নাটোরের গুরুদাসপুরে এক যুবক রাজশাহীর বানেশ্বরের সস্তায় ডলার কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। দেড় লাখ টাকায় ডলার কিনে পেয়েছেন প্যাকেটে মোড়ানো ভিম সাবান।
শুক্রবার (০৪ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। প্রতারণার শিকার যুবক ইমান আলী (২৭) ওই এলাকার দেলবার হোসেনের ছেলে।
জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া কাটাসকুল গ্রামের লোকমান হেকিমের ছেলে পিরোজ কবিরের সঙ্গে চাকরির সুবাদে পরিচয় হয় ইমান আলীর। এরপর তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পিরোজ কবির বনপাড়া দিয়ার পাড়ার একজন ডিলারের আওতায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। প্রায় ৬ মাসের সম্পর্কে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোড়ালো হয়। পরে পিরোজ কবিরের পরামর্শে বৃহস্পতিবার রাজশাহীর বানেশ্বর এলাকায় ডলার কিনতে যান ইমান আলী।
বানেশ্বর এলাকায় এক মধ্য বয়সী নারী ও দুইজন পুরুষ তাদের বাজারে এক গলির মধ্যে নিয়ে যায়। পরে প্যাকেটভর্তি সৌদি আরবের রিয়াল দেখান পিরোজ কবির ও ইমান আলীকে। দাম চেয়েছিলেন সাড়ে তিন লাখ টাকা। এক পর্যায়ে দেড় লাখ টাকায় তাড়াহুড়া করে প্যাকেটে মোড়ানো ডলার ক্রয় করে বাসযোগে নাটোরে রওনা হন তারা।
মাঝ রাস্তায় এসে ডলার ঠিক আছে কি না দেখার জন্য প্যাকেট খুলতেই বেরিয়ে আসে ভিম সাবান। সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় বানেশ্বর এলাকায় গিয়ে তাদের নম্বরে ফোন দিলে নম্বর বন্ধ পান। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কাউকে না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন তারা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) বনপাড়া থেকে পিরোজ কবিরকে তুলে ইমানের বাড়িতে এনে ২২ ঘণ্টা আটকে রেখে দেড় লাখ টাকা ফেরত চাওয়া হয়। পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় দুই পরিবারের অভিভাবকদের সমঝোতার মাধ্যমে এক লাখ টাকায় ছেড়ে দেওয়া হয় পিরোজ কবিরকে।
প্রতারণার শিকার ইমান আলী বলেন, পিরোজ কবিরের সঙ্গে আমার ৬ মাসের সম্পর্ক। চাকরির সুবাদে তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাই তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। টাকার লোভে পড়ে এমন ফাঁদে পড়ে ভুল করেছি। সমঝোতার মাধ্যমে এক লাখ টাকায় পিরোজ কবিরকে ছেড়ে দিয়েছি। এমন ঘটনায় আইনের পরামর্শ বা সহযোগিতা কেন নিলেন না প্রশ্নে তিনি বলেন, যেহেতু ভুল করেছি। তাই চাইনি এটা থানা পুলিশ জানুক। নিজেদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেছি।
তবে পিরোজ কবির প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত নয় দাবি করে বলেন, প্রায় এক মাস আগে বনপাড়ায় একটি হোটেলে খাবার খাওয়ার সময় এক বৃদ্ধের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। সেই বৃদ্ধ আমাকে সৌদি আরবের একটি রিয়েল দিয়ে বলে, বাবা দেখ তো এটা এখানে ভাঙানো যাবে কি না। তখন আমি তাকে বলি, এখানে ডলার ভাঙানো যাই না। তারপর সে আমার কাছে ওই ডলার দিয়ে বলে তুমি রেখে দাও। কখনও ভাঙাতে পারলে আমাকে বিকাশ কইরো। এ কথা বলে তার নম্বর দিয়ে চলে যায়।
পরবর্তীতে আমি রাজশাহী গিয়ে ১২০০ টাকা দিয়ে ওই ডলার ভাঙিয়ে আমার খরচ রেখে তার বিকাশে পাঠিয়ে দেই। কিছু দিন পর একজন নারীর কাছে আরও অনেকগুলো ডলার আছে সেগুলো বিক্রি করবে বলে আমাকে জানায়। তারা মূর্খ মানুষ কোথায় কী করবে? এজন্য আমাকে বলেছে। আমি প্রলোভনে পরে টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করি। কিন্তু টাকা জোগাড় করতে না পারায় ইমান আলীর সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করি। পরে ইমান আলী দেড় লাখ টাকায় ওই ডলার কিনতে চায়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই বৃদ্ধ ব্যক্তির মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বানেশ্বর বাজারে যাই। তারা কয়েকটি সৌদি আরবের রিয়েল দেখায় এবং দাম চায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। দেড় লাখ টাকার বেশি দিয়ে আমরা ডলার কিনবো না বললে তারা কিছুক্ষণ ভেবে আমাদের কথায় রাজি হয়। কথা চলতে চলতে তাড়াহুড়ো করে আমাদের প্যাকেটে মোড়ানো ডলারের ব্যাগ দিয়ে দেড় লাখ টাকা নিয়ে চলে যায়। মাঝ রাস্তায় এসে প্যাকেট খুলে দেখি ভিম সাবান। প্যাকেটে কোনো ডলার নেই।
প্রতারক চক্রের সদস্য সন্দেহে ইমান আলী ও তার লোকজন আমাকে তার বাড়িতে আটকে রাখে। আমার বাড়িতে খবর দিলে শুক্রবার সন্ধ্যায় এক লাখ টাকায় রফা-দফা করে ছাড়া পাই। তবে প্রতারক চক্রের কারও নাম-পরিচয় আমি জানি না। তাদের মোবাইল নম্বরগুলোও ডিলিট করে দিয়েছি। লোভের কারণে ইমান আলী ও আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মতিন জানান, এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ এখনো কেউ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।