২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:৪৯:২৩ অপরাহ্ন
রাজশাহীতে সিবিএ নেতাকে মারধরের অভিযোগ, চিনিকলে উত্তেজনা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৩-২০২৪
রাজশাহীতে সিবিএ নেতাকে মারধরের অভিযোগ, চিনিকলে উত্তেজনা

জেলায় চিনিকলের সহকারী ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে সেখানকার শ্রমিক ইউনিয়নের (সিবিএ) এক নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।


এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকাল থেকে চিনিকল শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।


অভিযুক্ত প্রকৌশলীকে দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। তা না হলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।

তবে রাজশাহী চিনিকলের ওই সহকারী ব্যবস্থাপক তাদের এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, শ্রমিকরাই তাকে মেরেছেন।


মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত সামিউল ইসলাম রাজশাহী চিনিকলে সহকারী ব্যবস্থাপক (সিভিল) পদে কর্মরত। গত ২৪ মার্চ তিনি চিনিকল সিবিএর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইউনিয়ন নেতা ও শ্রমিকরা।


এমন পরিস্থিতিতে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এ কয়দিন শ্রমিকদের থামিয়ে রেখেছিলেন চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল বাসার। কিন্তু ব্যবস্থা না নেওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।


যদিও ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি করে দিয়েছেন চিনিকলের এমডি। কমিটির প্রধান করা হয়েছে চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (ফাইনান্স) লতিফা খাতুনকে। এছাড়া সদস্যরা হলেন- মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শাহীনূর রহমান, উপ-মহাব্যবস্থাপক (সম্প্রসারণ) নজরুল ইসলাম ও ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) রুহুল আমিন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত শেষ করতে বলা হয়েছে। তবে এই কমিটিতে তাদের কোনো প্রতিনিধি না রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রমিকরা।


এদিকে চিনিকলের সহকারী ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সামিউল ইসলামের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। বিক্ষোভ থেকে তারা দ্রুত সামিউল ইসলামের প্রত্যাহার দাবি করেন। সেখানে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শ্রমিকদের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলে।


এ সময় রাজশাহী চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, সেলিম রেজা নামে এক টার্বাইন অপারেটরের কোয়ার্টারে পানির সমস্যা। সমস্যার সমাধানে সেলিম কয়েকদিন ধরে সহকারী ব্যবস্থাপক (সিভিল) সামিউল ইসলামের কাছে ঘুরছিলেন। সামিউল তাতে বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, রোজার ভেতরেই পাইপ ঠিক করে দেওয়া হবে।


তিনি আরও জানান, গত ২৪ মার্চ সেলিম রেজার হয়ে কথা বলতে তিনি সামিউল ইসলামের দপ্তরে যান। এতে সামিউল ইসলাম উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘তুই কত বড় নেতা হয়েছিস যে অন্যের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে আসিস?’ রফিকুল এ সময় শান্ত হয়ে কথা বলতে বললে সামিউল আরও উত্তেজিত হয়ে তাকে গালাগাল শুরু করেন। একপর্যায়ে তার দপ্তরে থাকা ছোট একটি রড দিয়ে রফিকুলের মাথায় আঘাত করতে যান। রফিকুল হাত দিয়ে মাথা রক্ষা করতে গেলে রডের আঘাতে তার বাম হাতের একটি আঙুল কেটে যায়। এই ঘটনার পরপরই অন্য শ্রমিকরা সেখানে জড়ো হন।


পরে চিনিকলের এমডির কক্ষে উভয়পক্ষ গেলে সেখানেও সামিউল উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এমডির কক্ষের পাশে তার সহকারী ইফতেখার সেলিমের কক্ষে গিয়ে তিনি টেবিলের ওপর উঠে পড়েন। এরপর তিনি ওপর থেকে শ্রমিকদের লাথি মারতে থাকেন। একটি টেবিল ফ্যান দিয়েও তিনি শ্রমিকদের আঘাত করার চেষ্টা করেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে তাকে শান্ত করেন।


তবে সহকারী ব্যবস্থাপক (সিভিল) সামিউল ইসলাম বলেন, তিনি রড দিয়ে মারতে যাবেন কেন? কোনো অফিসে কী রড থাকে? উল্টো শ্রমিকরাই ওই দিন তাকে মারধর করেছেন।


চিনিকলের এমডি আবুল বাসার বলেন, দুইপক্ষই তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তাই তিনি এ ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলেছেন। আর আজই (বৃহস্পতিবার) তদন্ত শেষ করতে হবে। তারপর যে প্রতিবেদন এবং সুপারিশ আসবে তার আলোকে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলবেন।


মহানগরীর কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুর রহমান বলেন, রাজশাহী চিনিকল সিবিএ সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের একটি লিখিত অভিযোগ তারা পেয়েছেন। এতে তাকে মারধর ও ছিলাফোলা জখম করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে বিষয়টি চিনিকলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আর সেখানেও একটি তদন্ত চলছে। তাই চিনিকলের নিজস্ব তদন্ত রিপোর্ট দেখে থানা পুলিশও রফিকুলের অভিযোগটির তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেবে বলে জানান ওসি।

শেয়ার করুন