বরিশালের মেঘনা নদীর একটি বালুমহালের ইজারা বাগাতে গিয়ে এক সেনাসদস্যকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১২ নেতার পদ স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ওই নেতাদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব সাংগঠনিক পদ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এ–সংক্রান্ত চিঠি অভিযুক্ত নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আকন কুদ্দুসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেহেতু অভিযুক্তরা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী লঘু শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
পদ স্থগিত হওয়া নেতারা হলেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম, সহসভাপতি নূর হোসেন, সদস্য ইমরান খন্দকার, মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুদ রাঢ়ি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সদস্যসচিব মো. জাহিদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব কামরুল হাসান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, বরিশালের হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দেওয়ান মো. মনির হোসেন এবং যুবদলের মো. রুবেল ও মো. ফাহিম।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনার বিরুদ্ধে বরিশালে বালুমহালের দরপত্র নিয়ে এক সেনাসদস্যকে মারধর ও মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার মতো সহিংস ও জবরদস্তিমূলক কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, যা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আপনার প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব সাংগঠনিক পদ আগামী ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হলো।’
দলীয় সূত্র জানায়, গত ২৭ মার্চ বরিশালের ছয়টি বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে হিজলা উপজেলা-সংলগ্ন মেঘনার একটি বালুমহাল নিয়ে দরপত্রে অংশ নেন কাজী আবদুল মতিন নামের এক ব্যক্তি। অভিযোগ আছে, ওই ইজারা পেতে বিএনপি-ঘনিষ্ঠ নেতাদের একটি অংশ চাপ সৃষ্টি করতে চাইলে মতিনের ভাতিজা সেনাসদস্য আবু জাফরকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে মারধর করে অপহরণ করে নগরের নদীবন্দর-সংলগ্ন একটি আবাসিক হোটেলে আটকে রাখা হয়। পরে সেনাসদস্যরা অভিযান চালিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় দেওয়ান মনির হোসেন, নূর হোসেন ও ইমরান খন্দকারকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনার পর গত ২৪ মার্চ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তিন মাসের জন্য সাময়িকভাবে পদ স্থগিত করা হয়। পরে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরীকে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর জমা দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এবার নতুন করে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়া হলো।