২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০১:০২:০৩ পূর্বাহ্ন
সাত খাতে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১০-২০২৩
সাত খাতে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল

বঙ্গবন্ধু টানেলের বদৌলতে দক্ষিণ চট্টগ্রামে পর্যটন, লবণ, শিপব্রেকিং, শিপবিল্ডিং, ইকোনমিক জোন, চিংড়ি ও লজিস্টিকস প্রভৃতি খাতে সমূহ সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, টানেল নির্মাণ হওয়ায় এ অঞ্চলে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে। এতে করে কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানও হবে।


চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতারা বলেছেন, পর্যটন খাতে কক্সবাজারের পর আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ও আনোয়ারা পারকি বিচ। আগে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত থেকে সড়কপথে শহরের ভেতর দিয়ে আনোয়ারায় যেতে সময় লাগত ৪ ঘণ্টা। বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে লাগবে মাত্র ২০ মিনিট। তারা আরও বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় এটিই একমাত্র নদীর তলদেশে টানেল। সঙ্গত কারণেই এ স্থাপনাকে কেন্দ্র করে আকর্ষণ বাড়বে দর্শনার্থীদের। পাশাপাশি ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ এবং ফৌজদারহাট এলাকায় গড়ে ওঠা দৃষ্টিনন্দন ডিসি পার্ক পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। এর প্রভাবে কক্সবাজারেও পর্যটক বাড়বে।


দেশে সর্বাধিক লবণ উৎপাদন হয় কক্সবাজার জেলায়। এর পরই রয়েছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি লবণ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা থাকলেও অধিকাংশ লবণের উৎপাদন হচ্ছে সনাতন পদ্ধতিতে। চট্টগ্রামের মিরেরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ বাস্তবায়ন হলে লবণ শিল্পেরও ব্যাপক বিকাশ হবে; যুক্ত হবে নতুন নতুন প্রযুক্তি।


বর্তমানে শিপ ব্রেকিং সেক্টরে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় স্ক্র্যাপ জাহাজ ভাঙা হচ্ছে চট্টগ্রামের সীতাকু-ে। দেশের ক্রমবর্ধমান ইস্পাত শিল্পের প্রধান কাঁচামালের প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ জোগান দেয় চট্টগ্রামের শিপ ব্রেকিং সেক্টর। বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব জাহাজকাটার জন্য পরিবেশবান্ধব শিপইয়ার্ড গড়ে তুলছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। টানেলের কারণে নতুন করে এ খাতেও আগ্রহ অনেক বেড়ে যাবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের।


বাংলাদেশের রপ্তানি বহুমুখীকরণে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত বিবেচনা করা হয় শিপবিল্ডিং খাতকে। এ খাতের বার্ষিক টার্নওভার ১০-১৫ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক নৌ-বাণিজ্যের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ যেমন বাড়ছে, তেমনি নিজস্ব সক্ষমতায় জাহাজ নির্মাণ বা শিপবিল্ডিংয়ের পরিধিও বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু টানেলের কারণে সেটি আরও বেগবান হবে।


চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ঘিরে সরকারের নেওয়া মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হওয়ায় চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ঘিরে নতুন অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ডেনমার্কের কনটেইনার জাহাজ পরিবহনকারী সংস্থা মার্কস লাইন এখানে কনটেইনার ডিপো স্থাপনে আগ্রহী। এছাড়া পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর, বে-টার্মিনাল এবং বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট ফলপ্রসূ হলে লজিস্টিকস খাতে বিনিয়োগের অন্যতম গন্তব্য হবে চট্টগ্রাম।


টানেলকে ব্যবহার করে রপ্তানিমুখী চিংড়ির উৎপাদন ও সরবরাহ দ্রুত বেড়ে যাবে, যৌক্তিক প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।


চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের এ বিপ্লব আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। চট্টগ্রামে এরই মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল, পাওয়ার হাব, গভীর সমুদ্র বন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। টানেল চালু হলে পদ্মা সেতুর পর বাংলাদেশের সক্ষমতার অন্যতম আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে।


আগামী ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই দিনটি শুধু চট্টগ্রামবাসীর জন্যই নয়, পুরো দেশবাসীর জন্য এক গৌরবের দিন বলে মনে করেন ওমর হাজ্জাজ।


এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, টানেল যুগে প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম। এই টানেল দেশের পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর এবং ভারতের সেভেন সিস্টারসের (সাতটি অঙ্গরাজ্য) মধ্যে সংযোগে কাজ করবে। পদ্মা সেতু যেমন দেশের জিডিপিতে অবদান রাখছে, তেমনি বঙ্গবন্ধু টানেলও দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।


শেয়ার করুন