রাজশাহীর মোহনপুরে বিদ্যুতের কাংখিত সেবা না পেয়ে তীব্র গরমে অতিষ্ট হয়ে পড়ছে জনজীবন। দিনে দিনে লোডসেডিং এর মাত্রা পেরিয়ে রোববার (৩ জুলাই) রাত ২ টায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর মোহনপুর বাসির ঘুম নষ্ট হয়ে যায়, পরে বিদ্যুতের দেখা মিললে, তা বেশি সময় থাকে না। এভাবেই চলে সারারাত এবং দিনের অধিকাংশ সময়ও বিদ্যুৎ বিহীন। বিদ্যুতের অভাবে ফ্যানের পাখা না ঘুরায় গরমে অতিষ্ট হয়ে সারারাত জেগে পার করেন হাজার হাজার সাধারণ জনগন। এই ভুগান্তি (৪ জুলাই) বৃহস্পতিবার চলমান থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন মোহনপুর বাসিরা।
মোহনপুরের বাসিন্দা বেলাল হোসেন, কেশরহাটের জুয়েল রানা, শফিকুল ইসলাম, ধোপাঘাটার বাচ্চু আহমেদ, ঘাসিগ্রামের মোবারক হোসেন, মৌগাছির দুলাল হোসেনসহ অসংখ্য ভুক্তিভুগি গ্রাহকেরা বলেন, আমরা বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতের নিয়ম অনুসারে বিল প্রদান করে থাকি, অথচ শতভাগ বিদ্যুৎ সেবাতে ব্যর্থ থাকার পরেও আমাদের কোন কারনে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে দেরি হলে গুণতে হয় জরিমানা এবং কোন অনিয়ম হলে তারা দ্রুত এসে আমাদের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে থাকে। আমাদের মোহনপুরে অধিকাংশ জন সাধারণের আইপিএস কেনার সামর্থ্য নাই। এই তীব্র গরমে আমরা বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে চরম কষ্ঠে আছি। আমাদের পরিবারের ছোট বাচ্চারা রাতভর জেগে কান্নাকাটি করছে, বৃদ্ধারা অতিরিক্ত গরমে পেসার ঔষধ খেয়েও অসুস্থ্য হয়ে কাতরাচ্ছেন। আমরা যারা অটো চালিয়ে সংসার চালায় তারা চার্জের অভাবে ঠিকমতো চালাতে পারছিনা। আমদের ছোট খাটো হলেও বিদ্যুতের সহোযোগিতায় চালিত বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তা দিয়ে আমরা জীবন যাপন করে থাকি। মিল-কারখানা গুলোতে দিনব্যাপী মজুরি প্রদান করার পরেও বিদ্যুতের অভাবে তেল, চাল তৈরিতে বাধা গ্রস্থ্য হতে হচ্ছে। এতে করে আয়ের পথে বাধা অপরদিকে শ্রমিকদের মজুরি দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এভাবে বিদ্যুতের ভুগান্তি থাকলে আমরা আগামী দিনে না খেয়ে মরতে হবে সাথে গরমে কারনে পরিবারের সদস্যদের ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্তসহ পেসার জনিত সদস্যদের হারাতে হবে। আমদের প্রাণের দাবি বিষয়টির দ্রুত সমাধানের জন্যে কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি। অন্যথায় আমাদের সার্বিক ক্ষতি পূরণ চেয়ে প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করবো বলেও জানান সর্বস্তরের জনগণ।
মোহনপুর পল্লী বিদ্যুৎ সূত্রে জানা যায়, মোহনপুরে ১৬২.৬৫ বর্গ কিলোমিটারের আয়তনে ৬ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১৭০টি গ্রাম রয়েছে। এখানে ৭৮৮ কি:মি: বিদ্যুতের নির্মিত লাইন রয়েছে। এর মধ্যে আবাসিক, বাণিজ্যিক, সেচ, শিল্প, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, রাস্তার বাতি, পানির বাল্ব ও অন্যান্য কাজে প্রয়োজনে উপকেন্দ্রের পিক লোডে বিদ্যুত থাকার কথা ১২ মেগাওয়াট। কিন্ত এই বিদ্যুৎ আগে প্রয়োজন মতো থাকলেও বর্তমানে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।
মোহনপুর পল্লী অফিসের সহকারি জোনাল ম্যানেজার শওকত আরা বলেন, বিদ্যুৎ অধিকাংশ সময় কাটাখালি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। আমরা বিদ্যুতের সেবা পূরন না করতে পারায় অসংখ্য গ্রহক আমাকে অভিযোগ দিলেও চাহিদা অনুসারে বিদ্যুতের মেগাওয়াট না পেয়ে গ্রাহকদের যথাযথ সেবা দিতে পারছিনা।
এবিষয়ে মোহনপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী এম এ সাঈদ জানান, আমাদের মোহনপুরে রাতে যদি প্রয়োজন হয় ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমাদের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৬ মেগাওয়াট, আর দিনে ৬ মেগাওয়াটের জায়গায় মাত্র ৪ মেগাওয়াট। আমরা এর ফলে গ্রাহকের চাহিদা পূরন করতে পারছিনা, এরপরেও যদি আমরা গ্রাহকের অনুরোধে ৬ মেগাওয়াটের এর জায়গায় ৭ দিয়ে থাকি। তাহলে কিছু সময়ের মধ্যেই সম্পূর্ণ সংযোগ বিচ্ছিন করে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি জানতে কাটাখালি গ্রিকে যোগাযোগ করা হলে তারা বলছেন সংযোগটি ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আগের তুলনায় বিদ্যুৎ এর পরিমাণ খুবই কম পাওয়ায় লোডসেডিং এর সমস্যাটি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টির সমাধানে চেয়ে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারাও কোন আশ্বাস দিতে পারছেন না, আমরাও গ্রাহকের ফোনে অভিযোগ শুনতে শুনতে রাতদিন ঘুমাতে পারছিনা।