২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৪:১৯:২২ অপরাহ্ন
বিশ্বমানের ক্যানসার হাসপাতাল হচ্ছে সিএমএইচে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৪-২০২৩
বিশ্বমানের ক্যানসার হাসপাতাল হচ্ছে সিএমএইচে

ঢাকায় একটি বিশ্বমানের স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যানসার সেন্টার স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে সাশ্রয়ীমূল্যে দেশেই ক্যানসার রোগের উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। রাজধানীর ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থাপিত হবে এই ক্যানসার সেন্টার। সামরিক বাহিনীর রোগীদের পাশাপাশি অসামরিক রোগীরাও এই কেন্দ্র থেকে আন্তর্জাতিকমানের উন্নত ক্যানসার চিকিৎসা পাবেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, এ লক্ষ্যে ‘ঢাকা সিএমএইচে  ক্যানসার সেন্টার নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদফতর এবং সেনাসদর, ইইনসি’র শাখা, পূর্ত পরিদফতর, ঢাকা সেনানিবাস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৬ কোটি টাকা। আগামী ২০২৫ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত (৪ এপ্রিল) সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নিবাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে প্রকল্পটি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যসেবা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ক্যানসার চিকিৎসাসেবার পরিধি বৃদ্ধির মাধ্যমে সামরিক ও অসামরিক রোগীদের আন্তর্জাতিকমানের উন্নত ক্যানসার চিকিৎসার ব্যবস্থা করাই হচ্ছে এই প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্য। সরকারের চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় ‘ঢাকা সিএমএইচে ক্যানসার সেন্টার নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শিরোনামে প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।

পরিকল্পনা কমিমন জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান চার তলা ভবনকে ১২ তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য ১৬ হাজার ৭০৫ বর্গমিটার অনাবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। ক্যানসার কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য ১ হাজার ৫৪৬টি আইটেমের মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি  কেনা হবে। এই কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য পাঁচ ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, ৩ হাজার ৪০৬টি আসবাবপত্র কেনা হবে। এ জন্য ৩৬ জন পরামর্শক  নিয়োগ করা হবে।

সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে প্রকল্পটি সঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৩ (সব বয়সী ও সব মানুষের জন্য সু-স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণ) এর লক্ষ্যমাত্রা ৩.৪ (প্রতিরোধ ও চিকিৎসার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগের কারণে অকাল মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনা এবং মানসিক সুস্থতা কল্যাণ নিশ্চিতে সহায়তা প্রদান) অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে ক্যানসার রোগের কারণে মৃত্যুহার কমানো অন্যতম, যা এ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুবিধা অর্জনের জন্য আর্থিক সুরক্ষার পাশাপাশি মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য সাধারণের ব্যয় হ্রাসের কথা বলা হয়েছে, যা এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

একনেক সভায় অনুমোদনের লক্ষ্যে উপস্থাপিত ফাইলে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়ে— ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), ঢাকায় একটি বিশ্বমানের স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যানসার সেন্টার স্থাপন হবে। যার মাধ্যমে সাশ্রয়ীমূল্যে দেশেই ক্যানসারর রোগের উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার জন্য উদ্যোগী মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও আইএমইডি কর্তৃক নিবিড় তদারকি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে— সেটি অনুসরণ করা যেতে পারে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদফতর ও সেনাসদর, ইইনসি (ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ)-এর শাখা, পূর্ত অধিদফতর কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সিএমএইচ এ ক্যানসার সেন্টার নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক বিনিয়োগ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে মোট ২৪৬ কোটি টাকা প্রস্তাবিত ব্যয়ে নভেম্বর ২০২২ হতে অক্টোবর ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেকের বিবেচনা ও সদয় অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুবিধা অর্জনের জন্য আর্থিক সুরক্ষার পাশাপাশি মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য সাধারণের ব্যয় হ্রাসের কথা বলা হয়েছে। তাই  প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সামরিক রোগীদের পাশাপাশি  অসামরিক রোগীরাও এই কেন্দ্র থেকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নত ক্যানসার চিকিৎসা পাবেন।’

শেয়ার করুন