২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৬:৪৪:২৬ পূর্বাহ্ন
কয়লাভিত্তিক ছয় বিদ্যুৎকেন্দ্র: শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েও পাচ্ছে বিশেষ করছাড়
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৯-২০২৩
কয়লাভিত্তিক ছয় বিদ্যুৎকেন্দ্র: শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েও পাচ্ছে বিশেষ করছাড়

চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর শর্ত পূরণ করতে পারেনি। তারপরও বিশেষ করছাড় সুবিধা পেতে যাচ্ছে দেশি-বিদেশি ছয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। করছাড় নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও শেষ পর্যন্ত নানামুখী চাপ ও অসম চুক্তির কারণে ছয় প্রতিষ্ঠানকে এই সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।


নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসতে না পারা এই ছয় বিদ্যুৎকেন্দ্র হলো বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ প্রকল্প, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াটের এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট, কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের প্রকল্প, পটুয়াখালীতে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেডের (আরএনপিএল) ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র, পটুয়াখালীর পায়রায় রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) ও চীনের নরিনকো ইন্টারন্যাশনালের ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এবং মাতারবাড়ীতে ওরিয়ন গ্রুপের ৬৩৫ মেগাওয়াট প্রকল্প।


এনবিআরের জারি করা এসআরও অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করলে আয়ের ওপর ১৫ বছর করছাড় (বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ থেকে) পাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত বিদেশি ব্যক্তিরা আয়ের ওপর আগমনের তারিখ থেকে তিন বছর করছাড় পাবেন। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের সুদ, রয়্যালটি, বিভিন্ন ফি ও শেয়ার হস্তান্তরে মূলধনি মুনাফার ওপরও করছাড় পাবে কেন্দ্রগুলো। নিয়ম অনুযায়ী, প্রকল্পগুলোকে এখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।


এই এসআরও জারি করা হয়েছিল প্রাইভেট সেক্টর পাওয়ার জেনারেশন পলিসির অধীনে কয়লাভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। কিন্তু রামপাল ও মাতারবাড়ী সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র। তাই দাবি করা এসআরও সুবিধা এই দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কার্যকর নয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, করছাড়ের মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করা রামপাল সরকারি প্রকল্প। তারা এই সুবিধার আওতাধীন নয়। এত দিন তারা যে সুবিধা নিয়েছে, সেটাও ছিল ভুল। অন্যদিকে মাতারবাড়ী প্রকল্পে এখনো বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষরিত হয়নি। সে জন্য তাদেরও আগে পিপিএ স্বাক্ষর করতে হবে। এরপর পিপিএ দেখে সিদ্ধান্ত হবে।


বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে। এ ক্ষেত্রে এনবিআর সময় বৃদ্ধি করলে কীভাবে করবে, জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘একেক প্রতিষ্ঠান একেক ধরনের সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে। কেউ কেউ ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা চেয়েছে। তবে আমরা একসঙ্গে সব প্রতিষ্ঠানের জন্য এসআরও করে সময় বাড়াব না। কেস টু কেস এসআরও জারির মাধ্যমে সুবিধা প্রদান করা হবে।’ দ্রুত এই ‘বিশেষ করছাড়’ কার্যকর করতে চাপ রয়েছে বলে জানান তিনি।


এর আগে করছাড়ের সুবিধা বহাল রাখতে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময় দিতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সংস্থাটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও চাপ দিয়েছে।


 এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক সদস্য (আয়কর নীতি) ড. সৈয়দ আমিনুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো যদি এগুলোকে কর অব্যাহতি না দেওয়া হয়, তাহলে এগুলো প্রতিযোগিতামূলক হবে না। সুতরাং প্রতিযোগিতামূলক করতে হলে কর অব্যাহতি দিয়ে সমপর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। কর অব্যাহতি না দিলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না।


তবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উৎপাদনে আসতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের যদি কোনো গাফিলতি না থাকে, তাহলে নতুন করে করছাড়ের সময় বৃদ্ধি করা উচিত নয়।


আমাদের এমনিতেই বিদ্যুতের দাম বেশি। আর পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো কয়লা কেনার ব্যাপারে প্রচুর লাভ করছে। আসল দাম তো অনেক কম। যেভাবে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, সেভাবেই দেওয়া উচিত।’ 


শেয়ার করুন