১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:৫৮:১২ অপরাহ্ন
রাজশাহী মেডিকেলে সাপে কাটা রোগীদের জন্য হচ্ছে বিশেষায়িত ওয়ার্ড
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৯-২০২৫
রাজশাহী মেডিকেলে সাপে কাটা রোগীদের জন্য হচ্ছে বিশেষায়িত ওয়ার্ড

ডেঙ্গু, করোনা ও নিপাহ ভাইরাসের পর এবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড করা হচ্ছে। ১২ শয্যাবিশিষ্ট এই ওয়ার্ডে সাপে কাটা রোগীদের তাৎক্ষণিক ও সমন্বিত চিকিৎসা প্রদান করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই চালু হবে এই ওয়ার্ড।


এটি হবে দেশের প্রথম কোনো হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড। সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা সম্প্রতি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় এর মৃত্যুহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্নেক বাইট ক্লিনিক করা হয়েছে।


রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সম্প্রসারিত অংশে সাপে কাটা রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু করা হচ্ছে। এই ওয়ার্ডের ‘ফোকাল পারসন’ হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু শাহীন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তিনি স্নেক বাইটের (রাসেলস ভাইপার) ওপরে পিএইচডি করছেন। তাঁর গবেষণা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আবু শাহীন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, এরই মধ্যে এই ওয়ার্ডের জন্য আট নার্স বাছাই করা হয়েছে। ওয়ার্ডের চিকিৎসক ও নার্সদের স্নেক বাইটের ন্যাশনাল গাইড অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।


হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালটিতে সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৬ জন। এর মধ্যে বিষধর সাপে কাটা রোগী ছিলেন ২০৬ জন এবং অন্যান্য সাপে কাটা রোগী ছিলেন ৮০০ জন। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন ৩১ জন। রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে মারা গেছেন ১০ জন। কেউটে সাপের কামড়ে মারা গেছেন ১৩ জন। গোখরা সাপের কামড়ে মারা গেছেন ৫ জন। গোখরা বা অন্যান্য সাপের কামড়ে মারা গেছেন তিনজন।


মাহবুবুর রহমান জানান, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত হাসপাতালটিতে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মৃত্যুর হার ছিল ২৭ শতাংশ। চিকিৎসা দেওয়ার কারণে এ হার কমেছে। তিনি জানান, সাপে কাটা রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হওয়ার পর থেকে সাপে কাটা সব রোগী সেই ওয়ার্ডে ভর্তি হবেন। সেখানে তাঁদের চিকিৎসা ইন্টিগ্রেটেড (সমন্বিত) হবে, যাতে মৃত্যুর হার কমানো যায়, এই উদ্দেশ্যেই এটা করা হচ্ছে। ওই ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক নার্স ও চিকিৎসক থাকবেন। পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনমের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যার প্রতি ডোজের দাম পড়বে প্রায় ১৩ হাজার টাকা। এক ডোজের জন্য ১০ ভায়াল লাগে। কোনো কোনো রোগীর একাধিক ডোজের প্রয়োজন পড়ে। হাসপাতাল থেকে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ওষুধ পাবেন রোগীরা।


হাসপাতালে আসা রোগীদের তথ্য থেকে জানা যায়, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিতে আসা সাপে কাটা রোগীদের মধ্যে কেউটের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। এই সাপ রাতের বেলায় বিছানায় উঠে কামড়ায়। এ জন্য চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিচ্ছেন, রাতের বেলায় অবশ্যই মশারি টানিয়ে চৌকিতে ঘুমাতে। রাতের বেলায় বাইরে বের হলে টর্চলাইট জ্বেলে ও হাতে লাঠি নিয়ে শব্দ করতে করতে এগোতে। মাঠে কাজ করার সময় গামবুট পরে কাজ করতে। কোথাও কাজে হাত দেওয়ার সময় একটু দেখে নিতে, কিছু আছে কি না।


এ ছাড়া মাছ ধরার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা, কোনো গর্তে হাত না দেওয়া ও বাড়ির পাশে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শও দিয়েছেন মাহবুবুর রহমান। এই চিকিৎসক জানান, তিনি প্রায় ২৫০ জন সাপে কাটা রোগী দেখেছেন, যাঁদের ৬৫ শতাংশ ধানখেতে রাসেলস ভাইপারের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। নদীর ধারে ও মাঠে এই সাপের উপদ্রব বেশি। ২০১৩ সালের আগে রাজশাহীতে রাসেলস ভাইপারের কোনো উৎপাত দেখা যেত না। তার পর থেকে এই সাপের উপদ্রব শুরু হয়েছে। একটি সাপ অনেকগুলো বাচ্চা দেয়। এ জন্য দ্রুত বংশবিস্তার হচ্ছে।


গত মঙ্গলবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাপে কাটা চার রোগী পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে আবদুল গাফফারের (৫০) বাড়ি পাবনা সদরে। শসাখেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন, তখন রাসেলস ভাইপার তাঁর হাতে কামড় দিয়েছে। গত সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় তাঁকে কামড় দেয়। তিনি একাই সাপ মেরে একটা বয়ামে করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। প্রথমে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তাঁকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়েছে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।


কথা হয় সাপে কাটা রোগী তাজউদ্দিন স্বপনের (৫০) সঙ্গে। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামে। রাতে ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। বিছানাতেই সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁর হাতে কামড় দিয়েছে। ভোর সাড়ে পাঁচটায় হাসপাতালে এসেছেন। তাজউদ্দিন বলেন, রাতে মশারির ভেতরেই ঘুমিয়েছিলেন। হয়তো আগে থেকেই সাপ বালিশের নিচে ঢুকে ছিল। তাঁর অবস্থা অনেকটা শোচনীয়।

বিল্লাল (২২) পাবনা সদর থেকে এসেছেন। তাঁকেও রাতে ঘুমের মধ্যে সাপে কামড় দিয়েছে। তিনি মশারি ছাড়াই ঘুমিয়েছিলেন। গত রোববার দিবাগত রাতে কামড় দিয়েছে। সকাল ছয়টার দিকে পাবনা সদর হাসপাতালে গিয়েছিলেন। ওখানে এক ডোজ ওষুধ দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।


শেয়ার করুন