২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৭:১১:৫৯ অপরাহ্ন
সরেননি এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৪-২০২৪
সরেননি এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা

দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক নেতা। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উলটো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। নোয়াখালী-৬ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ আলীর ছেলে এবং মুন্সীগঞ্জ-৩ এর এমপি মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের চাচাসহ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বেশ কয়েকজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।


অপরদিকে একই অবস্থা বিএনপির ক্ষেত্রেও। দলের কঠোর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন বিএনপির ৩৮ প্রার্থী। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে দলের নির্দেশনা মেনে সরেও দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ১১ নেতা। পাশাপাশি নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের নেতাও বেশ কয়েকটি উপজেলায় নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। সবমিলিয়ে প্রথম ধাপের নির্বাচন থেকে ৯৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ৭৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং ২৪ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।


প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়েছে। আজ চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে এ ধাপের নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হচ্ছে। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, দলীয় নির্দেশনার পরও যেসব এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনরা নিজেদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি, তাদের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সময় কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আমরা বিশ্বাস করি, দলীয় নির্দেশনা মেনে তারা নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেবেন। তবে কেউ যদি শেষ পর্যন্ত দলীয় নির্দেশনা না মানেন তাহলে অবশ্যই দল তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দলের নিয়মনীতি ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের (এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়দের) বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটাই আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত।


সরে দাঁড়াননি সাবেক মন্ত্রী ড. রাজ্জাকের দুই ভাই : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই এবং মামাতো ভাই। আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই হচ্ছেন ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হারুন অর রশিদ হীরা। অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রীর মামাতো ভাই হচ্ছেন ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম তপন। তারা দুজনই নির্বাচনি মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্তে অটল আছেন।


শাজাহান খানের ছেলে ও চাচাতো ভাই মাঠে : আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে মো. আসিবুর রহমান খান। তিনি মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য। তিনি এবারের মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া এমপি শাজাহান খানের আপন চাচাতো ভাই পাভেলুর রহমান শফিক খানও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।


মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা একরাম পুত্রের : নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর একমাত্র পুত্র আতাহার ইসরাক শাবাব চৌধুরী সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা থাকলেও প্রত্যাহারের শেষ সময়েও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে এমপিপুত্র আতাহার ইসরাক শাবাব চৌধুরীর বলেন, এমপিপুত্র ছাড়াও আমি এ দেশের নাগরিক। এলাকার নাগরিক হিসাবে ভোট করার অধিকার আমার রয়েছে।


নির্বাচন করবেনই সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ফুপাতো ভাই : মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন মানিকগঞ্জ-৩ (মানিকগঞ্জ সদর এবং সাটুরিয়া উপজেলা) আসনের এমপি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আপন ফুপাতো ভাই মো. ইসরাফিল হোসেন। তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। দুই দফায় তিনি দলীয় প্রতীক (নৌকা মার্কা) নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ বিষয়ে ইসরাফিল হোসেন বলেন, আমি নির্বাচনে অবশ্যই থাকব, এলাকার জনগণ আমাকে পুনরায় বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন বলে প্রত্যাশা করি।


নির্বাচনের মাঠে হানিফের চাচাতো ভাই : কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা। তিনি বর্তমান কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।


মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি এমপির ছোট ভাই : চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগর টগরের ছোট ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনসুর বাবু মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। তবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন সংসদ সদস্য আলী আজগর টগরের ভাতিজা মোহা. সহিদুল ইসলাম মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।


নির্বাচনের মাঠে এমপির স্ত্রীর বড় ভাই : নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোড়াশাল পৌরসভার সাবেক মেয়র আলহাজ শরীফুল হক। সম্পর্কে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপের স্ত্রীর বড় ভাই (সম্বন্ধি)।


ঠাকুরগাঁওয়ে দুই এমপির পরিবারের প্রার্থী : ঠাকুরগাঁও-২ আসনের এমপি মাজহারুল ইসলাম সুজনের দুই চাচা ও চাচাতো ভাই বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মাঠে রয়েছেন। অপরদিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি দ্রোপদী দেবী আগরওয়ালার পুত্রবধূ প্রিয়া আগরওয়ালা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।


বেড়ায় এমপির ভাই ও ভাতিজা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি : পাবনার বেড়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সোমবার শেষদিনেও স্থানীয় সংসদ-সদস্য ও ডেপুটি স্পিকারের ভাই আব্দুল বাতেন এবং ভাতিজা আব্দুল কাদের সবুজ মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। সোমবার সাঁথিয়ায় চেয়ারম্যান পদে জামায়াত নেতা মোখলেছুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল করিম হিরু এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আনিসুর রহমান ও স্বতন্ত্র মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শিরিন আক্তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।


সরে গেলেন এমপির স্ত্রী, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ছেলে : নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা পরিষদের তিন পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আয়েশা ফেরদাউস, তার ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আশিক আলী অমি এবং জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন জমা দেন মুসফিকুর রহমান। ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা দেন মো. কেফায়েত উল্যাহ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শামছুন নাহার বেগম। সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে আয়েশা ফেরদাউস ও মুসফিকুর রহমান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।


বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপির চাচা : আপিলে মনোনয়ন বৈধতা ফিরে পান মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের চাচা আনিছ উজ্জামান আনিস। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আর কোনো প্রার্থী না থাকায় এবার তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হতে চলেছেন।


সাবেক মন্ত্রীর বড় ভাইয়ের ছেলের বউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের পুরুষ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। মতলব উত্তর উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হলেন সাবেক মন্ত্রী ও চাঁদপুর-২ আসনের বর্তমান এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর প্রয়াত বড় ভাইয়ের ছেলে বউ ও উপজেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক লাভলী চৌধুরী। এছাড়া মতলব দক্ষিণ উপজেলার পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হলেন শওকত আলী বাদল।


বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরও যারা নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন : গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এসএম সামশীল আরেফিন টিটু। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় যুবলীগ নেতা ফিদা হাসান খাঁন টিটো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে একমাত্র প্রার্থী শফিউল কবির ইউসুফ থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। প্রথম দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থী থাকায় তিন জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে। নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হচ্ছেন মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে দুই ভাইসহ অপহৃত ও নির্যাতিত হয়ে সারা দেশে আলোচিত আওয়ামী লীগ কর্মী দেলোয়ার হোসেন পাশা।


কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিএনপির ৩৮ জন, প্রত্যাহার ১১ জনের : প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির ৪৯ জন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। নির্বাচন বর্জনের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৮ জন। এর মধ্যে বিএনপির পদধারী নেতা ১৮ জন। বাকিরা বিএনপি নেতাদের আত্মীয়স্বজন ৯ জন ও দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা। এছাড়া ১১ জন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তারা প্রত্যাহার করেছেন। বিএনপি কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।


জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। সেজন্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কাজেই দলের দায়িত্বশীল যারাই উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শেয়ার করুন