শুরুতেই বিজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বানী করে রেখেছিলেন ‘এই সংসার টিকবে না’। অবশেষে সেটাই সত্যি হলো। বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় ভেঙে গেল ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি ও উঠতি অভিনেতা শরীফুল ইসলাম রাজের সংসার। শুক্রবার মধ্যরাতে ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে পরী জানান, রাজকে তার জীবন থেকে আজীবনের জন্য ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাপি থার্টি ফার্স্ট এভরিওয়ান! আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে। জীবনে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার থেকে জরুরি আর কিছুই নাই।’
জানা গেছে, এ পোস্ট দেওয়ার আগে তিনি সন্তান নিয়ে রাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তার বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। যদিও এ বাসাটি পরীই ভাড়া নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠরা। সে হিসাবে বলা যায়, নিজের বাসা থেকে নিজেই বেরিয়ে এসেছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। গত কুরবানির ঈদের পর থেকেই রাজ-পরীর সংসারে অশান্তির আগুন জ্বলছিল। রায়হান রাফি পরিচালিত ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পরান’ নামে একটি সিনেমা নিয়েই এ দ্বন্দ্ব। এ সিনেমায় বিদ্যা সিনহা মিম ও শরীফুল রাজ অভিনয় করেছেন। তখন থেকেই নাকি এ দুজনের মধ্যে গোপন কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এমনটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছেন পরীমনি।
একই পরিচালকের ‘দামাল’ নামে আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মিম ও শরীফুল রাজ। একই সিনেমায় সঙ্গে রয়েছেন সিয়াম। এ সিনেমার প্রচারণায় ‘রাজ মিমের হাত ধরে আছেন’ এমন একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। মূলত তখন থেকেই ধারণা পাওয়া গেছে রাজের সঙ্গে মিমকে নিয়ে সন্দেহ করছেন পরী। এর কিছুদিন পর রায়হান রাফিকে উদ্দেশ করে পরীমনি এক পোস্টে লিখেন, ‘সিনেমার সাথে সাথে দালালিটাও ভালো করেন দেখি!’ একই পোস্টে বিদ্যা সিনহা মিমকে ট্যাগ করে পরী লিখেন, ‘নিজের জামাইকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উচিত ছিল।’ রাজকে উদ্দেশ করে লিখেন, ‘এটা এতদূর গড়াতে দেওয়া উচিত হয়নি তোমার!’ ‘এটা’ বলতে মূলত পরীমনি মিম ও রাজের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে বলেছেন।
জানা গেছে, পরী রাজের এ সংসার ভাঙার জন্য মূলত দুজনের প্রতি দুজনার সন্দেহই দায়ী। পরী চান না রায়হান রাফি কিংবা মিমের সঙ্গে রাজ আর কোনো কাজ করুক। এদিকে রায়হান রাফির ঘনিষ্ঠ বন্ধু চিত্রনায়িকা তমা মির্জার সঙ্গে অঘোষিত বিবাদ ছিল পরীমনির। সেটাও রাফিকে কেন্দ্র করেই। এসব নিয়ে রাজ খুবই বিরক্ত ছিল পরীর ওপর। দিনে দিনে রাজের বিরক্তি ও পরীর সন্দেহপ্রবণতা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, সেটা শেষ পর্যন্ত সংসার ভাঙাতেই রূপ নিয়েছে।
এদিকে সংসার ভাঙার বিষয়ে পরীমনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখনো ডিভোর্স দেইনি। তবে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজের বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছি। আজ (গতকাল) থেকে আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। শিগ্গির ডিভোর্সের চিঠি পাঠিয়ে দেব।’ ডিভোর্স দেওয়ার কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই সমস্যা হচ্ছিল। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। তার (রাজ) আচার-আচরণ একসঙ্গে থাকার মতো নয়। তাই বাধ্য হয়ে বাসা ছেড়ে আলাদা হয়ে গেলাম।’
এদিকে পরীর সঙ্গে আলাদা হয়ে যাওয়ার বিষয়ে শরীফুল রাজ এখনো মুখ খোলেননি। তবে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আর্থিক অবস্থাটা যদি আরও ভালো থাকত, তাহলে স্ত্রী ও সন্তানকে আরও বেশি সময় দিতে পারতাম।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি সন্তানসম্ভবা হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পর পরীমনি জানান, রাজকে তিনি গোপনে ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর বিয়ে করেছেন। এরপর চলতি বছর ২১ জানুয়ারি হয় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান এবং ২২ জানুয়ারি দুই পরিবারের সদস্যের উপস্থিতিতে ১০১ টাকার দেনমোহরে ঘরোয়া আয়োজনে তাদের আবার বিয়ে হয়। ১০ আগস্ট তাদের সংসারে আসে এক পুত্রসন্তান। সন্তানের নাম রেখেছেন শাহীম মুহাম্মদ রাজ্য। পরীর এটা তৃতীয় বিয়ে।
এর আগে ২০২১ সালের ৮ জুন রাতে রাজধানীর উত্তরার বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা ও নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে সাভার থানায় ১৪ জুন নাসিরউদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমনি। এরপর ২০২১ সালের ৪ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরীমনির বাসায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্যসহ পরীমনিকে গ্রেফতার করে। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে। সেখান থেকে একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন। দুটি মামলাই এখনো বিচারাধীন।