২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৯:৫২:২৫ অপরাহ্ন
গোদাগাড়ীর মাদক ব্যবসায়ী বাবুর মাদক মামলা তদন্তে টালবাহানার অভিযোগ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০২-২০২৩
গোদাগাড়ীর মাদক ব্যবসায়ী বাবুর মাদক মামলা তদন্তে টালবাহানার অভিযোগ

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী সেতাবুর রহমান বাবুর বিরুদ্ধে হওয়া মাদক মামলার তদন্তে টালবাহানার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাবুর পকেট থেকে উদ্ধার করা ১০০ গ্রাম হেরোইনের কেমিক্যাল পরীক্ষার ফলাফলে মাদক শনাক্ত হলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সেটি জমা করছেন না। এমনকি দ্বিতীয়বার জব্দকৃত হেরোইনের কেমিক্যাল পরীক্ষায় দিয়ে নেগেটিভ ফলাফল করারও চেষ্টা করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। বাবুকে মামলা থেকে বাঁচাতে এই জোর তৎপরতা চলছে বলে জানা গেছে। মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এ কারণে মাদক মামলাটির চার্জশিট দিচ্ছে না তদন্ত কর্মকর্তা।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, গত ৩ জানুয়ারি বিকালে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি টিম গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউনিয়নের উজানপাড়া গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহর বাড়িতে অভিযান করেন। ওই সময় মাদক কেনা বেচারত অবস্থায় ডিবি পুলিশ সহড়াগাছি গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী সেতাবুর রহমান বাবু (৩৫), তার বডিগার্ড আলমগীর (৪০) ও বাড়ির মালিক আব্দুল্লাহকে (৪০) আটক করেন। এলাকার মানুষের উপস্থিতিতে আটক তিনজনকে তল্লাশি করা হয়।

ওই সময় সেতাবুর রহমান বাবুর প্যান্টের ডান পকেট থেকে ১০০ গ্রামে হেরোইনের একটি প্যাকেট উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থলে উদ্ধার মাদকদ্রব্য সিলগালা করে বাবু ও তার দুই সহযোগীকে গোদাগাড়ী মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়। পরে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকার বাদী হয়ে বাবুসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়। বর্তমানে বাবুর দুই সহযোগী আলমগীর ও আব্দুল্লাহ আদালতের মাধ্যমে জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় বসবাস করছে। তবে সেতাবুর রহমান বাবু রাজশাহী কারাগারে বন্দি আছেন। আদালত কয়েকবার তার জামিন নামঞ্জুর করেছেন।

এলাকার মানুষের অভিযোগে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ী বাবুর পকেট হতে উদ্ধার হওয়া হেরোইনের কেমিক্যাল পরীক্ষা ইতিমধ্যে রাজশাহী সিআইডির পরীক্ষাগারে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে, বাবুর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া হেরোইনের কেমিক্যাল পরীক্ষায় মাদকদ্রব্য বলে শনাক্ত হয়েছে। সিআইডির ল্যাব থেকে মাদক পরীক্ষার রিপোর্ট রাজশাহী জেলা ডিবিতে পাঠানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এই রিপোর্টের একটি কপি গোদাগাড়ী থানায় ও আরেকটি কপি আদালতে পাঠানোর কথা। কিন্তু ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক রুহুল আমিন তা না’করে চেপে রেখে দিয়েছেন। বাবুকে মাদক মামলা থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন পর্যায়ে জোর তদবির চলছে।

জানা গেছে, রাজশাহী জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা বাবুকে মাদক মামলা থেকে ছাড় দিতে রাজি হলে তদন্ত কর্মকর্তা দ্বিতীয়বার হেরোইনের নমুনা ল্যাবে পাঠিয়ে ফলাফল নেগেটিভ করাবেন। হেরোইন পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল আসলে বাবুকে সহজেই মাদক মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

এলাকার মানুষের অভিযোগে আরও জানা গেছে, সেতাবুর রহমান বাবু কয়েক বছর আগে ট্রলি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মাদক কারবারে জড়িয়ে বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হয়েছেন। মাটিকাটা ইউপির মেম্বার হয়েছেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কাজে নিয়মিত হস্তক্ষেপ করতেন। নিজে মাদক ব্যবসা করলেও বাবু প্রতিপক্ষকে বাড়িতে মাদক ফেলে দিয়ে ফাঁসাতেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা ডিবির পরিদর্শক রুহুল আমিন বলেন, কেমিক্যাল রিপোর্ট হয়েছে। কিন্তু সেটির ফলাফল কি হয়েছে-তদন্তের স্বার্থে-তা বলা যাবে না। তবে ওই রিপোর্ট এখনও থানায় বা আদালতে জমা দেওয়া হয়নি। পুলিশ প্রতিবেদনের সাথেই কেমিক্যাল রিপোর্টের ফলাফল সংযুক্ত করা হবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

শেয়ার করুন