২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:২৮:০০ অপরাহ্ন
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়লা নিয়ে চুক্তি পর্যালোচনা হচ্ছে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০২-২০২৩
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়লা নিয়ে চুক্তি পর্যালোচনা হচ্ছে

চুক্তির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কয়লার দাম বেশি ধরেছে ভারতের আদানি গ্রুপ। ঝাড়খণ্ড রাজ্যে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার দাম বেশি হলে বিদ্যুৎ কিনতে বেশি খরচ হবে বাংলাদেশের। এ নিয়ে চলছে সমালোচনা। কয়লার দর নিয়ে আলোচনার জন্য আদানিকে চিঠিও দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এ পরিস্থিতিতেই দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়লা আমদানি, সরবরাহ, কয়লার দাম নির্ধারণের পদ্ধতি পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য বিদ্যুৎ সচিবের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির বৈঠক হতে পারে আজ।

পায়রা কেন্দ্রসহ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে পিডিবির চুক্তিতে ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর বিবেচনা করে দাম নির্ধারণের কথা বলা আছে। আদানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর নেই। তাই কয়লার দর বেশি দেখানোর সুযোগ পায় আদানি।

সূত্র জানায়, কয়লা আমদানির জন্য ভারতে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ডিমান্ড নোট ইস্যুর জন্য সম্প্রতি আদানি পিডিবিকে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে প্রতি টন কয়লার দর ৪০০ মার্কিন ডলার ধরা হয়েছে। পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, এই মানের কয়লার বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ২৫০ ডলারের বেশি নয়। পাওয়ার সেলের সাম্প্রতিক এক পর্যালোচনা প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে আদানির বিদ্যুতের দাম বেশি পড়ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল সাম্প্রতি আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেখতে যায়। এ সময় কয়লার দাম নিয়ে আলোচনা হয়। এর পর পিডিবি কয়লার দর পর্যালোচনা করার বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি আদানি পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ঝাড়খণ্ড) অনিল সারদানাকে চিঠি পাঠান পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়লার দাম আদানির কয়লার দামের তুলনায় কম। বাংলাদেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা সংগ্রহ করছে এবং ইন্দোনেশিয়ান কোল ইনডেক্সের ভিত্তিতে কয়লার দাম গণনা করছে। অন্যদিকে, আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) অনুসারে কয়লার উৎস যাই হোক না কেন, দর ইন্দোনেশিয়ান কোল ইনডেক্স (এইচবিএ) এবং গ্লোবাল কোল ইনডেক্স (জিসিএনডব্লিউ) থেকে প্রাপ্ত দামের গড় ভিত্তিতে গণনা করা হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনের সময় বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার কয়লার জন্য গ্লোবাল কোল ইনডেক্সের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে একই বিলিং মাসে বাংলাদেশের অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার দাম বেশি হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আলোচনার সময় আদানি কর্তৃপতক্ষও মত দেয়, পিপিএর কয়লার মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি সমন্বয় বা পরিবর্তন করে কয়লার দামের এই অসংগতি কমাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকায় গত ১২ জানুয়ারি আদানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌথ সমন্বয় কমিটির বৈঠকে পিডিবির কয়লার মূল্য নির্ধারণের বিষয়টিও উত্থাপিত হয়েছিল।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কয়লা দরের সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও সমাধানের জন্য আদানির একটি প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানায় পিডিবি। চলতি মাসে এ-সংক্রান্ত প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসার কথা।

চুক্তি পর্যালোচনায় কমিটি: আদানির কয়লা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মাঝে সরকার দেশের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তি পর্যালোচনায় ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- পিডিবি চেয়ারম্যান, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয়), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (প্রাইভেট জেনারেশন), সংশ্নিষ্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব (উন্নয়ন-৫)। কমিটির কাজ নির্ধারণ করা হয়েছে দেশের বিদ্যমান বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়লা সরবরাহ, ক্রয় চুক্তি ও কয়লার দর নির্ণয় পদ্ধতি পর্যালোচনা করে এ-সংক্রান্ত সুপারিশ করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা কমিটির সভাগুলোতে উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। এই কমিটির একটি সভা আজ হতে পারে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

শেয়ার করুন