২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:৩১:১৪ অপরাহ্ন
শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড নিয়ে ফের বিতর্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১০-২০২২
শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড নিয়ে ফের বিতর্ক

শিক্ষক নিয়োগে বিতর্ক থেকে বের হতে পারছে না ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ। নানা অভিযোগে বারবার আটকে যাচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের জেরে তিনবারসহ টানা চারবার বোর্ড স্থগিত করতে হয় কর্তৃপক্ষকে।

এসব ঘটনায় অভিযুক্ত একাধিক শিক্ষককে শাস্তিও দেওয়া হয়। এতে শেষ ১০ বছরে বিভাগে নতুন কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। ফলে পাঁচ শিক্ষক দিয়েই চলছে বিভাগটি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ফাঁসের কারণে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। ৩ বছর পর ২৫ সেপ্টেম্বর নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। এই বোর্ড নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক।

জানা যায়, বিভাগটিতে দুজন প্রভাষক নিয়োগের জন্য নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ডে প্রার্থী চূড়ান্তকরণ নিয়ে সদস্যদের অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে প্রার্থী চূড়ান্তকরণপত্রে স্বাক্ষর না করেই বোর্ড থেকে বেরে হয়ে যান বিভাগীয় সভাপতি প্রফেসর বখতিয়ার হোসেন। ফলে অমীমাংসিতভাবেই বোর্ডটি শেষ হয়। এ নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা চলছে। পরে এ ঘটনায় বিভাগীয় একাডেমিক কমিটিতে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় একডেমিক কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিষয়টি নিয়ে মর্মাহত ও বিব্রত হওয়ার কথা জানান বিভাগটির অন্য শিক্ষকরা। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় একাডেমিক কমিটি। ৩০ অক্টোবর ২৫৬তম সিন্ডিকেটে বিষয়টি আলোচনা করে চূড়ান্ত সমাধান হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে বোর্ডে বিশেষজ্ঞ সদস্য ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের প্রফেসর ড. কামরুজ্জামান। এছাড়া সিন্ডিকেট সদস্য হিসাবে উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান ও বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. বখতিয়ার হাসান সদস্য হিসাবে ছিলেন।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর বিভাগটিতে দুটি পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। পরের বছরের ২৬ জানুয়ারি নিয়োগ বোর্ডের তারিখ নির্ধারণ হলেও অনিবার্য কারণ দেখিয়ে বোর্ড স্থগিত করেন তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল হাকিম। পরে ২০১৭ সালে স্থগিত বোর্ডটি পুনরায় শুরু করতে গেলে ২ এপ্রিল বিভাগটির তৎকালীন সভাপতি প্রফেসর ড. রুহুল আমিনের সঙ্গে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষক বন্ধুর কথোপকথনের ১০ মিনিটের অডিও ক্লিপ ফাঁস নিয়ে যুগান্তরে ‘থ্রি ফার্স্ট ক্লাসে ১৫ লাখ, ফোরে ১২ লাখ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এরপর সেই নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। তবে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই ২০১৮ সালে একটি পদ বৃদ্ধি করে নতুন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১০ জুলাই নিয়োগ বোর্ডের তারিখ ঘোষণা করা হয়। বোর্ড অনুষ্ঠানের দিন যুগান্তরে ‘তদন্ত ছাড়াই বিতর্কিত নিয়োগ বোর্ড’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে আবারও বোর্ড স্থগিত করতে হয় কর্তৃপক্ষকে। পরে তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্ত শিক্ষককে সিন্ডিকেটে দণ্ড দেওয়া হয়।

পরে ২০১৯ সালে আবারও নিয়োগ বোর্ড ঘোষণা করা হলে বোর্ডের আগেই নিয়োগে অর্থ লেনদেন নিয়ে বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর রুহুল আমিন ও ইইই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রহিমের মধ্যে কথোপকথনের আট মিনিট পয়ত্রিশ সেকেন্ডের অডিও ফাঁস হয়। এ নিয়ে যুগান্তরে ‘এবার চুক্তি ১৮ লাখে, অগ্রীম ১০’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। ফলে টানা চতুর্থবারের মতো নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করতে হয় প্রশাসনকে। একইসঙ্গে জড়িত দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে ঘটনার তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

বিভাগের সভাপতি প্রফেসর বখতিয়ার হোসেন বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত এই সমস্যাগুলোর কারণে বিভাগে শিক্ষক সংকট থাকলেও আমরা দীর্ঘদিন নিয়োগ দিতে পারিনি। এবার বোর্ড অনুষ্ঠিত হলে সেখানেও অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিষয়গুলো খুবই দুঃখজনক।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম যুগান্তরকে বলেন, একটি বোর্ডে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেক কথাই হয়। প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় তার গুণাগুণ নিয়ে কথা হয়। বোর্ডের সব বিষয় আমি সিন্ডিকেটে উত্থাপন করবো। এর বাইরে আমি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

শেয়ার করুন