২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৭:১৬:১৭ অপরাহ্ন
ঢাকায় সিসি ক্যামেরা বসিয়েও থামছে না চুরি-ছিনতাই
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৯-২০২২
ঢাকায় সিসি ক্যামেরা বসিয়েও থামছে না চুরি-ছিনতাই

১ আগস্ট, রাত সাড়ে নয়টা। পান্থপথের একটি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে রিকশা নিয়ে কাঁঠাল বাগানের বাসায় ফিরছিলেন শিল্পী আক্তার। কাঁঠাল বাগান ঢালের কাছে আসতেই পেছন থেকে হাতে আঘাত করে ছিনতাইকারী। হাত থেকে রাস্তায় পড়ে যায় শিল্পী আক্তারের মোবাইলটি। রিকশা থামিয়ে পড়ে যাওয়া মোবাইল তুলতে গেলে ছিনতাইকারী আরেক হাতে থাকা টাকার ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায়।


এ ঘটনার পর আর শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি ওই ছিনতাইকারীকে। থানায় মৌখিকভাবে বলে এসেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছিনতাইয়ের এমন ঘটনা রাজধানীতে নতুন নয়। সব সময়ই এমন ঘটনা ঘটতো। এসব দুর্ঘটনা রোধ করতেই রাজধানীতে সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েকশ সিসি ক্যামেরা বসালেও থামানো যাচ্ছে না চুরি, ছিনতাই।


ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দেওয়া তথ্য বলছে, ডিএমপির ৫০টি থানায় সিসি ক্যামেরা বসানো রয়েছে ৮৫৮টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবুজবাগ, ডেমরা এবং শেরেবাংলা নগর থানায় ৩২টি করে, পল্লবী থানায় ৩০টি ক্যামেরা আছে। আর সবচেয়ে কম রয়েছে মতিঝিল থানা এলাকায় ১০টি, খিলগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, শাহআলী, বাড্ডা, বিমানবন্দর থানায় সিসি ক্যামেরা রয়েছে ১১টি করে। ট্রাফিক বিভাগের ৮টি অঞ্চলে রয়েছে ৬৪টি সিসি ক্যামেরা।


এর মাঝেই গত বছর ডিএমপিতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ১৪৫টি, আর চুরির ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৩৪৩টি। ২০২০ সালে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে ১৭৬টি, চুরির ঘটনা ঘটে ১ হাজার ২১৭টি। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ছিনতাই হয়েছে ৭১টি। আর চুরির ঘটনা ঘটেছে ৮০৮টি। সেই ধারাবাহিকতা দেখা গেছে চলতি মাস পর্যন্তও।


গত বছরের ১৪ অক্টোবর সকালে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য বাসে তুলে দিতে স্ত্রীকে নিয়ে বিআরটিসি দ্বিতল বাসে উঠে খিলক্ষেত থেকে কুড়িল বিশ্বরোড যাচ্ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর মোগল। দুই হাতে দুই ব্যাগ নিয়ে বাসে ওঠার সময় ভিড়ের মধ্যে চুরি হয়ে যায় তার পকেটে থাকা মোবাইলটি। চুরি হওয়া মোবাইলটি পেতে খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ডে সিসি ক্যামেরার খোঁজ নিতে গেলেও কোনো সুফল মেলেনি। পরের দিন খিলক্ষেত থানায় জিডি করেন। তবে আজও পাননি তার মোবাইল।


গত ২৩ এপ্রিল রাজধানীর মিরপুর-১ পাইকপাড়া ছলিমউদ্দিন মার্কেট দিয়ে রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন সিকদার মোহাম্মদ রেজাউর রহমান রুমেল। রিকশার পেছনে হঠাৎ এক শিশু ওঠে। এর কয়েক মিনিট পরই দেখেন পাঞ্জারির পকেটে নিজের মোবাইলটি নেই। রুমেল ফিরে গিয়ে তাকে আর খুঁজেও পাননি। মিরপুর মডেল থানায় ডিজি করলেও এখনো পাননি তার মোবাইল।


এসব ঘটনায় হারানো মালামাল যেমন পাওয়া যায়নি তেমনি ধরা যায়নি অপরাধীকেও। সিসি ক্যামেরা বসানোর সুফল মেলেনি এসব ক্ষেত্রে।


সিসি ক্যামেরার সুফল মেলে না প্রায়ই


চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনার তদন্তের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ছিনতাইয়ের ঘটনার অধিকাংশই যেসব স্থানে সিসি ক্যামেরা নেই, সেসব স্থানে হয়ে থাকে। ফলে ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে যায়। মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোতে দেখা যায়, মোবাইল সিমের মাধ্যমে মোবাইল উদ্ধার করা যায়। এতে ছিনতাইকারী তখন ধরা পড়ে।


রাজধানীতে দীর্ঘদিন চালু থাকা যেসব সিসি ক্যামেরা কিছুটা বিকল হয়ে পড়েছে সেগুলো পরিবর্তন করে লাগানোর কথা রয়েছে। অকেজো ক্যামেরা পরিবর্তন করে নতুন করে ৬২৫টি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে।


এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল আসাদ জাগো নিউজকে বলেন, সিসি ক্যামেরা অপরাধীদের শনাক্ত করতে কাজে দেয়। এটা দিয়ে যে অপরাধ কমবে বিষয়টি তেমন নয়। তবে সিসি ক্যামেরা যদি আরও বসানো যায় এবং ছিনতাইকারী বা অপরাধীরা যদি ভাবে যে সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা আছে, তখন হয়তো অপরাধ আরও কমবে।


তিনি বলেন, অনেক জায়গায় সিসি ক্যামেরা না থাকায় অনেকে হয়তো সুযোগ নেয়। রাজধানীজুড়ে আরও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। আরও সিসি ক্যামেরা বসবে।


বর্তমানের বসানো ক্যামেরাগুলো অত্যাধুনিক। তিন ধরনের ক্যামেরা স্থাপন হচ্ছে- বুলেট ক্যামেরা, জুম ক্যামেরা এবং অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিডার (এএনপিআর) ক্যামেরা। রাজধানীতে প্রথমবারের মতো এমন উন্নতমানের শক্তিশালী ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।


তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যামেরা স্থাপন করলেই হবে না সেগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণও প্রয়োজন। এত টাকা ব্যয় করে স্থাপন করা ক্যামেরা রক্ষণাবেক্ষণ না হলে এটি কেবল অর্থের অপচয়।


এ নিয়ে অপরাধ বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান জাগো নিউজকে বলেন, যারা কাজ করার কথা তারা কাজ করেন না, জবাবদিহি নেই। আবার বাজেটের স্বল্পতা, সম্পদের স্বল্পতা রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে কোনো নীতি গ্রহণ করি না, পরিচালনা করি না। সিসি ক্যামেরা লাগালেই হবে না, সেটা দেখভাল করতে হবে।


‘এটা না হলে শুধু অর্থের অপচয় হয়। যেসব জায়গায় ছিনতাই হয়, সেখানে পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা, পুলিশের টহল ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তদারকি না করে নামমাত্র সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রাখলে সেটা কোনো কাজেই আসবে না।’

শেয়ার করুন