বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর চলমান হরতাল-অবরোধকে কেন্দ্র করে নাশকতা এড়াতে রাতে চলাচলকারী আটটি ট্রেন স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি ট্রেনের যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। শুক্রবার কমলাপুর রেলস্টেশনে ঢাকা রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার এ তথ্য জানান।
এক জোড়া ট্রেন একটি গন্তব্যে যাওয়া-আসা করে। সে হিসাবে চার জোড়া ট্রেনের চলাচল স্থগিত, অর্থাৎ আটটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। আর দুটি ট্রেনের যাতায়াতের পথ সীমিত করা হয়েছে, যেখানে বর্তমানে সাড়ে তিন শতাধিক যাত্রীবাহী ট্রেন রয়েছে।
চলাচল স্থগিত করা ট্রেনগুলো হলো—পার্বতীপুর-রাজশাহী রুটের উত্তরা এক্সপ্রেসের দুটি ট্রেন; ঈশ্বরদী-রাজশাহী পথে দুটি লোকাল ট্রেন; ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে দুটি কমিউটার ট্রেন এবং ময়মনসিংহ-জামালপুরের ভুয়াপুর রুটে দুটি লোকাল ট্রেন। এ ছাড়া চলাচল সীমিত করা হয়েছে ঢাকা-জামালপুর রুটের আন্তনগর যমুনা এক্সপ্রেসের দুটি ট্রেনের।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, রাতে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে এমনিতেই যাত্রী কিছুটা কম হয়। আবার কিছু পথ খুব নির্জন হওয়ায় পাহারা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। তা ছাড়া নাশকতার আশঙ্কায় প্রায় প্রতিটি পথে যাত্রীবাহী ট্রেনের আগে পর্যবেক্ষণের জন্য পাইলট ট্রেন চালানো হয়। এতে ইঞ্জিনের সংকটও তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চার জোড়া ট্রেনের যাত্রা স্থগিত এবং এক জোড়া ট্রেনের যাত্রা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার ঢাকা রেলস্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, ‘রাতের বেলা যে ট্রেনগুলো চলাচল করে এবং যেসব রুটে ঝুঁকিপূর্ণ স্পট বেশি, সেই ট্রেনগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রাজশাহী থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত চলাচলরত মেইল ট্রেন উত্তরা এক্সপ্রেস এবং ঈশ্বরদী থেকে রহনপুর পর্যন্ত কমিউটার ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে।’ একই সঙ্গে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের নারায়ণগঞ্জ কমিউটারের (১৬) শেষ ট্রিপ, ময়মনসিংহ-ভুয়াপুর রুটে চলাচলকারী লোকাল ট্রেন বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা-তারাকান্দি রুটে চলাচলকারী আন্তনগর ট্রেন যমুনা এক্সপ্রেসের যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। আগে এটি ঢাকা থেকে ছেড়ে তারাকান্দি পর্যন্ত গেলেও এখন জামালপুর পর্যন্ত চলবে। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকেই এটির যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
রেলওয়ে থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, পার্বতীপুর-রাজশাহী পথে চলাচলকারী আন্তনগর ট্রেন উত্তরা এক্সপ্রেস নাশকতার আশঙ্কায় গত বৃহস্পতিবার থেকে স্থগিত করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলে রাজশাহী ও ঈশ্বরদীর মধ্যে চলাচলকারী একটি লোকাল ট্রেন ১৪ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে।
রেলের পূর্বাঞ্চলের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে চলাচল করে ১৬ জোড়া কমিউটার ট্রেন। রাত ৯টার পর চলাচলকারী এক জোড়া কমিউটার ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সারা দিন যাত্রী হলেও রাতে এই পথে তেমন যাত্রী পাওয়া যায় না বলে জানাচ্ছে রেলওয়ে। ময়মনসিংহ থেকে জামালপুরের ভুয়াপুর পর্যন্ত একটি লোকাল ট্রেন দিনে দুবার আসা-যাওয়া করে। এটিও স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা–সিলেট সুরমা মেইলসহ রাতে চলাচলকারী আরও কিছু ট্রেনের চলাচল স্থগিত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে সূত্র। ঢাকা থেকে নোয়াখালীর পথে চলাচলকারী ঢাকা মেইলও স্থগিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
রেলওয়ের হিসাবে, গত ১৬ নভেম্বর থেকে হরতাল-অবরোধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চারটি ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রেললাইন কেটে ফেলার একটি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার রাজধানীতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মা, শিশুসন্তানসহ চারজন প্রাণ হারান। এ ছাড়া গত ১৬ নভেম্বর টাঙ্গাইলে কমিউটার ট্রেনে, ১৯ নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে যমুনা এক্সপ্রেসে এবং ২২ নভেম্বর সিলেটে উপবন এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে গত ১৩ ডিসেম্বর ২০ ফুট রেললাইন কেটে ফেলা হয়। এতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছিল। এ ঘটনায় একজন যাত্রী নিহত এবং ৫০ জন আহত হন। শুক্রবার কুড়িগ্রামের রাজারহাটে রংপুর-কুড়িগ্রাম রেলপথের কিছু ‘হুক বোল্ট’ খুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।