রাত হলেই হঠাৎ টিনের ছাদে পড়ছে ঢিল। ঢিলের শব্দে ঘুম উড়ে গেছে রাজশাহী নগরীর শিরোইল কলোনি এলাকার সাড়ে ৩ নম্বর রোডে বসবাসকারিদের। ঢিল পড়ার ধারাবাহিকতার ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও এর রহস্য খুজে পাচ্ছেনা স্থানীয়রা।
ঢিলের রহস্য খুজে না পাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে শিশু-কিশোর সহ বিভিন্ন বয়সের মানুষজন। ঢিলগুলো কোথা থেকে আসছে তা জানার চেষ্টা থাকে অনেকের। রাত ৯টা থেকে শুরু হয় ঢিল পড়া এবং ৩টায় ঢিল পড়ার মাত্রা কমে আসে।
এলাকার অলি-গলি ছাড়াও দালান বাড়ির ছাদে টর্চলাইট নিয়ে পাহাড়া দিচ্ছেন স্থানীয় যুবকরা। তারপরও এ রহস্য খুজে না পাওয়ায় হতাশায় এবং আতঙ্কে রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র ফারিক আহমেদ বলেন, রাত হলেই আমাদের বাড়ির ছাঁদে ঢিল পড়ে, আমার খুব ভয় হয়।
২৩ নভেম্বর থেকে আমার পরিক্ষা লেখা পড়ার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দুই বছরের শিশু মাহির তাজওয়ার রাফিও মুখ ফুটে বলেন, ঢিল পড়লে আমার ভয় হয়। ভুক্তভোগী সেরাজুল ইসলাম বলেন, ছাঁদে উঠে প্রতিদিন ৮/১০ টা করে ঢিল নামিয়ে জড়ো করে রাখা একটা রুটিন হয়ে দাড়িয়েছে। ক্রমাগত ঢিল পড়া বন্ধ না হলে অসুস্থ ও বয়সকো মানুষরা হার্ট আ্যাটাক করে মারা যাবে। সাড়ে ৩ নং গলির বাসিন্দা ডলার, আরমান, শামিম, রেশমা, কারিনা ও মুন্নি সহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, এলাকার বখাটেরা মজা করতে গিয়ে আমাদের ঘুম হারাম করে রেখেছে। কতো মানুষের বুকের ব্যাথাকে জাগিয়ে দিচ্ছে-তার খবর কেউ রাখে না।
রাতভর বিষয়টি নিয়ে ভাবনা কাউকে কাউকে প্রতিবাদী করে তুলছে। কিন্তু দিনের ব্যস্ততায় সে প্রতিবাদ হারিয়ে যায়। অন্যদিকে কারা এ জঘণ্য কাজের সাথে জড়িত তা খুজে না পাওয়ায় রহস্যের জন্ম দিয়েছে অনেকের মনে। তাহলে কী অলৌকিক শক্তি দ্বারা এমনটি ঘটানো হচ্ছে? হতেও পারে বলে মন্তব্য করে কামরুল ইসলাম ও ওয়াকিল আহমেদ নামের দুইজন ব্যক্তি। তারা বলেন, ৩০ বছর আগে এমন ঘটনা ঘটেছিল অত্র এলাকায়, একে অপরকে দোষারোপ করার কারণে ব্যাপক গোন্ডগোলের সৃষ্টিও হয়েছিল।
ছাদের ওপর ঢিলের শব্দ পেলেও ছাদে গিয়ে কোন ঢিল খুজে পাওয়া যায়নি। তবে আাসতে আসতে এক সময় ঢিল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুশ্চিন্তা যখন ক্রমাগত আসতেই থাকে এবং দৈনন্দিন জীবনকে কঠিন করে তোলে তখন উদ্বেগ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। মধ্যরাতে হঠাৎ করে বিকট শব্দ হলে মানুষ আতঙ্কিত হবে এটাই স্বাভাবিক।
এতে মানুষ ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে নিজেকে অনিরাপদ মনে করে। মানুষের মনে তখন নানা উদ্বেগ ও আশংকা ভর করে। দু:শ্চিন্তায় অনেকেই সারারাত ঘুমাতে পারে না। এভাবে কয়েকদিন চললে যে কোনো মানুষ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। ঢিল পড়া বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান স্থানীয়রা এবং জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তারা।