খাদ্যদ্রব্য অবৈধ মজুদে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে ‘খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদসচিব মো. মাহবুব হোসেন। খাদ্যদ্রব্য নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারে পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এ আইনের মাধ্যমে দানাদার খাদ্যদ্রব্য (ধান, চাল, গম, আটা, ভুট্টা ইত্যাদি) নিয়ে নানা অপরাধ চিহ্নিত করে শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। খসড়া আইনে মোট ২০টি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা রয়েছে। ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল এ আইন নীতিগত অনুমোদন পেয়েছিল।
আইনে বলা হয়েছে, কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য থেকে খাদ্যদ্রব্যকে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করলে বা খাদ্যদ্রব্যের কোনো উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিবর্তন করে উৎপাদন বা বিপণন করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশ্রণ করে বিপণন করলে, খাদ্য অধিদপ্তরের ইস্যুকৃত লাইসেন্স ব্যতীত বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করাও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এসব অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
খসড়া আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি সরকার নির্ধারিত পরিমাণের বেশি খাদ্যদ্রব্য মজুদ করলে বা মজুদসংক্রান্ত সরকারের কোনো নির্দেশনা অমান্য করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি আর্থিক লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া খাদ্যদ্রব্য মজুদ করেছেন তাহলে অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পুরনো খাদ্যদ্রব্য পলিশিং বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য মিশ্রণ করে খাদ্যের গুণগত পরিবর্তন করলে বা অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি গুদামে খাদ্য সরবরাহ করলে তিনি দুই বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। আইনে খাদ্য অধিদপ্তরের সিল ছাড়া সরকারি গুদামের খাদ্যদ্রব্যের বস্তা বা ব্যাগ বিতরণ, স্থানান্তর, ক্রয় বা বিক্রি করলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে।
একই সঙ্গে খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন সম্পর্কিত কোনো মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ, প্রচার বা বিতরণ করলে এ অপরাধে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ ছাড়া সরকার নিযুক্ত ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, বিপণন, পরিবহন, সরবরাহ বা বিতরণ থেকে বিরত থাকলে বা কাউকে বিরত থাকতে বাধ্য করলে বা অসন্তোষ সৃষ্টি করলে এ অপরাধে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। কম্পানির মাধ্যমে এ আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সম্পৃক্ত থাকা প্রধান নির্বাহী পরিচালক, ব্যবস্থাপক, সচিব, অংশীদার, কর্মচারী এ অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উত্থাপিত ‘বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড আইন ২০২৩’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ডেইরি-সংক্রান্ত নানা কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে এই বোর্ড। দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী বাণিজ্যিক সব প্রতিষ্ঠান এই বোর্ডের আওতায় পরিচালিত হবে।
গতকালের মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ ও ইরাক সরকারের মধ্যে ভিসা ছাড়া এন্ট্রির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরের (এমওইউ) খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তি রয়েছে। ইরাকের সঙ্গে চুক্তি হলে এর সংখ্যা দাঁড়াবে ২৯। মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, এই চুক্তি হওয়ার পর কূটনৈতিক, অফিশিয়াল ও সার্ভিস পাসপোর্টের ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাওয়া যাবে।