প্রথমার্ধেই ব্যবধান কমিয়ে লড়াই জমিয়ে তুলল নাপোলি। কিন্তু শুরুতে তিন মিনিটের মধ্যেই দুই গোল করে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। বিরতির পর কাতালান দলটির আক্রমণের ঝড়ের সামনে একের পর এক দারুণ সব সেভ করলেন নাপোলি গোলরক্ষক। শেষ দিকে সব অনিশ্চয়তার ইতি টেনে দিলেন রবের্ত লেভানদোভস্কি। ঘরের মাঠে জিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠল শাভি এর্নান্দেসের দল।
অলিম্পিক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে ৩-১ গোলে জিতে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ গোলের অগ্রগামিতায় শেষ আটে পা রাখল স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নররা।
ফেরমিন লোপেস ও জোয়াও কানসেলোর গোলে স্বাগতিকরা এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান কমান আমির রাহমানি। নির্ধারিত সময়ের সাত মিনিট বাকি থাকতে দুই গোলের লিড পুনরুদ্ধার করেন লেভানদোভস্কি। প্রথম লেগে দলের একমাত্র গোলটি করেছিলেন এই পোলিশ তারকা।
২০২০ সালের পর প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে উঠল প্রতিযোগিতাটির পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা।
পুরো ম্যাচে গোলের জন্য ২৪টি শট নিয়ে ১০টি লক্ষ্যে রাখে বার্সেলোনা। নাপোলির ১৪ শটের ৪টি লক্ষ্যে ছিল।
চতুর্থ মিনিটে প্রথম ভালো সুযোগ পায় নাপোলি। তবে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের চাপে গোলরক্ষক বরাবর শট করেন প্রথম লেগে গোল করা ভিক্টর ওসিমেন।
ত্রয়োদশ মিনিটে সুযোগ পায় বার্সেলোনা। নিজেদের অর্ধ থেকে ডিফেন্ডার পাউ কুবারসির উঁচু করে বাড়ানো বল ধরে এগিয়ে যান লোপেস। তবে সঙ্গে লেগে থাকা প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের বাধায় ঠিকমতো শট নিতে পারেননি তিনি, বল উড়ে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।
পঞ্চদশ মিনিটে লোপেসই এগিয়ে নেন দলকে। বক্সের ভেতর বাঁ দিক থেকে রাফিনিয়ার কাটব্যাকে পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে ডান পায়ের নিচু শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ২০ বছর বয়সি স্প্যানিশ মিডফিল্ডার।
সেই রেশ থাকতেই সপ্তদশ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে স্বাগতিকরা। সতীর্থের পাস ধরে বক্সের ভেতর একজনকে কাটিয়ে রাফিনিয়ার নেওয়া শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল ফাঁকা জালে পাঠাতে ভুল করেননি পর্তুগিজ ডিফেন্ডার কানসেলো।
৩০তম মিনিটে ব্যবধান কমায় নাপোলি। বাঁ দিক থেকে মাত্তেও পলিতানোর কাটব্যাকে প্রথম স্পর্শে বাঁ পায়ের শটে গোলটি করেন রাহমানি।
চার মিনিট পর দুর্দান্ত সেভে দলকে এগিয়ে রাখেন মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন। নাপোলি অধিনায়ক জিওভানি দি লরেন্সোর জোরাল হেডে শূন্য লাফিয়ে এক হাতে বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠান জার্মান গোলরক্ষক।
৫৫তম মিনিটে রাফিনিয়ার শট ঠেকিয়ে দেন সফরকারী গোলরক্ষক আলেক্স মেরেত। ৬৮তম মিনিটে এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের ফ্রি-কিক ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন তিনি।
ওই কর্নার থেকে লেভানদোভস্কির হেড গোলরক্ষক ঠেকানোর পর কাছ থেকে ইয়ামাল জালে বল পাঠালেও অফসাইডের কারণে গোল মেলেনি। ৭৩তম মিনিটে ইলকাই গিনদোয়ানের শট ফিরিয়ে দেন মেরেত।
৮০তম মিনিটে সমতা টানার সুবর্ণ সুযোগ হারান ইয়েসপের লিন্ডস্ট্রম। সতীর্থের ক্রস বক্সে পেয়ে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা অরক্ষিত ডাচ মিডফিল্ডার।
তিন মিনিট পর স্কোরলাইন ৩-১ করে ফেলেন লেভানদোভস্কি। সের্হি রবের্তো বক্সের বাইরে গিনদোয়ানকে পাস দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন। ফিরতি বল পেয়ে তিনি পাস দেন ফাঁকায় থাকা লেভানদোভস্কিকে। ফাঁকা জালে বল পাঠান সাবেক বায়ার্ন মিউনিখ ফরোয়ার্ড।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নকআউট পর্বে ১৩ ম্যাচে লেভানদোভস্কির গোল হলো ১৩টি।
গত দুই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল বার্সেলোনা। চলতি মৌসুমে ইউরোপ সেরার এই প্রতিযোগিতাতেই কেবল শিরোপা জয়ের বাস্তব সম্ভাবনা আছে তাদের।
স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে রেয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে হারের পর কোপা দেল রের কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় শাভির দল। আর লা লিগায় শীর্ষে থাকা রেয়ালের চেয়ে ৮ পয়েন্টে পিছিয়ে তিনে আছে গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা।
একই সময়ে শুরু আরেক ম্যাচে পোর্তোকে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছে আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগের ম্যাচটি অবশ্য লিয়ান্দ্রো ট্রোসার্ডের একমাত্র গোলে জিতেছে আর্সেনাল। তবে প্রথম লেগে পোর্তোও একই ব্যবধানে জেতায় দুই লেগের লড়াই গড়ায় টাইব্রেকারে।
যেখানে নায়ক আর্সেনালের গোলরক্ষক দাভিদ রায়া। প্রতিপক্ষের দুটি শট ঠেকিয়ে দলকে পরের ধাপের টিকেট পাইয়ে দেন তিনি।