০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০১:০৭:২৯ পূর্বাহ্ন
তেলের দামের পাগলা ঘোড়া ঠেকাতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৯-২০২৩
তেলের দামের পাগলা ঘোড়া ঠেকাতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র

সৌদি আরব, রাশিয়া ও তেল উৎপাদক দেশগুলোর জোট ওপেক ও ওপেক প্লাস চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে চলতি বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে জ্বালানি তেলের দাম। এরই মধ্যে আবার তেল রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। এই অবস্থায় বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, জ্বালানি তেলের দাম লাগামছাড়া হতে পারে। আর তাই তেলের দামের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র।


রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা তাস গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল করতে রাশিয়া সব ধরনের তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। তবে জ্বালানি তেলের রপ্তানির ওপর শুল্ক প্রতি টনে ২৫০ ডলার পর্যন্ত বাড়াতে পারে।


রাশিয়ার এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে ডিজেলের জোগান কমে যেতে পারে কিছুটা হলেও। অবশ্য এর আগে ইউরোপ রাশিয়া থেকে পরিশোধিত তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। সেই নিষেধাজ্ঞার ধকল কাটাতে রাশিয়া আফ্রিকাকে বেছে নেয়। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত আফ্রিকায় আগের বছরের চেয়ে ৫০ শতাংশ তেল বেশি রপ্তানি করেছে রাশিয়া।


এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে সৌদি আরব ও রাশিয়া তাদের জ্বালানি তেল উৎপাদন কম রাখার সিদ্ধান্তের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। দেশ দুটি মিলে আগের তুলনায় প্রতিদিন অন্তত ১৩ লাখ ব্যারেল কম জ্বালানি উৎপাদন করছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। চলতি বছরের এপ্রিলে জ্বালানি তেল উৎপাদক দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাসও উৎপাদন হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নেয়। কেবল তাই নয়, বিগত ৫২ সপ্তাহে মার্কিন রিগগুলোও জ্বালানি উৎপাদন কমিয়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। 

 

জ্বালানির উৎপাদন কমলেও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো জ্বালানি বুভুক্ষু দেশগুলোতে চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে কোভিড-পরবর্তী সময়ে এ দুটি দেশেই জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে। এ কারণও তেলের দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। এরই মধ্যে চীন দেশের অর্থনীতি চাঙা করতে জ্বালানি খাতে তারল্য বাড়িয়েছে। 


জ্বালানি উৎপাদক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক এর আগে পূর্বাভাস দিয়েছিল ২০২৩ ও ২০২৪ সালে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়বে। সংগঠনটির অনুমান ছিল, ২০২৪ সালে প্রতিদিন তেলের চাহিদা বাড়বে ২২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল। ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় এই প্রবৃদ্ধি ছিল প্রতিদিন ২৪ লাখ ৪০ ব্যারেল। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ) জানিয়েছে, ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত ওপেক প্লাস যদি জ্বালানি উৎপাদন কম রাখে, তবে তা চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি তৈরি করবে। সংস্থাটি বলছে, আগামী বছরও চাহিদা বাড়বে। 


এই চাহিদা বাড়ার প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক ও মার্কিন তেলের বাজারে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের বাজারে ব্যারেলপ্রতি দাম ৯০ ডলার ছাড়িয়েছে। শুক্রবার ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৯০ দশমিক ৮০ ডলার। বাজার বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়াতে পারে। এরই মধ্যে গতকাল শুক্রবার ব্রেন্ট পর্যন্ত জ্বালানির দাম প্রতি ব্যারেলে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ দশমিক ৩৫ ডলার, যা এ বছরের সর্বোচ্চ। 


দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশঙ্কা করছে, তেলের দাম বাড়তে থাকলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। এই আশঙ্কা থেকে তারা এরই মধ্যে সুদহার বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম যত বাড়বে, বিশ্ব অর্থনীতি ততটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে পরিবহন—সবকিছুরই ব্যয় বাড়বে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বাড়বে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। 


এই অবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম পাগলা ঘোড়ার মতো বাড়ার বিষয়টি মোকাবিলা করতে উৎপাদন বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহে দেশটি আরও ৯টি তেলকূপ খননকারী রিগ সক্রিয় করেছে। মার্কিন জ্বালানি প্রতিষ্ঠান বেকার হিউসেস জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের মোট তেলকূপ খননকারী রিগ কার্যকর ছিল ৬৪১টি। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে মোট দুটি তেল উত্তোলনকারী রিগ বাড়িয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় তেল উত্তোলনকারী সক্রিয় রিগের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১৫। 


রিগ বাড়ানোর ফল পেতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে চলতি সপ্তাহে দেশটির তেল উৎপাদন দৈনিক ৮০ লাখ ব্যারেল থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ২৯ লাখ ব্যারেলে। ২০১৯ সালের পর এটিই দেশটির সর্বোচ্চ উৎপাদন। এর আগে ২০২২ সালেও দেশটি ৮০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উৎপাদন করেছে। 


শেয়ার করুন