২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৪:১৯:২৭ অপরাহ্ন
ওপরে উঠতে বাংলাদেশকে হোম অ্যাডভেন্টেজ নিতে হবে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১২-২০২৩
ওপরে উঠতে বাংলাদেশকে হোম অ্যাডভেন্টেজ নিতে হবে

নিউজিল্যান্ড-সিরিজে সিলেট টেস্টের উইকেট নিয়ে যতটা প্রশংসা হয়েছে, ততটাই সমালোচিত মিরপুরের উইকেট। নিজেদের ফাঁদে পড়ে টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ। এ ধরনের উইকেটে সবচেয়ে ভুক্তভোগী ব্যাটাররা। যত সমালোচনাই হোক, দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর মতো মুমিনুল হকও দেশে টেস্ট জিততে এ ধরনের উইকেটেরই পক্ষে। মুমিনুলের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস। 


প্রশ্ন: সামনে আপনার কী নিয়ে ব্যস্ততা? বিসিএল লংগার ভার্সন খেলছেন? 

মুমিনুল হক: লংগার ভার্সন খেলব না। শুধু ওয়ানডে খেলব। এরপর এ বছর আর কিছু নেই। আগামী মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ। 


প্রশ্ন: এই ব্যস্ত ক্রিকেট মৌসুমে আপনার বিরতি। 

মুমিনুল: একটু কষ্টকর লাগে সত্যি বলতে। এবার সত্যি আমার ফিরতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তবে আগামী বছর অনেক টেস্ট ম্যাচ আছে। সম্ভবত ৮–১০ টা। 


প্রশ্ন: আবারও আলোচনায় মিরপুর টেস্টের উইকেট। অধিনায়ক শান্ত বলেছেন, উন্নতি করতে আসিনি, জিততে এসেছি। আপনিও কি তাই মনে করেন? 

মুমিনুল: আমাদের মতো দলের অনেক সীমাবদ্ধতা। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমাদের জিততে হলে এ ধরনের উইকেট তৈরি করতে হয়। ব্যাটারদের জন্য এটা কষ্টকর। তবে ঘরের মাঠে টেস্ট জিততে হলে এ ছাড়া খুব বেশি উপায় নেই। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা। দলে চার–পাঁচজন ব্যাটারের গড় ৫০-৬০, দলের সব বোলার ওয়ার্ল্ড ক্লাস—এসবে আমাদের ঘাটতি আছে। কিন্তু আপনাকে জিততে হবে। কী করবেন? তখন এই অ্যাডভান্টেজটা কাজে লাগাতে হবে। এতে কখনো কখনো সফল হব, কখনো কখনো হব না। 


প্রশ্ন: কিন্তু ব্যাটার হিসেবে আপনারই তো এ ধরনের উইকেটে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হওয়ার কথা। অ্যাওয়ে কন্ডিশন বেশির ভাগ সময়েই চ্যালেঞ্জিং থাকে। নিজেদের চেনা কন্ডিশনেও যদি সংগ্রাম করতে হয়, তাহলে ব্যাটাররা রান করবেন কোথায়? সিলেটের উইকেট যেমন অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। সেখানেও স্পিনাররা ভালো করেছেন। 

মুমিনুল: হ্যাঁ, সিলেটের উইকেট অনেক ভালো হয়েছে। স্পিনাররা ভালো করেছে। পেসাররা ভালো বাউন্স পেয়েছে। অসম বাউন্স ছিল না। 


প্রশ্ন: বাংলাদেশকে আসলে কোন ধরনের উইকেটকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত? 

মুমিনুল: দুটোই। যদি নিজের সীমাবদ্ধতার মধ্যে দেশের মাঠে জিততে চান, এভাবেই জিততে হবে। আর বিদেশে জিততে হলে খেলায় আরও উন্নতি করতে হবে। যেখানেই খেলেন, ব্যাটার হিসেবে সব জায়গায় রান করতে হবে। 


প্রশ্ন: বাংলাদেশ নিজেদের ফাঁদে পড়ে হাঁসফাঁস করেছে, মিরপুর টেস্টের স্পিন-চ্যালেঞ্জ উতরে না যেতে পারার ব্যাখ্যা কী? 

মুমিনুল: প্রথম ইনিংসে রান একটু কম হয়ে গেছে। ২২০–২৩০ রানের উইকেট ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ২০০ হলেই ফল অন্যরকম হতে পারত। ওই স্কোর নিয়েও বোলাররা লড়াই করেছে। এসব উইকেটে খেললে অনেক ধৈর্য আর বুঝেশুনে এগোতে হয়। ছোট ভুলেই অনেক খেসারত দিতে হয়। মিনিটে মিনিটে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ফ্ল্যাট বা ভালো উইকেটে একটা ভুল সিদ্ধান্ত হলেও পার পাওয়া যায়। এ ধরনের উইকেটে তা না। সেকেন্ডের ভগ্নাংশে ভুল সিদ্ধান্তের অনেক বড় খেসারত দিতে হয়। 


প্রশ্ন: টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই চক্রের শুরু জয় দিয়ে। সামনের টেস্ট সিরিজটাও হোমে। প্রথম চারটি টেস্টে ভালো পয়েন্ট নেওয়ার সুযোগ। এবার তলানি থেকে কি একটু ওপরে ওঠার সুযোগ, তাই না? 

মুমিনুল: এটা একটু ভালো হয়েছে যে আমরা প্রথম চারটা টেস্ট খেলছি দেশের মাঠে। আর ওপরে উঠতে হলে হোম অ্যাডভান্টেজ নিয়ে ম্যাচ জিততে হবে। অ্যাডভান্টেজ নিতে গেলে এমন কন্ডিশন থাকবে। সেটি মেনে নিয়ে ভালো খেলতে হবে। কষ্ট করে রান করতে হবে। ওপরে উঠতে হলে দেশে পয়েন্ট নিতে হবে। বিদেশে গিয়ে অন্তত হারা যাবে না, ড্র করতে হবে। বেশির ভাগ দল বিদেশে হেরে পয়েন্ট খোয়ায়। এখন আপনি যদি দেশেও হারেন...যদি ভাবেন আপনার ব্যাটাররা রান করতে পাবে না, এ চিন্তা করলে দলের ফল হবে না। ব্যাটারদের কথা চিন্তা করলে নিজেদের মাইলফলক হয়তো হবে। কিন্তু ম্যাচ জিততে পারবেন না। 


প্রশ্ন: অধিনায়ক শান্তকে নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? 

মুমিনুল: একজন খেলোয়াড়কে মূল্যায়ন করতে তার অন্তত ২০ ইনিংস দেখতে হয়। আর অধিনায়ককে বিচার করতে হয় কঠিন পরিস্থিতি বা ফল খারাপ হলে কীভাবে সামলায়, এ সব দেখে। এখনো পর্যন্ত শান্তকে বলব, ভালো অধিনায়কত্ব করছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া, খেলোয়াড়দের ভালোভাবে গাইড করে, সতীর্থদের কথা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। কারও পরামর্শ নেওয়া তার ব্যাপার। তবে আমাদের কাছে এসে শোনে, মুশফিক ভাই বা আমার কাছে শোনে। কোথাও আটকে গেলে আমরাও এগিয়ে যাই। 


প্রশ্ন: শাহাদত হোসেন দিপু এবার এলেন। জাকির-জয় তো গত বছর থেকে টেস্ট খেলছেন। তাঁদের সম্ভাবনা কেমন দেখছেন? 

মুমিনুল: ওয়ার্ল্ড ক্লাস প্লেয়ার হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদি তাদের সাপোর্ট করা হয়। আমাদের পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো সবচেয়ে বড় বাধা। এটা যদি তারা মানিয়ে নিতে পারে কিংবা উতরে যেতে পারে, তাহলে হতে পারবে। শান্ত যেমন একটা সময়ে অনেক চাপে ছিল। সে মানিয়ে নিতে পেরেছে বলে এখন ভালো খেলছে। ওরাও যদি মানিয়ে নিতে পারে, অনেক দিন সার্ভিস দিতে পারবে। লাল বলের প্রতি ওদের আলাদা টান আছে, দরদ আছে। এটা বলে আবার তাদের টেস্ট বিশেষজ্ঞ বানিয়ে দেওয়া যাবে না! আমাদের দেশে এই একটা সমস্যা, লাল বলে আগ্রহী দেখলেই টেস্ট বিশেষজ্ঞ বলা হয়।


শেয়ার করুন