কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলো। এবার দুয়ার খুলছে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের। চট্টগ্রাম মহানগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এই উড়াল সড়ক শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রাপথকে সুগম করবে। আগামী নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। তবে শুরুতে এটি চালু হবে র্যাম্প ছাড়াই।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর নিয়ে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামকে নিয়ে বর্তমান সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কর্মকা- পুরো দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক কর্মকা-ের জন্য বড় ধরনের ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে চট্টগ্রামকে কার্যকর একটি বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে, তার বাস্তবায়ন ঘটতে যাচ্ছে। টানেলের পর দেশের সক্ষমতা ও উন্নয়নের পালকে যুক্ত হওয়া এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন আমূল বদলে দেবে নগরীর অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা।
উড়াল সড়কটি পুরোপুরিভাবে চালু হলে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট। ফলে নগরীর ব্যস্ততম সড়কে কমবে যানজট। বর্তমানে দেওয়ানহাট থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত চলছে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের শেষ সময়ের কাজ। শীঘ্রই এ উড়াল সড়ক উদ্বোধন করা হবে। তবে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ১৪টি র্যাম্প নির্মাণ করা হবে এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর।
২০১৭ সালে একনেকে ‘চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ নামে প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। ২০১৮ সালে এর কাজ শুরু হয়। তবে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করা হলে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পায়। বাস্তবায়নের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।
১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারিক বিল্ডিং-আগ্রাবাদ চৌমুহনী- দেওয়ানহাট-টাইগারপাস ও লালখান বাজার হয়ে মিলবে ওয়াসার মোড়ে। গত ২৪ আগস্ট চউকের বোর্ড সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির নাম প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সিটি মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এ প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে টানেল দিয়ে আসা দক্ষিণ চট্টগ্রামের যানবাহন দ্রুত নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে যানজট এড়িয়ে। বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়ের সকল পিলার স্থাপনের কাজ শেষ। বিমানবন্দর থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত অংশে চলছে পিচ ঢালাইয়ের কাজ, কোনো অংশে চলছে কার্পেটিং। এছাড়া সল্টগোলা থেকে বারিক বিল্ডিং অংশ পর্যন্ত নির্মাণ কাজও সম্পন্ন হয়েছে।
সোমবার চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জনকণ্ঠকে জানান, আগামী নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বন্দর নগরীর প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করা হতে পারে। যতটুকু জানা গেছে, ১১ কিংবা ১২ নভেম্বর উদ্বোধন হতে পারে। একইসঙ্গে তিনি জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৮৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে শেষ পর্যায়ের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।