বরিশাল সিটি করপোরেশনের সব সড়ক বাতি এবং কয়েকটি পানি উত্তোলন পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। নগর ভবনের কাছে পাওনা প্রায় ৫০ কোটি টাকা বকেয়া বিল আদায়ে সোমবার রাতে এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তারা। ফলে তিন দিন ধরে অন্ধকারে বরিশাল নগরী।
রাত ৮টায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেলে ভূতুড়ে নগরে পরিণত হচ্ছে সিটি এলাকা। নগরে পানি সরবরাহে ৩৮টি পাম্পের মধ্যে ১২-১৫টির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযোগও উঠেছে ওজোপাডিকোর বিরুদ্ধে। ফলে ওইসব পাম্পের আওতায় থাকা বাসিন্দারা পানি সংকটে পড়েছেন। সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলছেন, এটি বরিশালবাসীর সঙ্গে পরিকল্পিত শত্রুতা। এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়েছেন বলেও জানান।
সোমবার রাত থেকে হঠাৎ করে একের পর এক বন্ধ হতে থাকে বরিশাল নগরের বিভিন্ন এলাকার সড়কবাতি। পরে জানা যায়, বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে ওজোপাডিকো। নগর ভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর আমাদের একটি চিঠি দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। নগর ভবনের কাছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ পাওনা ৪৯ কোটি ২০ লাখ টাকা ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয় চিঠিতে।
অন্যথায় সংযোগ বিচ্ছিন্নের সর্তকতা দেয় তারা। ১৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার তাদের ৭৮ লাখ টাকার একটি চেক দেই আমরা। পর্যায়ক্রমে বাকি বকেয়া পরিশোধের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর চেক ক্যাশ করে টাকা নেওয়ার পরপরই সড়ক বাতি এবং পানির পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা শুরু করে তারা। বারবার অনুরোধ করার পরও বন্ধ হয়নি এই কার্যক্রম। রাতে অন্ধকারে ঢেকে যায় নগরী। বেশকিছু এলাকায় খাবার পানির সংকটও দেখা দিয়েছে।
তবে ওজোপাডিকোর পরিচালনা ও সংরক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এটিএম তারিকুল ইসলাম বলেন, বকেয়া বিল আদায়ে সিটি করপোরেশনকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। ১৯ সেপ্টেম্বর কিছু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কিন্তু এখানে ভিন্ন ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছি। মোট ৫৮টি স্ট্রিটলাইনের মধ্যে ১৫টির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে পানি উত্তোলন কিংবা সরবরাহ পাম্পের কোনো সংযোগ কাটা হয়নি। অথচ পুরো নগরের স্ট্রিটলাইট বন্ধ। পরিকল্পিতভাবে জটিলতা সৃষ্টি করতে বাকি সংযোগগুলো নিজেরাই বিচ্ছিন্ন করেছে নগর ভবন। পানি সরবরাহ পাম্পের সংযোগও তারাই বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছে। বকেয়া আদায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বহুবার করা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের সদর দপ্তর এবং মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে জানানো হয়েছে।
নগর ভবনের বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, জনরোষের ভয়ে মিথ্যা বলছে ওজোপাডিকো। আমরা যেখানে বারবার তাদের অনুরোধ জানাচ্ছি পুনঃসংযোগ দিতে, সেখানে তারা বলছে আমরা নাকি নিজেরাই সড়কবাতির লাইন কেটেছি। যেখানে নগরবাসীর কাছে আমরা দায়বদ্ধ সেখানে আমরা কেন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যাব? টানা তিন দিন ধরে ঘুটঘুটে অন্ধকারে সড়কে চলাচল করছে নগরের কয়েক লাখ মানুষ।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, আমি হতবাক। সাড়ে ৬ লাখ নগরবাসীকে অন্ধকারে রাখার মতো ধ্বংসাত্মক কাজ ওজোপাডিকো করবে সেটা ধারণার বাইরে ছিল। ৭৮ লাখ টাকার চেক দেওয়ার সময় আমি নিজে তাদের অনুরোধ করেছিলাম। বলেছিলাম বাকি পাওনা আস্তে আস্তে দিয়ে দেব। তিনি বলেন, বিসিসি নিজের আয়ে চলে। কোনো অনুদান কিংবা উন্নয়ন প্রকল্পে এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ পাইনি। আমরা আমাদের আয় দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাই। তাছাড়া এই পাওনা তো শুধু আমার সময়ের নয়।
মেয়র আরও বলেন, আমি বিদ্যুৎমন্ত্রীকে ফোন দিয়েছিলাম। অনুরোধ করেছিলাম সময় দিতে। তিনি বলেন, বকেয়ার ২৫ কোটি টাকা দিতে। এই টাকা দিতে গেলে তো বরিশাল নগর অচল হয়ে পড়বে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারব না।
এদিকে সড়কবাতি বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন বরিশাল নগরের মানুষ। নবগ্রাম সড়কের বাসিন্দা দুলাল হাওলাদার বলেন, অন্ধকারে চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে অলিগলিগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। শ্রীনাথ চ্যাটার্জি লেনের বাসিন্দা নূরুল হক বলেন, পরিস্থিতি এমন যে এখন টর্চলাইট নিয়ে রাতে চলতে হয়। ২০২২ সালে এসে এটা নিশ্চয়ই মেনে নেওয়ার মতো নয়। অন্ধকার সড়কের পাশাপাশি খাবার পানির সংকটেও ভুগছেন নগরীর কিছু এলাকার মানুষ। ভূ-গর্ভ থেকে পানি উত্তোলন এবং সরবরাহ পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় এসব এলাকার বিসিসির সরবরাহ লাইনের পানি পাচ্ছে না মানুষ। নগর ভবনের পানি সরবরাহের গাড়িতে পানি পৌঁছে দিয়ে সমস্যা লাঘবের চেষ্টা হলেও তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না।