২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:৩৬:৫৯ অপরাহ্ন
উৎপাদনে ফিরছে ॥ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০১-২০২৩
উৎপাদনে ফিরছে ॥ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র

বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার মাত্র ২৩ দিনের মধ্যে কয়লা সংকটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। সংকটে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রেরও। তবে সরকারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৫ দিনের ব্যবধানে কাটছে সংকট। জানা গেছে, কয়েকদিনের মধ্যেই ইন্দোনেশিয়ার কয়লা এসে পৌঁছবে বাংলাদেশে এবং তা সরাসরি পৌঁছে যাবে দুই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে।

একই সঙ্গে দীর্ঘ আট মাস বন্ধ থাকার পর আবারও স্পট মার্কেট থেকে ক্রয় শুরু হয়েছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)। ইতোমধ্যে এলএনজিবাহী একটি জাহাজ বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে বলে জানা গেছে, যা ফেব্রুয়ারির ২০ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশ সীমানায় পৌঁছবে। আসন্ন গ্রীষ্মে গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকারের এই ত্বরিত পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। 
ডলার সংকটে নিতান্ত জরুরি পণ্য ছাড়া লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বা ঋণপত্র খুলছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তালিকায় পড়েছিল কয়লাও। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টিকে অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে চলতি মাসের ১৭ তারিখ মৌখিকভাবে কয়লা আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার নির্দেশনা দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎ বিভাগ কয়লা আমদানির তৎপরতা শুরু করে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, যেহেতু ইন্দোনেশিয়ায় কয়লাবোঝাই জাহাজ প্রস্তুতই ছিল, তাই এলসি খোলার নির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু করা হয়। আর এর সুফল মিলছে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই। এখনো কয়লাবোঝাই জাহাজ না পৌঁছলেও আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই পৌঁছতে পারে জানিয়ে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আকরাম উল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, এলসি খোলার অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তা ইন্দোনেশিয়াকে জানিয়ে দেই।

সঙ্গে সঙ্গেই কয়লাবোঝাই জাহাজ তারা বাংলাদেশের উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয়। একই কথা জানিয়েছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষও। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে, যে পরিমাণ কয়লার মজুত ছিল, তা দিয়ে উৎপাদন স্বাভাবিকই ছিল। এবার নতুন করে কয়লা আসলে আর কোনো জটিলতা থাকবে না বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল-রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র) থেকে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটের মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। এই ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়। 
অপরদিকে, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুই ইউনিটের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট (৬৬০ করে একটি ইউনিটে)। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সমান অংশীদার হলো সরকারের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও চীনের সিএমসি। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, ছয় মাসের বাকিতে ২০২০ সালের ২০ এপ্রিলে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার দাম পরিশোধের একটি চুক্তি করে চীনা সিএমসি ও বিসিপিসিএল। কেন্দ্রটিতে কয়লা সরবরাহ করছে পিটি বায়ার্নস।

পিটি বায়ার্নসকে নগদমূল্য দিয়ে দেয় পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫০ শতাংশের অংশীদার সিএমসি। আর সিএমসিকে ছয় মাস পর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বিসিপিসিএল কয়লার দাম পরিশোধ করে। ছয় মাসের বাকিতে এভাবেই কয়লা কিনে আসছিল পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু সম্প্রতি এলসি খুলতে না পারায় কিছুটা জটিলতা তৈরি হলেও এবার তা কাটবে বলে আশা করছেন তারা। 
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই, কারণ আমাদের মজুতও আছে। আরও কয়লা আসছে। তাই উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটবে না। 
পিডিবির তথ্যমতে, চলতি শীতে বিদ্যুতের গড় চাহিদা ৯ থেকে সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াটের মতো থাকলেও গ্রীষ্মে এই চাহিদা বেড়ে প্রায় ঘণ্টাপ্রতি গড়ে ১২ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। দেশে বর্তমানে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় চার হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে কয়লার অভাবে চালু আছে মাত্র এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, তেলভিত্তিক কেন্দ্র চালু আছে গড়ে প্রায় এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, ভারত থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট আমদানির কথা থাকলেও এখন গড়ে ৬৫০ মেগাওয়াটের মতো আমদানি হচ্ছে। এ ছাড়া গ্যাসে উৎপাদন হচ্ছে গড়ে চার হাজার ২০০ মেগাওয়াট। সামান্য পরিমাণ আসছে জলবিদ্যুৎ ও সৌরবিদ্যুৎ থেকে।
বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের আগস্ট থেকে স্পট মার্কেটে (খোলা বাজার) এলএনজি কেনা বন্ধ রাখে সরকার। কিন্তু চলমান সেচ মৌসুম, আসন্ন রমজান, গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বাড়তি চাহিদা মেটানো এবং শিল্প খাতে উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বাড়তি গ্যাস লাগবে। এই চাহিদা পূরণ করতে আবারও স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যে কারণে বাড়ানো হয় বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের মূল্যও।

জ্বালানি বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, আগামী মার্চের শুরু থেকেই দেশে জ্বালানি খাতে আবারও যোগ হবে স্পট মার্কেটের এলএনজি। কিন্তু এর আগেই অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষেই এলএনজি আসবে জানিয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জনকণ্ঠকে বলেন, যেহেতু এখন সেচ মৌসুম এবং তাপমাত্রাও পরিবর্তন হচ্ছে। গরম পড়তে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করছি, ফেব্রুয়ারির ২০ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে এলএনজিবাহী জাহাজ বাংলাদেশে এসে পৌঁছবে। 
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যের মূল্য আকাশছোঁয়া হতে থাকে গত বছরের শুরুতে। ফলে এই খাতে আমদানিতে সরকারের বাড়তে থাকে ব্যয়। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই খাতে ভর্তুকি কমাতে হবে। আর তাই বাড়তি দাম দিয়ে স্পট মার্কেট তথা খোলা বাজার থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে করে গ্যাস সংকটে বন্ধ করতে হয় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। এদিকে বিশ্ব বাজারে ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে তেলের বাজারও। ফলে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেও।

এতে করে বছরজুড়ে নানা ক্ষেত্রে সাশ্রয়সহ লোডশেডিং করতে হয়েছে সরকারকে। কিন্তু তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে লোডশেডিং কমলেও বাড়ানো হয় পাইকারি বিদ্যুতের দাম। পাইকারি দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবার বিতরণ কেন্দ্রগুলোও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ানো হয় খুচরা বিদ্যুতের দামও। এর সঙ্গে সমন্বয় এবং পুনরায় খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হয় শিল্প এবং বিদ্যুৎ খাতের গ্যাসের দামও। তবে শর্ত হিসেবে বলা হয়, উদ্যোক্তারা পাবেন নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ। আর স্পট মার্কেট থেকে পুনরায় এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত এরই প্রথম উদ্যোগ বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গণশুনানি করলেও গত ১২ জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে বাড়ানো হয় খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম। পাঁচ শতাংশ দাম বাড়িয়ে ইউনিট প্রতি ১৯ পয়সা করে বাড়ে দাম। যা চলতি মাস থেকে কার্যকর হবে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে যখন চলে কাটা-ছেঁড়া বিশ্লেষণ ঠিক তখনই মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়ানো গ্যাসের দামও। আবাসিক খাতে না বাড়লেও বিদ্যুৎ এবং শিল্প খাতে বাড়ানো হয় উল্লেখযোগ্য হারে। বিদ্যুতের মতোই সরকারের নির্বাহী আদেশে জ্বালানি বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম।

প্রজ্ঞাপনে ক্যাপটিভ পাওয়ারসহ ছয় খাতে দাম বাড়ানো হয় ১৪ শতাংশ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত দাম। সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ানো হয় ক্ষুদ্র শিল্পে। এরপরেই ১৫৪ শতাংশ দাম বেড়েছে মাঝারি শিল্পে। যা কার্যকর হবে ‘বিল মাস’ ফেব্রুয়ারি থেকে। তবে এত পরিমাণ দাম বাড়লেও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আবাসিক খাতেও। 
আবারও স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিস্তারিত বলতে গিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক বিশেষ করে জ্বালানি পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী সব জ্বালানির মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এ ছাড়া জ্বালানি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয়, যেমনÑ বিমা খরচ, ঝুঁকি ব্যয়, ব্যাংক সুদ, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকা দুর্বল হওয়ায় সামগ্রিকভাবে জ্বালানি খাতে ব্যয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে স্পট মার্কেট থেকে আমদানি বন্ধ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্পসহ সকল খাতে গ্যাস রেশনিং করা হচ্ছিল। কিন্তু আসন্ন রমজান বা গ্রীষ্মে আমাদের গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। সেই সময়টা আমাদের মোকাবিলা করতে হলে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আনতেই হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মার্চের শুরুতেই আবারও বর্তমান বাজার দর ২০/২২ ডলার যাই হোক, সেই দামেই আবারও আমদানি শুরু করব। আশা করি, আসন্ন গ্রীষ্মে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। 
কাতার এবং ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আনা এলএনজি আর দেশীয় গ্যাসের ওপর নির্ভর করেই চলছে বর্তমানে দেশের জ্বালানি খাত। আর তাই জ্বালানি সংকটে বিঘœ ঘটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এমনকি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিল্পোৎপাদনও। এমন অবস্থায় গত বছরের শেষ থেকেই নতুন উদ্যোমে দেশীয় কূপ খননের কাজ শুরু করে জ্বালানি বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় পাওয়া যায় কয়েকটি নতুন কূপের সন্ধানও। শুধু তাই নয়, গত বছর ব্রুনাইয়ের সুলতানের সফরকালে গ্যাস আমদানির লক্ষ্যে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তার ভিত্তিতে দেশটি থেকে দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।

একই সঙ্গে চাহিদা মেটাতে সৌদি আরব থেকেও দীর্ঘমেয়াদে স্বল্পমূল্যে গ্যাস আনার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। সব মিলিয়ে গ্যাসের বিকল্প বাজারের সন্ধানের পাশাপাশি দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে গেলেও এ সব দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। আপাতত সংকট মোকাবিলায় তাই স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার বিকল্প নেই জানিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানির বাজার যখন টালমাটাল, তখন চাহিদা থাকলেও চুক্তির বাইরে এলএনজি দিতে অস্বীকৃতি জানায় কাতার।

স্পট মার্কেটে চড়ামূল্যে ভর্তুকি দিয়ে গ্যাস ক্রয়ও ছিল বন্ধ। বিদ্যুৎ সংকট কাটাতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও চলে পুরোদমে। ফলে শিল্প, আবাসিক এমনকি বাণিজ্যিক খাতের গ্রাহকদের গ্যাস সংকটে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। সম্প্রতি গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানোরও কারণ এটাই যে, এলএনজি আবারও ক্রয় শুরু করব। আশা করছি, আগামী গ্রীষ্মে আমাদের আবার লোডশেডিংয়ে যেতে হবে না। 
গ্যাসের সংকট দেশীয় উৎস থেকে মেটাতে ২০২২-২০২৫ সময়কালের মধ্যে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা মোট ৪৬টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্ক ওভার কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে গ্যাজপ্রমের মাধ্যমে গত ১৯ আগস্ট ভোলা জেলার শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের টবগী-১ অনুসন্ধান কূপে প্রায় ৩৫০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত খননকাজ শুরু করে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৩৫২৪ মিটার গভীরতায় খনন কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

গত ৩ নভেম্বর এখানে ২৩৯ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায়। এর ঠিক সাতদিন পর গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটের বিয়ানীবাজারে পরিত্যক্ত কূপে নতুন গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার কথা জানায় বাপেক্স। এখান থেকেও দিনে অন্তত ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে জানান বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী। এই কূপের কাজ শেষ করার পরপরই সিলেটে আরও চারটি কূপে অনুসন্ধান কাজ শুরু করে বাপেক্স। এই কূপগুলো হলো কৈলাশটিলা-২, কৈলাশটিলা-৫, সিলেট-৭, রশিদপুর-৫। কিন্তু এখনো পরীক্ষণ পর্যায়ে রয়েছে সবই। তাই সংকট কাটাতে আপাতত স্পট মার্কেটের কেনা এলএনজির বিকল্প নেই বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। 

শেয়ার করুন