নওগাঁর মহাদেবপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর (নৌকা) নির্বাচনী অফিসে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিমের ছেলে সাকলাইন মাহমুদ রকি ও তাদের বহুল আলোচিত রকি বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে।
গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ঝলঝলি এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী অফিসে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার সকালে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থক রুহুল আমিন বাদী হয়ে মহাদেবপুর থানায় এজাহার দায়ের করেন। এতে এমপির ছেলে রকিসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫-৭ জনকে আসামী করা করা হয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী স্থানীয়দের।
আ.লীগ প্রার্থীর সমর্থক রুহুল আমিনের অভিযোগ- এমপির ছেলে সাকলাইন মাহমুদ রকি, ঝলঝলি গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে জাহিদ হাসান (২৮), আবুল কালামের ছেলে ইউনুছ আলী (৪৫), মৃত নৈমুদ্দিনের ছেলে হাসান (৫০), ফাজিলপুর বরেন্দ্র মোড়ের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মিঠু রহমান (৩৬), আন্ধারকোঠা গ্রামের হবিবর রহমানের ছেলে সোহাগ (৩৮), দুলালপাড়া গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে আসাদুজ্জামান রতন (২৮), চানপাড়া জয়পুর এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে হাসান আলী (২৮), উপজেলা সদরের রবিন চন্দ্র দাসের ছেলে রঞ্জন দাস (৪২), স্কুলপাড়ার মৃত রঞ্জুর ছেলে তনু কুমার দেব (২৬), আজিপুরের দুয়েফ উদ্দিন তরফদারের ছেলে রাকিবুল হাসান ও জোয়ানপুর গ্রামের মৃত খলিলের ছেলে হাবিব হোসেন (৩৩) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রুহুল আমিনকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ২০ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ঝলঝলি মোড়ে রাস্তার উত্তর পাশে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিস ঘরে বাঁশের লাঠি, লোহার রড ও পেট্রালসহ এসে ঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনে অফিস ঘর পুড়ে যায়। অফিসের পাশে স্তুপ করে রাখা ১৬ বিঘা জমির খড়ও পুড়ে যায়। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া এলাকায় কোথাও কোনো নৌকার নির্বাচনী অফিস করা যাবেনা বলে তারা যাবার সময় হুমকি দিয়ে যায়। তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
এদিকে, গত ১৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের খোর্দকালনা গ্রামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে রকি বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। এতে মাসুদ বিল্লাহ, এমপি সেলিমের দুই ছেলে রকি ও রাকিব আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মাসুদুর রহমান বাদী এমপির ছেলে রকিসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০-২১ জনকে আসামী দিয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এনিয়ে থানায় আরও একটি মামলা রেকর্ড হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। অপরদিকে, বহুল আলোচিত রকি বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন অনেকেই। সাংবাদিক এমদাদুল হক দুলুর ডান হাত ভেঙ্গে দেওয়া, বালু ব্যবসায়ী কামাল হোসেন, যুবলীগ নেতা মাসুদুর রহমান, ওলামালীগ নেতা আশেক এলাহীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও উত্তর ঈশ্বরপুর গ্রামে মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়িতে প্রকাশ্য দিবালোকে আইনের লোক পরিচয়ে হামলা, মারপিট করে লুটপাট, মহাদেবপুর-বদলগাছী ও জেলা সদরে টেন্ডারবাজি, আত্রাই নদীর বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, টর্চার সেল পরিচালনা, জমি দখলসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়টি এখন স্থানীয়দের কাছে ওপেন সিক্রেট।
বাহিনীটির কুকীর্তি নিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে নানা চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বছরের পর বছর চলা এই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের লাগাম টেনে ধরতে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন’র (র্যাব) মহাপরিচালকসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
মুঠোফোনে অভিযুক্ত সাকলাইন মাহমুদ রকি সাংবাদিকদের বলেন, এই আগুন দেওয়ার ঘটনা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা একটা প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি। এছাড়া আমার নেতাকর্মীদের বলা আছে তারা যেন কোনো ধরনের সহিংসতায় জড়িত না হয়। আমরা চাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তাই আগুন দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আলোচিত রকি বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম বলেন, এসব সঠিক নয়। রাজনৈতিকভাবে আমাকে ছোট করার জন্যই আজকের এই প্রয়াস বলে দাবি করেন তিনি।