১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২:৩৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
রাজশাহী পবা উপজেলায় আট ইউনিয়নে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৯-২০২৫
রাজশাহী পবা উপজেলায় আট ইউনিয়নে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু

দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্য নিয়ে পবা উপজেলার আটটি ইউনিয়নে চালু হলো ‘ইউনিয়ন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’। গ্রামীণ তরুণ প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর যুগোপযোগী শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে হুজুরীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরাফাত আমান আজিজ। তিনি বলেন,“আজকের দিনে প্রযুক্তি শিক্ষা ছাড়া দক্ষ জনশক্তি তৈরি সম্ভব নয়। একসময় গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য এমন সুযোগ কল্পনাতীত ছিল। কিন্তু এখন ইউনিয়ন পরিষদেই তারা নামমাত্র খরচে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি শিখতে পারছে। বিশেষ করে যারা আর্থিক কারণে বঞ্চিত হতো, তাদের জন্য এটি নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।”


তিনি আরও বলেন,“হড়গ্রাম, দর্শনপাড়া, পারিলা, বড়গাছী, দামকুড়া, হরিয়ান ও হরিপুর ইউনিয়নে আগে চালু হওয়া কেন্দ্রগুলোতে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মকর্মসংস্থানে যুক্ত হবেন। সেই সাফল্যের অনুপ্রেরণা থেকেই এবার হুজুরীপাড়াসহ আট ইউনিয়নে নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হলো। এটি শুধু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নয়, বরং একটি সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা।”


প্রতিটি কেন্দ্রে একসঙ্গে ১১ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। সেখানে রয়েছে আধুনিক ডেস্কটপ কম্পিউটার, নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগসহ মাল্টিমিডিয়া উপকরণ। প্রশিক্ষণ দেবেন দক্ষ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, যিনি হাতে-কলমে শিক্ষা প্রদান করবেন। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এসব কোর্সে ভর্তি হতে পারবে।


প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তুতে থাকছে— কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন (ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট), ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও ই-মেইল ব্যবহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা, গ্রাফিক্স ডিজাইন।


অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আবু বাশির। তিনি জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির অর্থায়নে এ কেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন,“আমরা চেয়েছি বেকারত্ব নামক মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় গ্রামেই প্রযুক্তি শিক্ষা পৌঁছে দিতে। এজন্য স্থানীয় চাহিদাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রকল্পটি সময়োপযোগী ও টেকসই উদ্যোগে রূপ নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”


হুজুরীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন,“আমার ইউনিয়নের শিক্ষার্থীরা যেন পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছি। ভবিষ্যতেও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির কার্যক্রম সম্প্রসারণে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।”


শিক্ষার্থীরা বলছে, আগে শহরে না গেলে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব ছিল না। এখন ইউনিয়ন পর্যায়েই এ সুযোগ তৈরি হওয়ায় তারা উৎসাহের সঙ্গে ভর্তি হচ্ছেন। অনেকেই আশা করছেন, এসব প্রশিক্ষণ শেষে চাকরির পাশাপাশি স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগও তৈরি হবে।


অভিভাবকরা মনে করছেন, গ্রামের তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তিগত দক্ষতায় সমৃদ্ধ করার এই উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে দেশের কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বড় অবদান রাখবে।

শেয়ার করুন