ইসলামী শরিয়তে কোরবানি গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। সামর্থ্যবান প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য তা ওয়াজিব। ইসলামের এই মৌলিক ইবাদত পালনের আবশ্যকীয় বস্তু হলো শরিয়ত নির্ধারিত হালাল পশু।
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানির জন্য এ হালাল পশু ক্রয় করতে হয় সুস্থ, সুন্দর ও হূষ্টপুষ্ট দেখে।
দুর্বল, রুগ্ণ ও দোষযুক্ত পশু ক্রয়ের মাধ্যমে কোরবানি ত্রুটিপূর্ণ ও ক্ষেত্রবিশেষে নাজায়েজ হয়ে যায়। তাই এ সময়ে পশু ক্রয়ের ইসলামের বিধানগুলো জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
যেসব পশু দ্বারা কোরবানি করা যায়
উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা—এই ছয় প্রকার পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। আর যেসব পশু কোরবানি করা জায়েজ সেগুলোর নর-মাদি দুটোই কোরবানি করা যায়।
এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্য পশু যেমন—হরিণ, বন্য গরু ইত্যাদি দ্বারা কোরবানি করা নাজায়েজ। তদ্রুপ হাঁস-মুরগি এবং যেকোনো পাখি দ্বারাও কোরবানি জায়েজ নেই। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানির নির্দেশ দিয়েছি। আল্লাহ তাদের রুজি হিসেবে যেসব গৃহপালিত পশু দিয়েছেন তার ওপর তারা যেন কোরবানি করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে।
(সুরা : হজ, আয়াত : ৩৪, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৫)
কোরবানি পশুর বয়সসীমা
উট কমপক্ষে পাঁচ বছর, গরু ও মহিষ কমপক্ষে দুই বছর। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে এক বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি এক বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হূষ্টপুষ্ট হয় যে দেখতে বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কোরবানি করা জায়েজ।
জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তোমরা কোরবানির জন্য ‘মুসিন্নাহ’ ছাড়া জবাই কোরো না।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৬৩)
আর মুসিন্নাহ হলো, পাঁচ বছর বয়সী উট, দুই বছরের গরু ও এক বছর বয়সী ছাগল।
দৃষ্টিহীন ও খোঁড়া পশুর কোরবানির বিধান
বিখ্যাত সাহাবি বারা বিন আজিব (রা.) কোরবানির পশু সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) হাত দিয়ে ইশারা করে বলেছেন, ‘চার ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি করা যায় না : ১. যে পশুর এক চোখের দৃষ্টিহীনতা স্পষ্ট। ২. যে পশু অতি রুগ্ণ। ৩. যে পশু সম্পূর্ণ খোঁড়া। ৪. যে পশু এত শীর্ণ যে তার হাড়ে মগজ নেই।’ লোকেরা বলল, আমরা তো দাঁত, কান ও লেজে ত্রুটিযুক্ত প্রাণী (দ্বারা কোরবানি করা)ও অপছন্দ করি? তিনি বলেন, যা ইচ্ছা অপছন্দ করতে পারো। তবে তা অন্যের জন্য হারাম কোরো না।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৯১৯)
কান বা লেজ কাটা পশুর কোরবানি
যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কোরবানি জায়েজ নেই। আর যদি অর্ধেকের বেশি কান বা লেজ থাকে তাহলে তার কোরবানি জায়েজ। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে কোরবানিতে কোনো অসুবিধা নেই। আলী (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আদেশ করেছেন, আমরা যেন কোরবানির পশুর চোখ ও কান ভালো করে দেখে নিই এবং কান কাটা, কান ছেঁড়া বা কানে গোলাকার ছিদ্র করা পশু দ্বারা কোরবানি না করি। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৮০৪)
দাঁতহীন ও শিং ভাঙা পশুর কোরবানি
যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নেই। আর যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কোরবানিও জায়েজ নয়। তবে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশুর কোরবানি জায়েজ। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২১৫)
আল্লাহ আমাদের উত্তম পশু দিয়ে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন।