‘প্রাচ্যের ডান্ডি’ হিসেবে খ্যাত শীতলক্ষ্যাপাড়ের শহর নারায়ণগঞ্জে হচ্ছে দেশের ৫৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। জাতির পিতার নামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের খসড়াও প্রস্তুত। শিগগিরই তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠকে তোলা হবে বলে জানা গেছে।
আইনটি সংসদে পাস হলে তারপর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জে একাধিক সরকারি কলেজ থাকলেও নেই কোনো পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজ। তাদের দাবির সঙ্গে একাত্ম হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সংসদে দীর্ঘদিন ধরে এ দাবি উত্থাপন করছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমানও অনেক দিন ধরে একই দাবি জানিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর এ বিষয়ে তাঁর নীতিগত সম্মতি জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদনের পর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে চিঠি দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানকে নারায়ণগঞ্জে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য যুগোপযোগী খসড়া আইন প্রস্তুতের নির্দেশ দেওয়া হয়। খসড়া প্রস্তুত করে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে বর্তমানে তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়ার পর পাসের জন্য আইনটি সংসদে যাবে। সংসদে উত্থাপনের পর তা পাস হলে নতুন এই প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য পরবর্তী নির্দেশনা আসবে। তখন জেলা প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপযুক্ত জমি খুঁজে বের করে তা অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেবে। আর চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপাচার্য নিয়োগ দেবেন।
প্রণীত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, আচার্য এই আইন ও সংবিধি দ্বারা অর্পিত ক্ষমতার অধিকারী হবেন। সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদানের প্রতিটি প্রস্তাবে আচার্যের অনুমোদন থাকতে হবে। আচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো ঘটনার তদন্ত করাতে পারবেন এবং তদন্ত প্রতিবেদন আচার্যের কাছ থেকে সিন্ডিকেটে পাঠানো হলে সিন্ডিকেট সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন আচার্যের কাছে পাঠাবে। এ বিষয়ে আচার্যের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও দেশে আরও নতুন দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। ইতোমধ্যে এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের খসড়া আইনের ওপর মতামত চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠা হতে যাওয়া বাকি দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো– নাটোরে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।