০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:৩৮:০৩ অপরাহ্ন
মে দিবসে সকাল ৭টায় রিকশা নিয়ে বেরিয়েছেন শরিফুল
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৩
মে দিবসে সকাল ৭টায় রিকশা নিয়ে বেরিয়েছেন শরিফুল

শ্রমজীবী মানুষদের উপলক্ষ্য করে পালিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে (১ মে) সরকারি ছুটিকে ঘিরে আক্ষেপ রিকশাচালক শরিফুল ইসলামের। তিনি বলেন, সকাল ৭টায় বের হয়েছি, ৮টা পর্যন্ত রাস্তায় রিকশা নিয়ে বসে আছি কিন্তু এক টাকাও ভাড়া মারতে পারিনি। শুধু মে দিবস নয়, প্রতিটি বন্ধেই আমাদের কাজ-কাম কমে যায়। এমনকি দিনশেষে চাল-ডাল নিয়ে ঘরে ফেরাই কষ্টের হয়ে যায়।


সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় ঢাকা পোস্টের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।


শরিফুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক দিবসের শুধু নামই শুনি, এই দিবসের কোনো সুযোগ-সুবিধা কোনদিন আমরা পাই না। আমরা শ্রমজীবী মানুষ, দিন আনি দিন খাই। অসুস্থ হলে কেউ আমাদের খোঁজ খবরও নেয় না। পা চললে ঘরে খাবার আসে, আর অসুস্থ হলে হয় না খেয়ে থাকতে হয় আর নয় তো ধার-কর্জ করতে হয়। 




২০০৭ সাল থেকে ঢাকায় রিকশা চালান গাইবান্ধা থেকে আসা শরিফুল ইসলাম। থাকেন রাজধানীর কড়াইল বস্তি এলাকায়। দুই ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রীসহ চার জনের সংসার তাদের। রিকশা চালিয়ে দৈনিক পাঁচশো থেকে ছয়শো টাকা আয় করলেও দীর্ঘ ১৬ বছর রাজধানীতে থাকার কোনো অর্জন নেই তাদের। কোনরকম খেয়ে-পরেই চলে যায় শরিফুলের সংসার।


শরিফুল বলেন, চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি। যে কারণে দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকলেও সংসারের জন্য আলাদা কিছুই করতে পারিনি। প্রথমে ছিলাম একা, তারপর বিয়ে করলাম, আর এখন দুইটা ছেলেমেয়ে। তাদের নিয়ে খেয়ে-পরে কোনোরকম বেঁচে থাকতেই আমার ঘাম ছুটে যায়।


তিনি বলেন,দ্রব্যমূল্য বাড়লেও আমাদের রিকশা ভাড়া একটাকাও বাড়েনি। রাস্তায় এখন অনেক রিকশা, কিন্তু সে পরিমাণে যাত্রী নেই। এ হিসেবে আমাদের আরও আয়-রোজগার কমেছে। দিনে পাঁচশো টাকা ভাড়া মারলে দেড়শো টাকাই দিতে হয় গাড়ির জমা। বাকি টাকায় নিজের পকেট খরচ, বাজার-সদাই। কোনোরকম কষ্ট করেই জীবন চলে যাচ্ছে।  





গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে রাজধানীর বারিধারা এলাকায় রিকশা চালাচ্ছেন মো. সাইফুল ইসলাম নামে আরেক রিকশাওয়ালা। ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের কথা শুনেই মৃদু হাসলেন তিনি। আক্ষেপ করে বললেন, এইসব দিবসে আমাদের পেটে ভাত জুটাবে না। খেতে হলে রিকশাই চালাতে হবে।


তপ্ত রোদে বিশ্রাম নেওয়া হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোদ আর গরমে টানা রিকশা চালানো যায় না। এজন্য আধা ঘণ্টা রিকশক চালাই, তারপর আবার একটু বিশ্রাম নেই। কী করবো, রোদের কারণে তো আর ঘরে বসে থাকা যাবে না। খেতে হলে বাইরে বের হতেই হবে।


সাইফুল ইসলাম বলেন, রোদ-বৃষ্টিতে আমাদের শুধু শারিরীক কষ্টই নয়, লোকজনও রাস্তাঘাটে কম বের হয়। যে কারণে দিন শেষে আয়-রোজগারও কম হয়। সারা দিনে যে টাকা আয় করি, কোনরকম খেয়ে-পরে চলে যায়।


আজ ১ মে, বিশ্ব শ্রমিক দিবস, যা ‘মে দিবস’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পয়লা মে জাতীয় ছুটির দিন। আরও অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়। বাংলাদেশে এই দিনটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে। মে দিবসে সরকারি ছুটি থাকে। 

শেয়ার করুন