প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করছেন, তখন দক্ষিণ এশিয়া নীতির রূপরেখা একটি নতুন আকার ধারণ করছে। এতে ভারত রয়েছে সামনে, একেবারে কেন্দ্রস্থলে আর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ প্রান্তিক অবস্থানে চলে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সাবেক পরিচালক যিনি বর্তমানে জন্স হপকিন্সের স্কুল অফ অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যশানাল স্টাডিজের অধ্যাপক জোশুয়া হোয়াইট বলেছেন ব্যতিক্রমীভাবে ভারত ছাড়া, আমার মনে হয় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ ওয়াশিংটনের কাছ থেকে কিছুটা কম মনোযোগ আকর্ষণ, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছুটা কম বোঝার এবং বহুপাক্ষিক সংগঠনসমূহ কিংবা বহুপাক্ষিক চ্যানেলের মাধ্যমে বেশি করে দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের আঞ্চলিক অগ্রাধিকারের বিষয়টি গত সোমবার প্রেসিডেন্টের অভিষেকের দিন পরিষ্কার হয়ে ওঠে। যেখানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে এ উপলক্ষ্যে তাদের রাষ্ট্রদূতদের পাঠানোর মধ্যেই সীমিত রাখা হয়। অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রত্যাশিত প্রথম সারিতেই আসন গ্রহণ করেন।
এরপর গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর বলেন, এটি খুবই পরিস্কার ছিল যে ট্রাম্প প্রশাসন এই অভিষেক অনুষ্ঠানে ভারতের উপস্থিতির বিষয়ে আগ্রহী ছিল। স্পষ্টতই তারা এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
যদিও বাইডেন প্রশাসন প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে, ভারতীয় কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনকে আরও সম্প্রসারিত সহযোগিতার সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
ট্রাম্পের প্রথম আমলে ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যে উষ্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয় তাতে আরও গভীর অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতি রয়েছে বলে কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
গত বছরের অক্টোবরে ট্রাম্প মোদি 'এক মহান বন্ধু' এবং 'সব চেয়ে চমত্কার মানুষ' বলে অভিহিত করেন। জবাবে তার অভিনন্দন বার্তায় মোদি ট্রাম্পকে 'প্রিয় বন্ধু' বলে সম্বোধন করেন এবং 'আবার ঘনিষ্ঠভাবে একত্রে' কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
এই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের বাইরে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম রাষ্ট্র ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্রও বটে যারা এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণে একটা ভারসাম্য আনতে পারে। চীনের পর যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বানিজ্যিক অংশীদার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা যারা উভয়ই চীন বিরোধী এবং ভারতের কড়া সমর্থক, তারা দিল্লির সঙ্গে আরও গভীর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর জোর দিবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতের গুরুত্বের কারণেই রুবিও তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন জয়শঙ্করের সঙ্গে। জয়শঙ্কর বলেন, এই সম্পর্কের অগ্রযাত্রার জন্য, প্রতিবন্ধকতা অপসারণের জন্য, আরও বড় লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য স্পষ্টতই বড় রকমের চাহিদা রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ভারত ১৮ হাজার নথিহীন অভিবাসনপ্রার্থী ভারতীয়দের চিহ্নিত করেছে যাদেরকে স্বদেশে ফরিয়ে নেওয়া হবে বলে ব্লুমসবার্গ নিউজ জানিয়েছে।
জয়শঙ্কর বলেন, ভারত অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশার বিরোধী এবং অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের ফেরত নিতে প্রস্তুত।