২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৮:১৮:৩০ অপরাহ্ন
ইসির ক্ষমতা কমিয়ে আরপিও সংশোধনী বিল পাস
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৭-২০২৩
ইসির ক্ষমতা কমিয়ে আরপিও সংশোধনী বিল পাস

ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা কমিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এই বিল পাস হওয়ার ফলে কমিশন অনিয়মের কারণে কোনো নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না। শুধু যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হবে, সেগুলোয় ভোট গ্রহণ বন্ধ করার ক্ষমতা থাকছে ইসির হাতে। 


আজ মঙ্গলবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকে আলোচিত-সমালোচিত এই বিল পাস হয়। সংসদের আলোচনায় বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা (এমপি) আরপিও সংশোধনী বিলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করার সমালোচনা করলেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দাবি করেছেন, এতে ইসির ক্ষমতা কমানো হয়নি। 

 

বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, ‘আরপিওর মধ্যে কতগুলো ক্লজ লাগানো হলো, যার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে। আমরা জানি, নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলে যেকোনো নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু এই অধিকার খর্ব করা হলো। এখন কী করা হলো? তারা সেন্টারগুলো বন্ধ করতে পারবে, কিন্তু পুরো নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না। এটা হলে এই ইসি দিয়ে আমরা কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচনটা করাব?’ 


জাতীয় পার্টির আরেক এমপি রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ইচ্ছা থাকলে দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনেই সুষ্ঠু ভোট করা সম্ভব। ইসির মানসিকতার ওপর নির্ভর করে নির্বাচন। সোজা বাংলায়, তাদের মেরুদণ্ড শক্ত কি না। শত আইন করে দিলেও মেরুদণ্ডহীন লোকদের দিয়ে কিছু হবে না। 


পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘এই আইনে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। এটি ঠিক হয়নি। নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে এসেও নির্বাচনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হয়নি।’ 


বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘একটি আসনে ১০০-১৪০টি পোলিং সেন্টার থাকে। সেখানে বলা ছিল তিন-চারটি পোলিং সেন্টারে কোনো সহিংসতা বা অনিয়ম হলে সব পোলিং সেন্টারের ইলেকশন বন্ধ করে দিতে পারবে। কিন্তু সেটা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। সেটা জনগণের ভোটাধিকারেরও পরিপন্থী। কারণ বাকিগুলোতে তো কোনো সহিংসতা বা অনিয়ম হয়নি। কেবল এই তিনটায় হয়েছে। এ জন্য বলা হয়েছে, যেখানে সহিংসতা বা অনিয়ম হয়েছে, সেগুলো বন্ধ হবে। আমি বুঝতে পারলাম না কেন ওনারা বলছেন নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। ওনাদের এই কথাটা অমূলক।’ 


যেসব সংশোধনী এল 

বর্তমান আরপিও অনুযায়ী, অনিয়ম বা বিরাজমান বিভিন্ন অপকর্মের কারণে ইসি যদি মনে করে তারা আইনানুগ নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না, তাহলে নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে তারা। এখন এই ক্ষমতা সীমিত করে ইসিকে শুধু ভোটের দিন সংসদীয় আসনের (অনিয়মের কারণে) ভোট বন্ধ করতে পারার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। 


আরপিওর সংশোধনী অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করে ফেলার পর কোনো আসনের পুরো ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না ইসি। যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আসবে, শুধু সেসব (এক বা একাধিক) ভোটকেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে। এরপর তদন্ত সাপেক্ষে ফলাফল বাতিল করে ওই সব কেন্দ্রে নতুন নির্বাচন দিতে পারবে ইসি। 


সংশোধিত আরপিওতে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষকদের কাজে কেউ বাধা দিলে তাঁকে শাস্তির আওতায় আনার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। 


এ ছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত ক্ষুদ্র ঋণ এবং টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সরকারি সেবার বিল পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আগে মনোনয়ন দেওয়ার সাত দিন আগে এসব ঋণ পরিশোধ করতে হতো।


শেয়ার করুন