২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:১৫:৩৪ পূর্বাহ্ন
‌‘কী লিখব পরীক্ষায়, সব প্রস্তুতি মাটি হয়ে গেছে’
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৪-২০২৩
‌‘কী লিখব পরীক্ষায়, সব প্রস্তুতি মাটি হয়ে গেছে’

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ। নীলফামারী সদর উপজেলার টুপামারী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষার্থীর যে সময় ব্যস্ত থাকার কথা পড়ার টেবিলে ঠিক সে সময় তারা পরীক্ষার প্রবেশপত্র না পেয়ে অবস্থান করেন বিদ্যালয়ের বারান্দায়, একসময় অবরোধ করেন সড়ক। পরে প্রবেশপত্র ও পরীক্ষা দেওয়ার আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তারা।


তবে সারাদিনের আন্দোলনের ফসল ঘরে তুললেও পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অভিভাবক। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভুলের খেসারত দিতে দিন-রাত না খেয়ে কেটেছে বিদ্যালয়ের বারান্দায়। কেউই নিতে পারেননি পরীক্ষার প্রস্তুতি।


পরীক্ষার প্রবেশপত্র না পাওয়ায় শনিবার (২৯ এপ্রিল) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্কুলের বারান্দায় অবস্থান করেন বিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষার্থী। রাত ১০টা দিকে নীলফামারী-রামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। পরে রাত ১১ টা ১০ মিনিটে নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন নাহারের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।



শিক্ষার্থী শাকিলা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন,  মাসুদ স্যারের কারণে আমাদের এতো ভোগান্তিতে তবুও তিনি একটাবার আমাদের খোঁজ খবর নেননি। বরং তিনি আমাদের ফোনটা পর্যন্ত ধরেননি। পরে ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। আমাদের এ রকম ভোগান্তিতে ফেলার কোনো মানে ছিল না। পরীক্ষার প্রস্তুতি একদম নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের সাথে যা করেছেন এ রকম যাতে আর কোনো শিক্ষার্থী ভাই-বোনের সঙ্গে না করেন সেজন্য মাসুদ স্যারের প্রতি অনুরোধ করছি। কী লিখব পরীক্ষায়? পরীক্ষার প্রস্তুতি সব মাটি হয়ে গেছে।


সুমন ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সারাদিন ঝাল-মুড়ি, চানাচুর খেয়ে দিনটা কেটেছে। স্যার-ম্যাডামরা একটাবারও খবর নিলেন না আমরা খেয়েছি কিনা। আমরা যদি তাদের সন্তান হতাম তাহলে কি তারা আমাদের সঙ্গে এ রকম ব্যবহার করতে পারতেন? সারাদিনে বসে থাকতে থাকতে মাথা ব্যথা, না খেয়ে থাকার কারণে পেটে ব্যথা শুরু হয়েছে। না জানি পরীক্ষায় কী হয়। আমি চিন্তাও করিনি এভাবে আন্দোলন করে প্রবেশপত্র নিতে হবে।


শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমরা তো আন্দোলন করে প্রবেশপত্র পেলাম। আমাদের পরবর্তী স্কুলের যে সব শিক্ষার্থী আছে তাদের সাথে যেন এমন ঘটনা না ঘটে।



স্থানীয় তৌফিক হাসান বলেন, এ রকম ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এটা স্কুলের প্রধানের দায়িত্বের অবহেলার কারণে হয়েছে। পরীক্ষার আগের দিন রাতে তাদের এমন হয়রানি করা ঠিক হয়নি।


অভিভাবক আলমগীর হোসেন বলেন, বাচ্চারা কিছু পড়তে পারল না। আল্লাহ ভালো জানে পরীক্ষায় কী লিখবে। প্রধান শিক্ষকের গাফিলতির কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েদের এমন অবস্থা।


বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোর্শেদা বেগম বলেন, প্রথম থেকে প্রধান শিক্ষককে বলেছিলাম বাচ্চাদের সমস্যা দ্রুত সমাধান করেন। যাতে বাচ্চারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। না হলে বাচ্চাদের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। পরবর্তীতে তিনি আমারও ফোন ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন। আমি সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে বাচ্চাদের খোঁজখবর নিচ্ছি কিন্তু তার কোনো সাড়া পাইনি।


সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন নাহার বলেন, আন্দোলনরত ১৫ শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। বিষয়টি জানার পর শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দেওয়া বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রবেশপত্রের জন্য সড়ক অবরোধ ও বিদ্যালয়ের বারান্দায় অবস্থান করছিল। তাদের বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছি। আজকে বোর্ডের সার্ভারও সমস্যা ছিল। এডমিটগুলো ডাউনলোড হচ্ছিল না। পরে ডাউনলোড হয়েছে আমরা সেগুলো বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।

শেয়ার করুন