সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী আগামী মে থেকে জুনের মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) নির্বাচন হবে। গুরুত্বপূর্ন এই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা আসার পর নড়ে চড়ে বসেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেই সাথে আলোচনা শুরু হয়েছে কারা প্রার্থী হতে পারেন রাজশাহীতে।
বিএনপি নির্বাচনে আসছে না, এমনটা ধরেই মাঠে কিছুটা সরব হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। তবে বিগত নির্বাচনগুলোতে যেভাবে অনেক আগে থেকে মাঠে কাজ করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের, এবার তেমনটা চোখে পড়ছে না। বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণায় ঢিলেভাব আওয়ামী লীগেও।
আধুনিক রাজশাহী নগরীর রুপকার হিসেবে খ্যাতি পাওয়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিকের বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বিকল্প দেখছে না দলটির নেতাকর্মীসহ নগরবাসী। তিনি আওয়ামী লীগের একক মেয়র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন। নির্বাচন ঘিরে তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা সমাবেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সিটি করপোরেশন তথা সাড়ে দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরছেন। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেয়ার আহবান জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতা।
এছাড়াও আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেন্দ্র করে গত ১৪ মার্চ মতবিনিময় করেছেন রাজশাহীর সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। সেখানে তারা আগামী সিটি নির্বাচনে মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। একই সঙ্গে সিটি নির্বাচন ও দলীয় প্রার্থী বিরুদ্ধে যে কোন ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এদিকে, গত ২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা রাজশাহী সফর করেন। বক্তব্য রাখেন রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠের জনসভায়। অনেকের ধারণা ছিল, ওই সমাবেশ থেকে আগামী সিটি নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীর ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। কিন্তু এমনটা হয়নি। ফলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ধারণা এবার বদল হতে পারে প্রার্থী।
তবে এ নিয়ে দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত থাকায় কোনো ঘোষণা আসেনি জনসভা থেকে। কারণ রাজশাহী সিটি করপোরেশনে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বিকল্প দেখছে না আওয়ামী লীগ।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘রাজশাহী সিটিতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের চেয়ে যোগ্য প্রার্থী হয় না। তার বিকল্প হিসেবে আমরা কাউকে ভাবছি না। রাজশাহীর উন্নয়নের সার্থে আরও পাঁচ বছর তার মেয়র থাকা প্রয়োজন।
আসাদ বলেন, কোন কারণে তিনি (লিটন) প্রার্থী না হলে আমি নির্বাচন করব। দল মনোনয়ন দিলেও করবো না দিলেও করবো বলেন আওয়ামী লীগের এই তরুণ রাজনীতিবিদ।
মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, সিটি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন প্রার্থী ধরেই আমরা কাজ করছি। প্রার্থী হিসেবে লিটনের বাইরে ভাবার কোন সুযোগ নেই।
যদিও মেয়র নাকি সংসদ নির্বাচন- এনিয়ে ভাবছেন না এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, ‘দলীয় প্রধান যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই হবে। নেত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন, আমাকে দিয়ে তিনি কী কাজ করাতে চান। তবে এখন মেয়র হিসেবে আমার কাজ নাগরিকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ধরে রাখা। আমি সেটি করছি।’
খায়রুজ্জামান লিটন আরও বলেন, ‘গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমি জয়ী হওয়ার পরে রাজশাহী নাগরীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে উন্নয়নের মাধ্যমে। এখনো তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান। এ প্রকল্পের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হলে রাজশাহী নগরী আরো নতুন রূপে রূপ লাভ করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী নগরীর প্রতি যে সুদৃষ্টি রেখেছেন, সেটি আগামীতে অব্যাহত থাকবে বলে আশা রাখি। আর সেটি হলে আরো নতুন যে কয়েক বড় প্রকল্প আমরা হাতে নিয়ে রেখেছি, সেগুলোও বাস্তবায়ন করা হবে। এসব দিক বিবেচনা করে রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ নগরবাসীও আমাকে আগামী নির্বাচনে আবারও মেয়র পদে অংশগ্রহণ করতে চাপ দিচ্ছেন। তবে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেভাবে আমি কাজ করব।’