সরকারী কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সাবেক ও বর্তমান মিলে ৬ কর্মকর্তা তিন দিনের ভ্রমণে থাইল্যান্ড গিয়েছেন। সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আরডিএ’র কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জুন। বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা বা সমালোচনা না হয় সে জন্য ৬ কর্মকর্তা গোপনে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে থাইল্যান্ড গিয়েছেন। ৬ কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে আরডিএ অফিসসহ রাজশাহী জুড়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। তবে আরডিএ’র কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বিলাশিতা ছাড়া আর কিছুই নয় বলেও সচেতন মহল মনে করছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের অধিনে মোট ৮ জন কর্মকর্তা থাইল্যান্ড ভ্রমণে গিয়েছেন। এরমধ্যে আরডিএ’র রয়েছে ৬ জন ও মন্ত্রণালয়ের রয়েছেন দুইজন। তারমধ্যে আরডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যানও রয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারীর প্রথম দফায় একসাথে থাইল্যান্ড গিয়েছেন আরডিএ’র নগর পরিকল্পক আজমেরি আশরাফী, স্টেট অফিসার বদরুজ্জামান ও সাবেক চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেন। দ্বিতীয় দফায় তিনদিন পর গত ৮ ফেব্রুয়ারী থাইল্যান্ড গিয়েছেন আরডিএ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াত মোহাম্মদ রহমতল্লাহ, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিক, এসিস্ট্যান্ট টাউন প্ল্যানার রাহেনুল ইসলাম রনি। আরডিএ সূত্রমতে, মাস্টার প্ল্যান প্রজেক্টের অধিনেই তারা থাইল্যান্ড গিয়েছেন। তবে তারা আরডিএ’র খরচে গিয়েছেন নাকি মাস্টার প্ল্যান তৈরির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়ে গেছে সেটি জানা যায়নি।
জানা গেছে, এই ৬ কর্মকর্তার আরো আগে থাইল্যান্ড ভ্রমণ দেয়ার ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তারা যেতে পারেন নি। এছাড়াও সরকার কর্মকর্তাদের ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞাজারী করায় তাদের ভ্রমণ বাতিল হয়ে যায়। দুই মিলে তারা আগে না গিয়ে এখন থাইল্যান্ড গিয়েছেন। এছাড়াও নির্ধারিত সময়ে রাজশাহীর আগামীর ২৪ বছরের মাস্টার প্ল্যান প্রজেক্ট শেষ না হওয়ার কারণের তাদের বিদেশ ভ্রমণে কিছুটা জটিলতা ছিল। এরফলে সময় পিছিয়ে অনেকটা গোপনে এই ৬ কর্মকর্তা থাইল্যান্ড ভ্রমণে গিয়েছেন। কর্মচারিরা বলছে, মাস্টার প্ল্যান তৈরি জন্য তারা ভ্রমণ করতে পারতো, তাদের অনুমোতিও ছিল। বিদেশে ভ্রমণে গিয়ে বিভিন্নস্থান পরিদর্শন করে সেই আদলে রাজশাহীর উপর মাস্টার প্ল্যান তৈরি করার অভিজ্ঞতা অর্জন হতো। কিন্তু কর্মকর্তারা তা না করে এ প্রজেক্টের কাজ শেষ হওয়ার পর বিদেশ ভ্রমণে গেছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
কর্মচারিদের মধ্যে আলোচনা সমালোচনায় শোনা যায়, আগামী ২৪ বছরের জন্য রাজশাহীর উপর মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এই মাস্টার প্ল্যান তৈরিতে তিনটি প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে। এই তিন প্রতিষ্ঠান আরডিএ’র ৬ কর্মকর্তাকে বিদেশ ভ্রমণে নিয়ে গেছে। কারণ এই তিন প্রতিষ্ঠানকে মাস্টার প্ল্যান প্রজেক্টোর কাজ পাইয়ে দিয়েছে আরডিএ’র এই ৬ কর্মকর্তা। আবার শোনা যায়, আরডিএ’র অর্থায়নে তারা বিদেশ ভ্রমণে গেছেন। এই ৬ কর্মকর্তা এতোটাই গোপনীয়তা অবলম্বন করে থাইল্যান্ড গিয়েছেন যা আরডিএ’র অধিকাংশ কর্মচারি বলতে পারছেন না। গোপনে যাওয়ার কারণে কর্মচারিরা যে যার মত আলোচনা সমালোচনা করছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না যে তাদের আসলে কে বিদেশ ভ্রমণে নিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে আরডিএ’র চেয়ারম্যান জিয়াউল হকের সাথে কথা বলতে তার ব্যবহৃত মোবাইলে বারবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে, ২৪ বছরের রাজশাহীর উপর মাস্টার প্ল্যান তৈরি প্রজেক্টের ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি টাকা। তিনটি প্রতিষ্ঠান এ মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছেন। তবে একটি প্রজেক্টের অধিনে আরডিএ’র নগর পরিকল্পক আজমেরী আফসারীর স্বামী চাকরি করেন। আর এ কাজ পাইয়ে দিতে আরডিএ’র ৬ জন কর্মকর্তা সহযোগিতা করেছেন। যার কারণেই আরডিএ’র এই ৬কর্মকর্তা থাইল্যান্ড ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছেন বলেও শোনা যায়।