মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে ১০ লাখ মানুষের বসবাস। বর্তমানে এই অঞ্চলের প্রায় ৬শ’ চরের ১ লাখ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। শুধু দেশীয় চাহিদাই নয়, চরের উৎপাদিত ফসল জায়গা করে নিয়েছে বিশ্ববাজারেও।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হচ্ছে উত্তরের চরগুলোতে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিভাগের বিভিন্ন চর থেকে উৎপাদিত প্রায় ১৫ হাজার টন মিষ্টি কুমড়া, আলু ও মিষ্টি আলু রপ্তানি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, জাপান ও ভুটানে। এ ছাড়া গাইবান্ধার চরাঞ্চলের মিষ্টি আলু জাপানে যায়। এ কারণে চর এখন ধীরে ধীরে আমাদের রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের হাবে পরিণত হচ্ছে।