মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা এবং ইউক্রেনের জন্য মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা—এই দুই বিষয়ই আলোচনার কেন্দ্রে থাকার কথা রয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ফ্লোরিডায় ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে এই বৈঠক হতে পারে। এর আগে বড়দিনের দিনে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা ফোনে কথা বলেন জেলেনস্কি। ওই আলোচনার পর তিনি জানান, সংলাপে ‘নতুন কিছু ধারণা’ উঠে এসেছে, যা যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত শান্তির দিকে এগোনোর ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা সময় নষ্ট করছি না। সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। নতুন বছরের আগেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।’ তার দাবি, প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে, এখন লক্ষ্য শতভাগ প্রস্তুতি নিশ্চিত করা।
এই শান্তি পরিকল্পনায় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করে সেখানে একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব রয়েছে। জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাশিয়া যে দনবাস অঞ্চলের অংশগুলো দখলে নিতে পারেনি, সেসব এলাকায় একটি নিরস্ত্রীকৃত ‘ফ্রি ইকোনমিক জোন’ গঠনের বিষয়টিও আলোচনায় থাকতে পারে। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, ইউক্রেন যে অঞ্চলগুলো থেকে সেনা সরাবে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ইউক্রেনীয় পুলিশের হাতেই থাকবে।
পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ধরা হচ্ছে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা। এতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে রাশিয়া নতুন করে হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইউরোপীয় দেশগুলো সমন্বিতভাবে সামরিক সহায়তা দেবে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জনবল ৮ লাখ রাখার কথাও উল্লেখ রয়েছে, যা আগে কমানোর দাবি জানিয়েছিল মস্কো।
তবে এই শান্তি উদ্যোগ ঘিরে মস্কো ও কিয়েভের অবস্থান এখনো দূরে। রাশিয়ার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে, তা ইউক্রেনের প্রস্তাবের সঙ্গে ‘মৌলিকভাবে ভিন্ন’। আলোচনায় ‘ধীর কিন্তু স্থির অগ্রগতি’র কথা বলা হলেও দনবাস অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারে জেলেনস্কির প্রস্তাব নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি রাশিয়া।
এদিকে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টারা। ফ্লোরিডায় বৈঠক শেষে রাশিয়ার বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ ফেরার পর এই যোগাযোগ আরও জোরদার হয়েছে। রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ সাম্প্রতিক আলোচনাকে ইতিবাচক বললেও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে শান্তি আলোচনা বানচালের অভিযোগ তুলেছেন।
কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যেই যুদ্ধ পরিস্থিতি উত্তপ্তই রয়েছে। খারকিভে রুশ বিমান হামলায় শিশুসহ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলীয় চেরকাসি অঞ্চলের উমান শহরেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুই শিশুসহ একাধিক ব্যক্তি আহত হন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব হামলায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর পাল্টা হিসেবে রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলের নভোশাখতিনস্ক তেল শোধনাগারে হামলার দাবি করেছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এই হামলা চালানো হয়েছে। ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ জানিয়েছে, শোধনাগারটি দক্ষিণ রাশিয়ায় তেলপণ্যের অন্যতম বড় সরবরাহকারী এবং রুশ সেনাবাহিনীর রসদ জোগানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

