রাজশাহীতে চিকিৎসাবিদ্যা পড়তে আসা আন্তর্জাতিক ‘ভোগ’ সাময়িকীর মডেল রাউধা আতিফ হত্যা মামলা পুন:তদন্তের এই নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে রাজশাহীর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক মহিদুর রহমান এ আদেশ দেন পুন:তদন্তের এই নির্দেশ দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলাটি তদন্ত করাতে বলা হয়েছে। রাউধা হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আসলাম সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মালদ্বীপের বাসিন্দা রাউধা আতিফ রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ কলেজের বিদেশি শিক্ষার্থীদের হোস্টেল কক্ষ থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল।
কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, রাউধা ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। পুলিশ যাওয়ার আগেই দরজা ভেঙে লাশটি নামানো হয়। তবে রাউধার বাবা মালদ্বীপের নাগরিক ডা. মোহাম্মদ আতিফের দাবি ছিল তার মেয়ে আত্মহত্যা করেননি। তিনি রাউধার সহপাঠী ভারতীয় শিক্ষার্থী সিরাত পারভীনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে ময়নাতদন্ত শেষে রাউধার লাশ রাজশাহীতে দাফন করা হয়। হত্যা মামলা করার পর কবর থেকে লাশ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হয়। দুই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেই বলা হয়- রাউধা আত্মহত্যা করেছেন।
এদিকে ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর শাহমখদুম থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার আলী ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক আসমাউল হক আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন রাউধার বাবা। আদালত তা গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইদুর রহমান ২০১৯ সালের ১৮ মে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে তিনি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে আত্মহত্যার বিষয়টি থাকার কথা উল্লেখ করেন। আর তার নিজের তদন্তের বিষয়ে উল্লেখ করেন যে, মামলার আসামি সিরাত পারভীনের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত মামলাটি নথিজাত করেন। সর্বশেষ এই প্রতিবেদনের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেন রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ। তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবারো মামলাটি তদন্তের আবেদন করেছিলেন। শুনানি শেষে আদালত মঙ্গলবার এ আদেশ দিয়েছেন।
রাউধা হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আসলাম সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি তিনি মহানগর দায়রা ও জজ আদালতে মামলার রিভিশন আবেদন করেছিলেন। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল আদালতে রিভিশন আবেদন মঞ্জুর হয়। সেদিন আদালত নিম্ন আদালতে বাদীর নারাজি আবেদন দাখিলের অনুমতি দেন।
গত ২৯ জুন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ বাদীর নারাজি আবেদন দাখিল করা হয়। মঙ্গলবার মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির আগে আদালত মামলার বাদী ডা. মোহাম্মদ আতিফের জবানবন্দী গ্রহণ করেন। পরে শুনানি শেষে মামলাটি পুন:তদন্তের আদেশ দেন আদালত।