২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৫:২৩:০০ অপরাহ্ন
নির্যাতিতা সেই হাবিবা চরম আতঙ্কে, এমপি’র বিচার দাবি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৭-২০২২
নির্যাতিতা সেই হাবিবা চরম আতঙ্কে, এমপি’র বিচার দাবি

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ঘাশিগ্রাম ইউনিয়নের নির্যাতিতা সাবেক ইউপি সদস্য সেই শেখ হাবিবা ভয়, খুন-গুম হওয়ার ভয়ে আতঙ্ক দিন যাপন করছে।

এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি বুধবার (২৭জুলাই) বেলা ১১ টার দিকে রাজশাহী নগরীর একটি রেস্তোরায় সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।

নির্যাতিতা শেখ হাবিবা মোহনপুর উপজেলার সিংহমার গ্রামের মাসুদ রানার স্ত্রী ও সাবেক ইউপি সদস্য ও উপজেলা কৃষকলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, একজন সাবেক একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি হিসাবে মানুষের বিভিন্ন বিপদে সহায়তার সুবাদে গত ১৯ জুলাই মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তার এলাকার নজরুলের মেয়ের দুই বছরের দুধের শিশুকে উদ্ধারের জন্য মোহনপুর থানায় যায় এবং সহায়তা চাই।

ওসি তৌহিদুল ও এএসআই সোলায়মানের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে এএসআই সোলায়মান বাচ্চা উদ্ধারে অসম্মতি জানাই এবং বলে তোমার কাজ করতে এমপি স্যারের নিষেধ আছে।

হাবিবা বারবার অনুরোধ করে বলে আপনারা অন্যায় করছেন, আমি কিন্তু বিষয়টি সাংবাদিকদের জানাবো তখন তাঁরা হাবিবার উপর ক্ষিপ্ত হয় এবং বলে বিষয়টি এমপি স্যারের কাছে জানতে হবে এবং ওসি সাহেব দুই তিন জায়গায় মোবাইলে কথা বলেন।

কথা বলার ভঙ্গিমায় হাবিবার মনে হয় স্থানীয় এমপি আয়েন উদ্দিন ও তাঁর লোকজনের সাথে কথা বলে ওসি। কিছুপরে এমপির বন্ধু উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ইকবাল হোসেন থানায় এসে বলে যে, এই হাবিবা এমপির বিরুদ্ধে কথা বলে তাকে উচিৎ শিক্ষা দেন। তখন তারা হাবিবাকে গালমন্দ ও হুমকি ধামকি শুরু করে এবং কেনো এমপির বিরুদ্ধে কথা বলি বার বার উল্লেখ করে।

এক পর্যায়ে দুইজন মহিলা কনস্টেবল হাবিবাকে চড় থাপ্পড় মারে এবং ঐদিনের ডিউটি অফিসার লতিফাসহ কয়েকজনে হাবিবাকে ওসি’র রুম থেকে টেনে হেঁচড়ে পাশের এসআইদের রুমে নিয়ে গিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটাই এবং এমপির বিরুদ্ধে কথা না বলতে হুশিয়ারি দেয় এবং বোরখার হিজাব কেড়ে নিয়ে রাতভর থানায় আটকিয়ে রাখে।

পরদিন সকাল আনুমানিক ১১ টার দিকে এমপি আয়েন উদ্দিনের সাবেক পিএস রাজাকার পুত্র একরামুল হক বিজয় এমপির ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে পরিচিত ডলি বেগমকে নিয়ে থানায় আসে এবং বিজয় হাবিবার কাছে এসে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়।

এরপর ডলি বেগমকে বাদী করে একটি ও এসআই রোফ কে বাদী করে আরেকটি মোট দুইটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরন করে।

হাবিবা সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, গত ২৩ শে মার্চ-২০২২ ইং তারিখে সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এমপি হয়ে হঠাৎ ধনী শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয় ও ডিবিসি নিউজ টিভিতেও সংবাদ প্রকাশ হয়। যেখানে হাবিবা এমপি আয়েন উদ্দিন রাজাকার পুত্র, মানুষের জমি দখলকারিসহ তার কুকর্মের বিষয়ে সাক্ষাতকার দেয় ।

এই সাক্ষাতকার দেওয়ার কারণে এমপি আয়েন উদ্দিন ষড়যন্ত্র মূলকভাবে তাকে পুলিশ দিয়ে এই অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে।

হাবিবা এই নির্যাতনের মূল হোতা রাজাকার পুত্র এমপি আয়েন উদ্দিনসহ জড়িতদের বিচার দাবি এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে জুডিশিয়াল তদন্ত দাবি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট এই ঘটনার সাংগঠনিক বিচার দাবি করেছে। এমপি আয়েন উদ্দিন ও তার লোকজনের অত্যাচারে হাবিবার পরিবার নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

হাবিবা সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা সময় তার নির্যাতনের বর্ণনা দেন এবং কেঁদে ফেলেন।

সংবাদ সম্মেলনে হাবিবার মা ওই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মিনা বেগম , স্বামী মাসুদ রানা ও এক শিশু কন্যা উপস্থিত ছিলেন।

হাবিবার মা বলেন, আমার এলাকায় থাকতে পারছি না। বিভিন্ন মাধ্যমে গুম হওয়ার ভয়ভীতি আসছে। ২০১৮-১৯ সালের দিকে এমপি আয়েন উদ্দিনের বড়ভাই ও ইউপি চেয়ারম্যান বাবলুর নির্দেে হাবিবা একবার এলাকাছাড়া হয়েছিলো। বর্তমানে এমপির বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছে না খুন ও গুম হওয়ার ভবে।

এমপি আয়েন উদ্দিনকে রাজাকার পুত্র উল্লেখ কেনো করেছেন এর সত্যতা কি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবা বলেন, বাবলুর রহমানের লেখা ‘একাত্তরে মোহনপুর’ নামক বইয়ে ‘মহিষকান্ডি গ্রামে পিস কমিটির তালিকা’ নামক শিরোনামে লেখায় এমপি আয়েন উদ্দিনের নাম লিপিবন্ধ আছে বলে তিনি দাবি করেন।

হাবিবার স্বামী মাসুদ রানা মোহনপুরের কেশর হাটে একজন চা বিক্রেতা । খুবই সাধারন জীবন যাপন করে চলে ফলে এমন অবস্থায় তারা চরম আতঙ্কে দিন যাপন করছে।

পুলিশদ্বারা হাবিবাকে নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা সম্পর্কে মোহনপুর থানার ওসি তৌহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাবিবা যেসব অভিযোগ করছেন তার পুরোটাই মিথ্যা । এগুলো বলতে হয় তাই পুলিশ ও এমপির বিরুদ্ধে এসব বলছে। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, আগে হাবিবার বিরুদ্ধে দেড় লক্ষ টাকা আত্নসাতের অভিযোগ তাই তাকে আটক করা হয়।

শেয়ার করুন