২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৯:০২:১৭ অপরাহ্ন
সিএমপি পুলিশ সদস্যদের তালিকা চেয়েছে হেডকোয়ার্টার
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১২-২০২৪
সিএমপি পুলিশ সদস্যদের তালিকা চেয়েছে হেডকোয়ার্টার

পুলিশ সদর দপ্তর গেল ১৫ বছরে দায়ের হওয়া রাজনৈতিক মামলার হিসাব চেয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে। এছাড়া পুলিশের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিএমপিসহ দেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে নেতিবাচক (জনপ্রত্যাশার পরিপন্থি) ভাবমূর্তি আছে এমন পুলিশ সদসস্যদেরও তালিকা চাওয়া হয়েছে।


পাশাপাশি জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে মাঠ পর্যায়ে নেতিবাচক ভূমিকা নিয়ে সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার থেকে উপকমিশনার পদমর্যাদার ৭/৮জন কর্মকর্তাদের ‘আমলনামার’ একটি গোপন প্রতিবেদনও পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 


জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সিএমপির ১৬ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা রাজনৈতিক মামলা এবং একই সময়ে কতজন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন সেটার তথ্য চেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। 


গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তরের ক্রাইম অ্যানালাইসিস শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. আরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের দপ্তরে এসেছে। 


ওই চিঠিতে ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক মামলার বাদীর সংখ্যা (পুলিশ) তদন্তের ফলাফল এবং বিচারের ফলাফল নির্দিষ্ট একটি ছকে লিখে আজ মঙ্গলবারের (১০ ডিসেম্বর) মধ্যে চিঠি স্বাক্ষরকারী এআইজি মো. আরিফুল ইসলামের কাছে পাঠানোর নির্দেশ রয়েছে।


তথ্যটি গত ২৫ নভেম্বর অতিরিক্ত আইজি (হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট) আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সূত্রে জানা গেছে। 


ওই চিঠিটি নগর পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছেও পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে নগর পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা উপকমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিনের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।


এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় (জুলাই-আগস্ট) মাঠ পর্যায়ে ‘নেতিবাচক’ ভূমিকা পালনকারী চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অন্তত ৮ জন কর্মকর্তার (সহকারী পুলিশ কমিশনার থেকে উপকমিশনার পদমর্যাদার) তথ্য সম্বলিত একটি তালিকা পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। 


ওই তালিকায় পাঁচজন উপকমিশনার, দুইজন অতিরিক্ত উপকমিশনার এবং একজন সহকারী পুলিশ কমিমশনার রয়েছেন। সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগে দায়িত্বপালনকারী সাবেক এক উপকমিশনার সম্পর্কে গোপন প্রতিবেদনের ‘মন্তব্য’ কলামে বলা হয়েছে-‘৯ বছর ধরে তিনি সিএমপিতে কর্মরত। 


৫ আগস্টের দিন তার নেতৃত্বে অপারেশন পরিচালিত হয়েছে। গোলাগুলির সময় ঘটনাস্থলে তিনি উপস্থিত ছিলেন। এই কর্মকর্তা বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া সিএমপির সাবেক কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের খুব কাছের লোক ছিলেন।’


তালিকায় থাকা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার বিষয়ে বলা হয়েছে-‘এই কর্মকর্তা ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে সিএমপিতে কর্মরত। ৫ আগস্টের দিন সিএমপির সব থানায় তার নির্দেশনায় অপারেশন পরিচালিত হয়েছে। ইতোপূর্বে তিনি নওগা ও গাইবান্ধা জেলায় কর্মরত ছিলেন। তবে বর্তমানে এই কর্মকর্তা ওএসডি আদেশ প্রাপ্ত।’ 


সিএমপির সাবেক এক উপকমিশনার (বর্তমানে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সম্পর্কে বলা হয়েছে-‘২০১৬ সাল থেকে সিএমপিতে কর্মরত এই কর্মকর্তা। গত জুলাই-আগস্ট আন্দেলনের সময় সিএমপির উত্তর বিভাগের অধীন এলাকায় গুলিতে মারা যায় ৬ জন। এসব ঘটনায় ৫ আগস্ট পরবর্তী পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, বাকলিয়া থানায় একাধিক মামলায় কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকে আসামি করা হলেও কৌশলে বেঁচে যান সিএমপির ওই কর্মকর্তা। প্রতিবেদনের মন্তব্য কলামে আরও বলা হয়েছে ওই কর্মকর্তা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং সাবেক পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের আস্থাভাজন ছিলেন।’


অতিরিক্ত উপকমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার বিষয়ে মন্তব্য কলামে বলা হয়েছে-‘এক সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। ৫ আগস্টে মাঠ পর্যায়ে বেশ কিছু অপারেশনের নেতৃত্ব দেন তিনি। 


সম্প্রতি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত সিএমপির সদর দপ্তরে দায়িত্বপালনকারী এডিসি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা সম্পর্কে বলা হয়েছে-২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে সিএমপিতে কর্মরত আছেন তিনি। এক সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের নিরাপত্তা ডিউটিতে ছিলেন। তিনি বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মীদের ‘মিথ্যা’ ফাঁসিয়েছেন।


এদিকে ১৮ থেকে ২১ জুলাই ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রাণঘাতী অস্ত্র থেকে গুলিবর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ সদস্যদের একটি তালিকা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে দিয়েছে ‘লয়ার ফর এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড  ডেভেলপমেন্ট’ নামে আইনজীবীদের একটি সংগঠন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ১৮  থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ১৫০ জনের বেশি নিহত হয়।  


এসব ঘটনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় দেড়শতাধিক মামলা দায়ের হয়। এগুলোর মধ্যে ১০০টি মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণকারী এবং গুলির নির্দেশদাতা ৭৪৭জন পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করেছে সংগঠনটি।


লয়ার ফর এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড  ডেভেলপমেন্টের অন্যতম সংগঠক আব্দুল্লাহ আবু  নোমান সম্প্রতি গণমাধমকে বলেন, ‘১৮-২১ জুলাইয়ের ঘটনায় পুলিশের করা মামলাগুলোর এজাহারে গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের নাম ও গুলির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে।


এসব মামলায় আসামি করা হয়েছিল অজ্ঞাতনামা সাধারণ শিক্ষার্থীদের। মামলাগুলোতে তখন  বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। অর্ন্তবর্তী সরকার সেই মামলাগুলো প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত  নেয়।’


সূত্র: দেশ রূপান্তর


শেয়ার করুন