০৬ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার, ১২:২২:১১ অপরাহ্ন
গাজা যুদ্ধ বন্ধে ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠকে সন্তুষ্ট এরদোয়ান
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৯-২০২৫
গাজা যুদ্ধ বন্ধে ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠকে সন্তুষ্ট এরদোয়ান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আরব-মুসলিম নেতাদের সঙ্গে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে অনুষ্ঠিত ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠকের ফলাফলে তিনি সন্তুষ্ট।


ইতিবাচক এই মনোভাব প্রতিধ্বনিত হয় ট্রাম্পের বক্তব্যেও। তিনি বলেন, মঙ্গলবার নিউইয়র্কে ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে ইসরায়েল বাদে ‘সব বড় খেলোয়াড়দের’ সঙ্গে বৈঠকটি ছিল ‘সফল’। এদিকে ইসরায়েল গাজা সিটিতে লাগাতার বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, প্রতিদিন ডজনখানেক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে এবং কয়েক হাজার মানুষকে জোর করে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে বাস্তুচ্যুত করছে।


তবে বৈঠকের কোনো বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি। বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন মিসর, ইন্দোনেশিয়া, জর্দান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতারা। ট্রাম্প বৈঠকটিকে আখ্যা দেন ‘যে দলটা এটা করতে পারবে।’


মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য ট্রাম্প একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন।


এর মধ্যে রয়েছে গাজায় সামরিক বাহিনী পাঠাতে আরব ও মুসলিম দেশগুলোকে সম্মত করা, যাতে ইসরায়েল প্রত্যাহার করতে পারে এবং একই সঙ্গে স্থানান্তর ও পুনর্গঠন কর্মসূচির জন্য তহবিল নিশ্চিত হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারি সংবাদ সংস্থা ডব্লিউএএম বুধবার জানিয়েছে, বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল গাজার চলমান যুদ্ধ বন্ধ করা ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছনো। এতে আরো বলা হয়, বন্দিদের মুক্তি এবং ক্রমে খারাপ হওয়া মানবিক সংকট মোকাবেলাকে অগ্রাধিকারে আলোচনা করা হয়েছে।


খবরে বলা হয়, আলোচনায় ইসরায়েলের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।


তবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পরিকল্পনার বিস্তারিত জানানো হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এতে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কিছু ভূমিকা রাখা হয়েছে, যা ইসরায়েল বারবার অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে।

এই পরিকল্পনায় হামাসের কোনো ভূমিকা নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল উভয়েই দাবি করেছে, হামাসকে নিরস্ত্র ও নির্মূল করতে হবে। ‘যে এক ব্যক্তি সব কিছু পাল্টাতে পারেন’


গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির কূটনৈতিক চাপের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের ফাঁকে নেতারা বৈঠক করেন।


অন্তত ৬৫ হাজার ৩৮২ মানুষের প্রাণহানির এই দুই বছরের যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার দাবি জোরালো হয়।

এই সম্মেলনে দেখা গেছে, ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঐতিহ্যগতভাবে কূটনৈতিক ঢাল হিসেবে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্র ক্রমশ একঘরে হয়ে পড়ছে, কারণ অনেক দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে ওয়াশিংটন থেকে তেল আবিবকে যুদ্ধ থামাতে চাপ দেওয়ার তেমন কোনো ইঙ্গিত মেলেনি।


ট্রাম্প তার দীর্ঘ বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগালসহ অন্যদের স্বীকৃতি দেওয়া আসলে হামাসকে ‘ভয়াবহ নৃশংসতার পুরস্কার’ দিচ্ছে এবং এটি ‘সংঘাত অব্যাহত রাখতে উৎসাহিত করছে’। তিনি যুদ্ধের তাৎক্ষণিক অবসান দাবি করেন, যদিও গাজার মানবিক সংকটের গুরুত্ব স্বীকার করেননি।


তার এই বক্তব্য জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মন্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত। গুতেরেস রবিবার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে এক বৈঠকে বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র হওয়া একটি অধিকার, কোনো পুরস্কার নয়।’


নিউ ইয়র্ক থেকে আল জাজিরার কূটনৈতিক সম্পাদক জেমস বেইস জানান, ‘জাতিসংঘে কূটনীতিকদের মধ্যে এমন একটি ধারণা আছে যে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেক সময় একপক্ষীয় তথ্যই পাচ্ছেন। ইসরায়েলের একমাত্র সমর্থক আছে নিরাপত্তা পরিষদে, একমাত্র সমর্থক অর্থ যোগাচ্ছে, অস্ত্র সরবরাহ করছে। আর সেই সমর্থক হলো যুক্তরাষ্ট্র। তাই… মূল ব্যক্তি, যিনি সবকিছু বদলে দিতে পারেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প।’


বৈঠকের শুরুতে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেন, ‘আমরা আপনাকে এবং আপনার নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করি… এই যুদ্ধ শেষ করতে ও গাজার জনগণকে সাহায্য করতে।’ তিনি গাজার পরিস্থিতিকে ‘খুব খারাপ’ বলে বর্ণনা করেন।


এর আগে শেখ তামিম, যিনি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং তার দেশকে হামাস নেতাদের আতিথ্য দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের হামলার শিকার হতে হয়েছে, পরিস্থিতির জরুরি অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের আসল লক্ষ্য হলো  ‘গাজাকে ধ্বংস করা, বাসস্থান, জীবিকা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাকে অসম্ভব করে তোলা, মানবজীবনের মৌলিক ভিত্তি ছিনিয়ে নেওয়া।’


বৈঠকের আগে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো সোমবার ফ্রান্স ও সৌদি আরব আয়োজিত দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে জাতিসংঘ সম্মেলনে বলেন, তার দেশ গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে প্রস্তুত।


শেয়ার করুন